ওয়েবডেস্ক: হত দরিদ্র পরিবার। পর্যটনের মরশুমে পর্যটকদের আশায় দিন গোনা। ভূস্বর্গ কাশ্মীরে (Kashmir) তার কাজ ছিল পর্যটকদের আনন্দ দেওয়া। ঘোড়ায় চড়িয়ে পর্যটকদের বৈসরণে নিয়ে আসাই ছিল তাঁর কাজ।
সৈয়দ আদিল হুসেন শাহ পেশায় আর পাঁচজনের মতোই একজন টাট্টু চালক। পহেলগাওঁয়ের (Pahalgam) বৈসারণে (Baisaran) সেদিনও সৈয়দের কাজ ছিল সেটাই। চারদিকে আনন্দ, মজা, ফূর্তিতে তখন বৈসরণে এদিক ওদিক ছড়িয়ে আছে পর্যটকের দল। কোথাও কেউ ভেলপুরী খাচ্ছে, আবার কোথাও কেউ সেলফি তুলতে ব্যস্ত। আবার কোথাও কেউ ক্যামেরাবন্দি করছেন এই ভূস্বর্গের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। কিন্তু এক নিমেষেই পালটে গেল গোটা চিত্র। হঠাৎ শব্দ। প্রথমে পর্যটকরা কেউ আমল দেননি, ভেবেছিলেন বাজির শব্দ। কিন্তু মুহূর্তেই ঘটে গেল হাড়হিম করা ঘটনা। গুলি ছুটি এল পর্যটকদের নিশানা করে।
আরও পড়ুন: তিন জঙ্গির স্কেচ প্রকাশ করল গোয়েন্দা সংস্থা
কিন্তু সেই সময় সেখানেই ছিলেন সৈয়দ আদিল হুসেন শাহ (Syed Adil Hussain Shah)। ভয় না পেয়ে জঙ্গিদের মুখোমুখি দাঁড়ায় সৈয়দ। জঙ্গিদের (Terrorist’s Rifle) হাত থেকে রাইফেল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে সে। সৈয়দ মুসলিম বলে রেহাই পাননি, জঙ্গিদের গুলির নিশানায় ঝাঁঝরা হয়ে যায় কাশ্মীরি যুবকের শরীর।
বৈসরণের কাছে একটি গাড়ি পার্কিংয়ের এলাকা। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে অথবা টাট্টু ঘোড়ায় চেপে মূল উপত্যকায় যেত হত। সেদিন গাড়ি পার্কিংয়ে জায়গা থেকে পর্যটকদের নিয়ে আসছিলেন সৈয়দ। হঠাৎ গুলিবৃষ্টি। সবাই যে যার মতো প্রাণ বাঁচাতে ছুটে চলেছেন। ভয় না পেয়ে রুখে দাঁড়ান সৈয়দ, কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন বন্দুক। আচমকা তার দিকে ধেয়ে আসে বুলেট। শেষ কাশ্মীরি যুবক সৈয়দ। ছেলের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ তার পরিবার। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন সৈয়দ। তারা জানেন না, কিভাবে বাকি জীবনটা চলবে তাদের।
#WATCH | J&K | Family member of Anantnag resident Syed Hussain Shah, who lost his life in the #PahalgamTerroristAttack, says, “He (Syed Hussain Shah) had gone to Pahalgam to work… We got information about the attack at 3 pm. When we called (Syed Hussain Shah), the phone was not… pic.twitter.com/8IlX5NKB8j
— ANI (@ANI) April 23, 2025
সৈয়দের বাবা জানিয়েছেন, প্রতিদিনের মতো কাজে গিয়েছিল সৈয়দ। তিনটে নাগাদ তারা জানতে পারেন বৈসরণে গুলি চলেছে। তখনই ছেলেকে ফোন করেন তারা। কিন্তু সৈয়দের ফোন পাওয়া যায়নি, সুইচ অফ বলছিল। এরপর বিকেল ৪টে ৪০ মিনিট নাগাদ সৈয়দের ফোন চালু হলেও কোনও জবাব আসেনি। থানায় গিয়েই ছেলের মৃত্যুর খবর পান তারা। দোষীদের কঠিন শাস্তির দাবি তুলেছেন সৈয়দের পরিবার।
পহেলগাঁওয়ের বৈসরণ অপূর্ব সুন্দর। যা মিনি , ‘মিনি সুইৎজারল্যান্ড’ নামেই পরিচিত। সেই সৌন্দর্য্য, রক্তাক্ত হল। পুলওয়ামার পর এত বড় জঙ্গি হানার শিকার হল ভূস্বর্গ।
বৈসরণের পাশের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে জঙ্গিরা নির্বিচারে গুলির শিকার হল নিরীহ পর্যটকেরা। সকলের মুখ ঢাকা, হত্যার আগে নাম পরিচয় জানতে চাওয়া হয় তাদের কাছে। এই ভয়াবহ হামলায় প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে শিউরে উঠেছে গোটা দেশ। ঘটনায় দোষীদের রেয়াত করা হবে না বলে জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সহ সহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ভারতে পাশের থাকার বার্তা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন সহ ইজরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
দেখুন আরও খবর-