কলকাতা: ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হাই কোর্টের । পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর মামলার ক্ষেত্রে তদন্তের জন্য সিট গঠনের কথা বলা হয়েছে ৷ বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্ট ভোট পরবর্তী হিংসার ক্ষেত্রে এই নির্দেশ দিল হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ ।
বেঞ্চ জানিয়েছে, ভোট পরবর্তী অস্বাভাবিক খুন ও ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত করবে সিবিআই । অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগের তদন্ত করবে সিট, নির্দেশ হাই কোর্টের । একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, তিন আইপিএস আধিকারিক সুমনবালা সাহু, সৌমেন মিত্র এবং রণবীর কুমারের নেতৃত্বে সিট গঠিত হবে । সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নজরদারিতে কাজ করবে সিট। বাড়িঘর ভাঙচুর, আগুন লাগানো, মারধর করা, ঘরছাড়া করার মতো অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার তদন্ত করবে সিট । ছয় সপ্তাহের মধ্যে সিট এবং সিবিআই-কে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ বৃহস্পতিবার এই রায়ে জানানো হয়েছে, হিংসার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের অতি দ্রুত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ৷
পাশাপাশি জানানো হয়েছে, ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনার মামলা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নতুন বেঞ্চ গঠনের কথা বলল হাই কোর্ট ৷ নতুন ডিভিশন বেঞ্চে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে অন্যদিকে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং পার্থ ভৌমিক এই মামলার সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়েছিলেন ৷ হাইকোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দেয় ৷
আরও পড়ুন- হাইকোর্টের রায়ে অখুশি রাজ্য, সুপ্রিমকোর্টে যাওয়ার ভাবনা
হাই কোর্টের নির্দেশে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে রিপোর্ট তৈরি করে তা আদালতে জমা দিয়েছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এই কাজ করতে গিয়ে কমিশনের সদস্যদের উপর হামলারও অভিযোগ উঠেছিল । সেই রিপোর্টকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ করে তৃণমূল ৷ আজ এ প্রসঙ্গে হাই কোর্টের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে যে পক্ষপতিত্বের অভিযোগ করা হয়েছিল, তা সঠিক নয় ৷
গত ৩ অগস্ট এই মামলার শুনানি শেষ হয়েছিল। হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চে। এই মামলায় প্রথম থেকেই পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি । ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে একাধিক পিটিশন জমা পড়ে হাই কোর্টে । এমনকি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপর হামলায় ঘটনা রোধে আইপিএস রশিদ মুনির খানের ভূমিকা এবং পদক্ষেপ নিয়ে তদন্তের কথা বলেছে হাই কোর্ট ৷
HC order নিয়ে প্রকাশ্য বিরোধিতা করা যায় না। ওঁরা নির্দেশ দিয়েছেন। সরকার এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই নির্দেশ খতিয়ে দেখে প্রতিক্রিয়া জানাবেন। সম্ভাব্য আইনি দিকগুলি বিবেচিত হবে। আমরা মনে করি NHRCর রিপোর্ট সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে HC নিয়ে এখন কোনো মন্তব্য করছি না।
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) August 19, 2021
বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পর তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তারা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাবে ৷ তদন্তের ক্ষেত্রে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যের শাসক দল ৷ দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ টুইট করেন, ‘হাই কোর্টের নির্দেশ নিয়ে প্রকাশ্য বিরোধিতা করা যায় না। ওঁরা নির্দেশ দিয়েছেন। সরকার এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই নির্দেশ খতিয়ে দেখে প্রতিক্রিয়া জানাবেন। সম্ভাব্য আইনি দিকগুলি বিবেচিত হবে। তবে হাই কোর্টের মন্তব্য নিয়ে এখন কোনও মন্তব্য করছি না।’ অন্যদিকে, এই রায়ের পরই রাজ্য সরকারের দিকে আঙুল তুলেছে বিজেপি ৷
আরও পড়ুন- ভোটের পর তালিবানি কায়দায় অত্যাচার করেছে তৃণমূল, দাবি বিজেপির
এই বিষয় সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্ত্তী জানিয়েছেন, ‘আদালতের রায় কে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা কীরকম রয়েছে সেটা খুব ভালো বোঝা যাচ্ছে। রাজ্য সরকারের ডিজি আদালতে রিপোর্ট দিয়েছই। সেখানে হিংসার উল্লেখ রয়েছে। তবে, মানবাধিকার কমিশনকে ব্যবহার করেছে বিজেপি। তারা নিজেদের মত করে ব্যবহার করা হয়েছে। যেখানে যেখানে বিজেপি’র কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছে সেখানে মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিদল গিয়েছে। বাম-কংগ্রেসের কর্মীরা অনেক জায়গায় আক্রান্ত ছিল সেখানে কিন্তু মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরা যায়নি। এরপরেও আদালতের পর্যবেক্ষণকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।’ এছাড়াও তিনি জানিয়েছেন, ‘ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে মামলা অন্য রাজ্যে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। আদালত তা মঞ্জুর করেনি আমরা সেই বিষয়টিটাও স্বাগত জানাচ্ছি।’