৭ বছর পর ‘সন্তানের পিতৃত্ব’ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ। আদালতের কাছে ডিএনএ পরীক্ষার আর্জি জানালেন জেলবন্দি ‘ধর্ষক বাবা’।
উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ থানার অন্তর্গত বাসিন্দা অনিন্দিতাকে (কাল্পনিক নাম) গৃহ শিক্ষক হিসাবে পড়াতেন চৈতন্য বর্মন। চৈতন্যর সঙ্গে অনিন্দিতার ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৪ সালে অনিন্দিতার পরিবার হেমতাবাদ থানায় অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগ, অনিন্দিতার যখন ১৭ বছর বয়স, তখন গৃহশিক্ষক চৈতন্য তাঁকে ১১ থেকে ১২ বার ধর্ষণ করে এবং তাতে অনিন্দিতা গর্ভবতী হয়ে পড়ে। নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে চৈতন্যর বিরুদ্ধে পস্কো আইনে মামলা শুরু হয়। ২০১৫ সালে অনিন্দিতা এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। রায়গঞ্জের স্পেশাল কোর্টে চলে বিচার প্রক্রিয়া। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন অনিন্দিতা স্বীকার করেন যে তাঁর সঙ্গে চৈতন্যের ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ২০১৭ সালের ২ অগাস্ট রায়গঞ্জ স্পেশাল কোর্ট চৈতন্যকে ৭ বছরের জেলের নির্দেশ দেয়। পরবর্তীকালে অনিন্দিতার অন্যত্র বিবাহ হয়। সন্তানটি বর্তমানে অনিন্দিতার কাছেই রয়েছে। এদিকে আদালতের রায়ে জেল হয় চৈতন্যর।
নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানায় চৈতন্য। বৃহস্পতিবার শুনানি চলাকালীন চৈতন্যর আইনজীবী জিসান ইকবাল হোসেন আদালতে বলেন, ”তদন্ত চলাকালীন তদন্তকারী অফিসার অনিন্দিতার জন্ম সংক্রান্ত শংসাপত্র নিয়ে কোনও তদন্ত করেননি। এটা নিম্ন আদালতে সাক্ষ্য দানের সময় স্বীকার করেছেন তদন্তকারী অফিসার। তাই ঘটনার সময় অনিন্দিতা নাবালিকা ছিলেন কিনা সেটা স্পষ্ট করে বলা যায় না।” তিনি আরও বলেন, ” অনিন্দিতা যে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তার কোনও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা হয়নি নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়ার সময়। এমনকি তদন্তকারী অফিসার ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা বা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য কোন রকম আবেদন জানায়নি। ফলে ওই সন্তান যে চৈতন্যর, তা কি করে বলা যায়।”
এরপরই বিচারপতি বিবেক চৌধুরি চৈতন্যের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, ”আপনারা কী ডিএনএ টেস্টে রাজি আছেন? কারণ এক্ষেত্রে অনিন্দিতা ও তাঁর পুত্র সন্তানের এবং আবেদনকারী ডিএনএ টেস্টের প্রয়োজন আছে।” এতে চৈতন্যের আইনজীবী জিসান ইকবাল হোসেন সম্মতি দেন। তৎক্ষণাৎ বিচারপতি আদালতে উপস্থিত সরকারি আইনজীবী অনিকেত মিত্রকে নির্দেশ দেন, আগামী ২৯ জুলাই ২০২১ হেমতাবাদ থানার অফিসার ইনচার্জকে অনিন্দিতা ও তাঁর পুত্র সন্তানকে নিয়ে আদালতে হাজির করতে হবে। ডিএনএ পরীক্ষায় অনিন্দিতা রাজি আছেন কিনা সেই বিষয়ে আদালত তাঁর সম্মতি নেবে। অনিন্দিতার বয়স এখন প্রায় ২৪। তার সন্তানের বয়স প্রায় ৬ বছর। আইনজীবী মহলের প্রশ্ন, তদন্তকারী অফিসার যদি নিম্ন আদালতে ডিএনএ টেস্টের আবেদন জানাতেন, তাহলে ৭ বছর বাদে পিতৃত্ব প্রমাণের জন্য জেলে বসে আবেদন জানাতে হত না চৈতন্যকে। আর ৭ বছর বাদে শিশুটিকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হতো না তার প্রকৃত বাবা কে?