বেজায় বিরক্ত WHO ( World Health organization)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিরক্তির কারণ, ইউরো কাপ ফুটবলের ফাইনাল। সেদিন
ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইউরোর ফাইনাল দেখতে রাস্তায় নেমেছিল হাজার হাজার মানুষ। করোনার এমন কঠিন সময় গোটা ব্যাপারটিই উদ্বেগ তৈরি করেছে নতুন করে।
দীর্ঘ ৫৫ বছর পর ফিফার বড় কোনও টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলতে নেমেছিল ইংল্যান্ড। স্বাভাবিকভাবে ব্রিটিশদের কাছে ইউরোর ফাইনালটি পরিণত হয়েছিল এক উৎসবে। ইতালির কাছে টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ায় সে উৎসবে স্বাদ মেটেনি। তবে তা না মিটলেও সব প্রস্তুতি তো নিয়েই রেখেছিলেন দর্শকেরা।
আরও পড়ুন – Breaking: দর্শক ছাড়াই টোকিও অলিম্পিক
খেলা দেখতে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে হাজির ছিলেন ৯০ হাজারের বেশি দর্শক। স্টেডিয়ামের বাইরেও ছিল জনস্রোত। সামাজিক দূরত্ব মানার তো কোনো সুযোগই ছিল না-কেউ তোয়াক্কাও করেনি। কারও মুখে ছিল না মাস্কও। করোনার এই পরিস্থতিতে এ নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় এক অজানা ভীতি।
পুরো ইউরো কাপই অনুষ্ঠিত হয়েছে গ্যালারিতে দর্শকদের নিয়ে। ১১টি ভেন্যুতে আয়োজিত হয়েছে এবারের ইউরো। শুরুর দিকে দর্শক প্রবেশ বিধি নিষেধে নিয়ন্ত্রণ থাকলেও যত দিন গড়িয়েছে, দর্শকদের উপস্থিতি বাড়িয়ে দিয়েছিল আয়োজক সংস্থা। ইউরোপের দেশগুলোতে টিকাকরণের কারণে করোনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করা হয়েছে।
গোটা বিশ্ব একই সময় দেখল, লাতিন আমেরিকার বিশ্বকাপ অর্থাৎ কোপা আমেরিকা হচ্ছে দর্শক ছাড়া। শুধু ফাইনালে হাজার ৪৫০০ দর্শক মাঠে ঢোকার অনুমতি পায়। কিন্তু ওয়েম্বলিতে ইংল্যান্ডের প্রতিটি ম্যাচেই দর্শক উপচে পড়েছে। সেমিফাইনালে ৬০ হাজার দর্শক খেলা দেখেছেন। ফাইনালে তো সেটি চলে গিয়েছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরেই।
আরও পড়ুন – করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা কমছে মোদির
ইউরো কাপের মতো টুর্নামেন্টের ফাইনালে দর্শকঠাসা স্টেডিয়াম হবে এটাই খুব স্বাভাবিক। কিন্তু সময়টা মোটেই আর স্বাভাবিক নয়। ইংল্যান্ডে করোনা হয়তো নিয়ন্ত্রণে আছে, কিন্তু আরও একটা ঢেউ আসতে কতক্ষণ! এসব ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই স্বাস্থ্য সংস্থাটি এখন কেন বলছে? টুর্নামেন্ট শুরু থেকেই হুঁশিয়ার করা উচিৎ ছিল।
এরই মধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন করোনা স্বাস্থ্যবিধি শিথিলের কথা । তিনি নির্দিষ্ট করেই বলেছিলেন, ১৯ জুলাই ফ্রিডম ডে থেকে আম জনতাকে আর মাস্ক পরতে হবে না। সামাজিক দূরত্বও মানতে হবে না। কিন্তু বিধি বাম। এরই মধ্যে ব্রিটেনে করোনার প্রকোপ বেড়েছে। হদিশ পাওয়া গেছে ডেলটা ভেরিয়েন্টের অস্তিত্বও। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার সময়ই অবশ্য সেটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন মহামারী বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টেকনিক্যাল প্রধান মারিয়া ফন কার্কহোভ মনে করেন, ওয়েম্বলিতে ফাইনালে যা দেখা গেছে, সেটি রীতিমতো ‘বিধ্বংসী’ একটা ব্যাপার। হাজার হাজার দর্শক ফাইনাল উপলক্ষে স্টেডিয়ামে ভিড় জমিয়েছেন। তাঁরা রীতিমতো উৎসব মেতেছিলেন। সেই ভিড় ছড়িয়ে পড়েছে রেলস্টেশন, বাস স্টপেজ, রেস্তোরাঁ, পানশালা—সর্বত্র। কোথায় নয়!
কার্কহোভ টুইট করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এবং বলেছেন, ‘চোখের সামনে যদি কাউকে সংক্রমিত হতে দেখেন, তাহলে কারোরই মন ভালো থাকার কথা নয়। বুঝতে হবে, করোনা ফাইনালের রাতে বিশ্রাম নেয়নি। সে এই বিশাল জনসমাগমে মাস্ক ছাড়া ব্যক্তিদের মধ্যে ডেলটা ভেরিয়েন্ট ছড়াবে মহা আনন্দে। ভয়াবহ একটা অবস্থার আশঙ্কায় এখন দিন কাটাতে হবে।’
টিকাকরণের মধ্যেই কিন্তু সারা পৃথিবীতে করোনার দাপট কমেনি। গত সপ্তাহে নতুন করে ২৬ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। হিসেব বলছে, এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মানুষ ইউরোপের। ইউরো কাপ ফুটবলের কারণেই নাকি করোনা সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এতদিন তাহলে কারা নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছিল!