নয়াদিল্লি: ‘হিন্দুস্তান মে রেহনা হোগা, জয় শ্রী রাম কেহনা হোগা।’ দিল্লির যন্তর মন্তরে একটি মিছিল থেকে রবিবার এই স্লোগান উঠেছিল। অনুষ্ঠানের আয়োজক সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী তথা বিজেপির প্রাক্তন মুখপাত্র অশ্বিনী উপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘ভারত জড়ো আন্দোলন’ সম্পর্কিত অনুষ্ঠানে ‘সাম্প্রদায়িক’ স্লোগান ঘিরে সরগরম জাতীয় রাজনীতি। ভাইরাল হয়েছে একাধিক ভিডিও। পুলিশকে কড়া পদক্ষেপের আর্জিও জানিয়েছেন বিশিষ্টরা। দিল্লি পুলিশ ব্যবস্থাও নিয়েছে!
আরও পড়ুন: বিজেপির ‘ভারত জড়ো আন্দোলন’ অনুষ্ঠানে উঠল মুসলিম বিরোধী স্লোগান
কী সেই ব্যবস্থা? বিনা অনুমতিতে মিছিল ও বিদ্বেষমূলক স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে দিল্লি পুলিশ। কাদের বিরুদ্ধে মামলা? অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা। ওই অনুষ্ঠানের ভাইরাল হওয়া ভিডিওয় শ-খানেক লোককে স্লোগান দিয়ে দেখা গিয়েছে। নেতৃত্বে ছিলেন গেরুয়া পোশাক পরা এক ব্যক্তি। তাঁর আশেপাশে আরও ১০-১৫ জনকে স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছে। ভিডিওয় যেখানে সকলের মুখ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, তা সত্ত্বেও কী কারণে দিল্লি পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
সাংবাদিক বরখা দত্ত টুইটারে প্রশ্ন তোলেন, অজ্ঞাতপরিচয় কেন? ফুটেজে তো সবাইকে দেখা যাচ্ছে৷ পাল্টা টুইট করে ডেরেক ও’ব্রায়েন লেখেন, কারণ অমিত শাহ চান না৷ দিল্লি থেকে ত্রিপুরা- একই ফর্মুলা প্রয়োগ করছে বিজেপি। স্বরা ভাস্বরও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন ট্যুইটারে। বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায়ের বক্তব্য, এই ভিডিও সম্পর্কে কিছুই জানেন না তিনি। তাঁর দাবি, হয়তো ৫-৬ জন স্লোগান দিতে থাকতে পারেন। কিন্তু তা একেবারেই উচিত হয়নি।
আরও পড়ুন: কিছু অসুবিধা হলে আমাকে জানাবেন, ভুল বুঝবেন না, আদিবাসী দিবসে ঝাড়গ্রামে বললেন মমতা
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওয় একদল ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘হিন্দুস্তান মে রেহনা হোগা, জয় শ্রী রাম কেহনা হোগা’ (ভারতে থাকতে গেলে জয় শ্রী রাম বলতে হবে)।’ কয়েক জন ব্যক্তিকে মিছিল থেকে ‘রাম রাম’ স্লোগান তুলতে দেখা গিয়েছে।
https://twitter.com/shivangi441/status/1424365069219995650?s=20
প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে মাত্র ২০ মিনিট দূরত্বে ‘মুসলিম-বিরোধী’ স্লোগান উঠেছে। তা সত্ত্বেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বিজেপির নেতা অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা হওয়ার কারণেই কি ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছে দিল্লি পুলিশ, প্রশ্ন বিরোধীদের। আপাতত মামলাটি দিল্লি ক্রাইম ব্রাঞ্চের হাতে তুলে দিয়েছে। সোমবার লোকসভার অধিবেশনে মিমের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসির অভিযোগ, মোদি সরকার এদের পাশেই রয়েছে বলেই তাঁরা এই কাজ করার সাহস পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: করোনা পরিস্থিতিতে গরিবদের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী
Sickening beyond words! How and why was permission granted for this obviously criminal, unconstitutional, genocide-baiting protest?!? https://t.co/rZI8VhZdDV
— Swara Bhasker (@ReallySwara) August 8, 2021
রবিবার দিল্লি পুলিশের এক অফিসার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, উদ্যোক্তারা অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি চেয়েছিলেন৷ কিন্তু কোভিড গাইডলাইনের জন্য জমায়েতের অনুমতি প্রথমে দেওয়া হয়নি৷ পরে অশ্বিনী উপাধ্যায় জানান, তিনি ছোটো জায়গায় অনুষ্ঠানটি করতে চান৷ ৫০ জন লোক সেখানে হাজির থাকবেন৷ সেই মত পুলিশি ব্যবস্থা করা হয়৷ কিন্তু অনুষ্ঠান শুরুর পর হঠাৎ দলে দলে লোক আসতে শুরু করে৷ তাতে বড় জমায়েত হয়ে যায়৷ প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবেই প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন তাঁরা৷ কিন্তু হঠাৎ স্লোগান দিতে শুরু করেন৷ তার পর চলে যান সকলে৷
আরও পড়ুন: অভিষেককে মারতে বিমানেও গুন্ডা তুলে দিচ্ছে বিজেপি, বিস্ফোরক মমতা
উদ্যোক্তাদের দাবি ছিল, দেশজুড়ে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করতে হবে৷ তুলে দিতে হবে ঔপনিবেশিক আইন৷ এরপরই ওঠে স্লোগান৷ ভাইরাল হওয়া একাধিক ভিডিও-তে মুসলিম বিরোধী নানা স্লোগান শোনা গিয়েছে৷ ‘ন্যাশনাল দস্তক’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলের রিপোর্টারকে জয় শ্রীরাম বলতে বাধ্য করে উত্তেজিত জনতা৷ তিনি বলতে না চাওয়ায় জনতার ভিড় থেকে শোনা যায় ‘ও নিশ্চয় জেহাদি’৷ ডিসিপি দীপক যাদব জানিয়েছেন, সব ভিডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করা হবে৷ তার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ৷