কলকাতা: বাংলা চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তী মৃণাল সেনের (Mrinal Sen) আজ জন্ম শতবর্ষ। মৃণাল সেন যৌবনের শুরুতে একটি রাজনৈতিক কাজ হিসেবেই চলচ্চিত্রকে দেখেছিলেন, জীবনের শেষ ছবি অবধি তাই দেখে গিয়েছেন। এই রাজনীতি শুধু রাজনৈতিক বাস্তবের রেপ্লিকা হয়ে ছিল না, সিনেমাটিক ভাষাবদলও ছিল একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তাঁর ছবিতে বার বার নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংগ্রাম ফুটে উঠেছে। মানুষের জীবনের নানামুখী সংকট তিনি সিনেমায় (Movie) দেখাতেন। মৃণাল সেনের হাত ধরে বাংলা চলচিত্র জগতে এক নতুন ধারার প্রবর্তন শুরু হয়। ২৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ৪টি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন মৃণাল সেন।
১৯২৩ সালের ১৪ মে বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্ম মৃণাল সেনের। ফরিদপুরে থাকাকালীন তিনি সেখানেই উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষা সম্পন্ন করেন। হাইস্কুলের পড়াশোনা শেষ করে তিনি কলকাতায় চলে যান।পদার্থবিদ্যা নিয়ে স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়াশোনা করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
আরও পড়ুন : Sukanta Mazumdar | কর্ণাটকের ফলের প্রভাব পঞ্চায়েতে পড়বে না বললেন সুকান্ত মজুমদার
চল্লিশের দশকে তিনি সমাজবাদী সংস্থা ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত হন এবং এর মাধ্যমে তিনি সমমনা মানুষদের কাছাকাছি আসেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে তিনি সাংবাদিক, ওষুধ বিপণনকারী এবং চলচ্চিত্রে শব্দকুশলী হিসেবেও কাজ করেন।আজীবন বামপন্থায় বিশ্বাসী মৃণাল সেন কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার সাংস্কৃতিক কাজকর্মের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
১৯৫৫ সালে ‘রাত ভোর’ ছবির মাধ্যমে পরিচালনা শুরু করেন মৃণাল সেন। তার পরের ছবি ছিল ‘নীল আকাশের নীচে’। ‘বাইশে শ্রাবণ’ এবং ‘ভুবন সোম’ ছবির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিচিতি পান তিনি।
১৯৮০ সালে আসে চলচ্চিত্র ‘আকালের সন্ধানে’। চলচ্চিত্র কলাকুশলীদলের একটি গ্রামে গিয়ে ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের দুর্ভিক্ষের উপর একটি চলচ্চিত্র তৈরির কাহিনি ছুঁয়ে গিয়েছিল পুরো চলচ্চিত্র বিশ্ব। কিভাবে ১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষের কাল্পনিক কাহিনি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় সেই গ্রামের সাধারণ মানুষদের সাথে সেটাই ছিল এই চলচ্চিত্রের সারমর্ম। সিনেমাটি ১৯৮১ সালের বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরষ্কার হিসাবে রুপোর ভালুক জয় করে। মৃণাল সেনের পরবর্তী সময়ের ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘খন্ডহর (১৯৮৪) ‘মহাপৃথিবী (১৯৯২)’ এবং ‘অন্তরীন (১৯৯৪)’। তার নির্মাণে শেষ সিনেমা ‘আমার ভুবন’ মুক্তি পায় ২০০২ সালে।
১৯৯৩ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে সম্মানসূচক ডিলিট পদকে ভূষিত করে। ১৯৯৬ ও ১৯৯৯ সালে যথাক্রমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে একই সম্মান জানান। পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকেসহ অনেক পুরষ্কার পেয়েছেন মৃণাল সেন।