পাহাড় সমতলের মেলবন্ধনের সঙ্গে সবুজে ঘেরা চা বাগান আর ঘন বনভূমির প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করতে চাইলে, অবশ্যই চলে আসতে হবে মেটেলিতে। জলপাইগুড়ি জেলার অন্তর্গত নাগরাকাটা সিডি ব্লকের এই মেটেলি গ্রামটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। ঘন সবুজ চা বাগান দিয়ে ঘেরা এই গ্রামটির লোক সংখ্যা অনেকটাই কম। অধিকাংশ মানুষের রুটি রোজগারের মূল উৎস হল এই চা বাগান। এখানেই আছে ডুয়ার্সের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চা বাগান গুলি।
কলকাতা থেকে ট্রেনে মেটেলিতে আসতে গেলে মূলত এনজেপি বা নিউ জলপাইগুড়ি রেল স্টেশন হয়ে পৌঁছতে হবে। এনজেপি থেকে সেবক হয়ে চালসা পৌঁছাতে মাত্র আড়াই ঘন্টা সময় লাগে। আবার এনজেপি থেকে দক্ষিণ ফুলবাড়ি হয়েও চালসা পৌঁছানো যায়। সে ক্ষেত্রে সময় লাগে প্রায় ২ ঘন্টা। অন্যদিকে এনজেপি থেকে গজলডোবা, ওদলাবাড়ি হয়ে চালসা পৌঁছনো যায়। সেক্ষেত্রে সময় লাগে মাত্র দেড় ঘন্টা। যারা কলকাতা থেকে সরাসরি ট্রেন পথে চালসার কাছাকাছি পৌঁছাতে চান, তারা কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ধরে সরাসরি নিউ মাল জংশনে এসে নামতে পারেন। নিউ মাল জংশন থেকে চালসা হয়ে মেটেলির দূরত্ব মাত্র ১৫ কিলোমিটার। চালসা থেকে মেটেলি বাজার পৌঁছতে লাগবে মাত্র ২০ মিনিট। কলকাতা থেকে যারা সরাসরি বিমানে আসতে চান, তারা বাগডোগরা থেকে সেবক হয়ে সরাসরি চালসা হয়ে মেটেলি বাজার পৌঁছতে পারেন।
মেটেলির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য যে সব মানুষজন এখানে ২ থেকে ৩ দিন অথবা তার বেশি থাকতে চান, তারা মেটেলির অনতিদূরে সামসিংয়ের একাধিক প্রাইভেট হোটেলে রাত্রি যাপন করতে পারেন। যত দিন যাচ্ছে, মেটেলির জনপ্রিয়তা ততই বাড়ছে। প্রাকৃতিক শোভায় আকৃষ্ট হয়ে বর্তমানে বহু পর্যটক ভিড় জমাতে শুরু করেছেন মেটেলিতে। এ কথা মাথায় রেখেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মেটেলিতে রাত্রিবাসের জন্য হোটেল ও রিসর্ট গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিকাঠামো গড়ে তোলা এবং পর্যটকদের রাত্রিবাসের ব্যবস্থা করার জন্য হোটেল, রিসর্ট, রেস্তোরাঁ সহ পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন রাজ্যের শাসক দলের এ অঞ্চলের নেতা জোসেফ মুণ্ডা।
এই অঞ্চলের বিখ্যাত চা বাগান গুলি মূলত পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু। নাগাইসুরি টি গার্ডেন, মাতেলি চা বাগান, মেটেলি টি গ্যারেজ, মেটেলি টি এস্টেট ফ্যাক্টরি, ইনডং টি গার্ডেন, মিথিয়ালী টি গার্ডেন, জুরানতি টি গার্ডেন, ইঙ্গ টি গার্ডেন, চালাউনি টি গার্ডেন, ক্লিফোর্ড চা বাগান সহ একাধিক চা বাগান রয়েছে, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। অন্যান্য দর্শনীয় বিষয় গুলোর মধ্যে অন্যতম হল মেটেলি শিব মন্দির, মেটেলি ছট পুজো ঘাট, রক চার্চ, চালাউনি গুম্ফা, মেটেলি মসজিদ, হাটখোলা উইক্লি মার্কেট, ইনডং প্লে গ্রাউন্ড, গরুবাথান রিজার্ভ ফরেস্ট, বুড়িরহাট সাধু আশ্রম, নেওরা হাইড্রাল প্রজেক্ট সহ আরো বেশ কিছু দর্শনীয় বিষয় রয়েছে এখানে।
এই অঞ্চলটিতে আদিবাসী ও নেপালি মানুষজনের সংখ্যার আধিক্য থাকার কারণে আদিবাসী ও নেপালি সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিত হওয়ার বা তার স্বাদ আস্বাদন করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এখানে। সেই সঙ্গে আদিবাসী ও নেপালি সম্প্রদায় মানুষজনের নাচ গান ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কলা উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে এখানে। মূলত চালাউনি চা বাগান ও সামসিং এলাকায় এদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ মিলবে।
চতুর্দিক সবুজ পাহাড় দিয়ে ঘেরা মেটেলির ঘন সবুজ বনভূমি যেকোনো পর্যটন প্রিয় মানুষকে আকৃষ্ট করবে। কলকাতা থেকে অনতিদূরে পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এই মেটেলিতে নিস্তব্ধতার মধ্যে থেকে রকমারি পাখির কিচিরমিচির আর তার সঙ্গে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাধুর্যতায় রয়েছে রোমান্টিকতার ছোঁয়া। পরিবারের সকলকে নিয়ে অথবা প্রিয়তম মনের মানুষটির সঙ্গে কটা দিন জনকোলাহল এড়িয়ে, একঘেয়ে রোজকার জীবন থেকে কয়েকটা দিন প্রকৃতির সঙ্গে প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইলে, মেটেলির দিনরাত্রির মায়াবী মনমুগ্ধকর পরিবেশের হাতছানি উপেক্ষা করা অসম্ভব।