Placeholder canvas
কলকাতা রবিবার, ০৪ মে ২০২৫ |
K:T:V Clock
চতুর্থ স্তম্ভ: মহার্ঘ ভাতা, কতটা মহার্ঘ?
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By:  • | Edited By:
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২৮ মে, ২০২২, ১০:০৪:৩৪ পিএম
  • / ৫৬৫ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • • | Edited By:

দেশ স্বাধীন হল ৪৭ এ৷ আমাদের সরকার, আমাদের রাষ্ট্র, আমাদের পুলিশ, আমাদের রেল, আমাদের ডাক তার, আমাদের স্কুল কলেজ, সেখানে যারা কাজ করে তারা রাজকর্মচারি, সরকারি চাকুরে। ইংরেজদের শাসনে দেশ চলত এই সরকারি চাকুরে বা রাজ কর্মচারিদের দিয়েই৷ তাদের কাজ ছিল বিদেশি শাসনকে, তাদের আইনকে, তাদের লুঠতরাজকে বজায় রাখা, সরকার বাহাদুর, বলা ভালো ইংরেজ সরকার বাহাদুর এই রাজকর্মচারিদের দেখভাল করত৷ একজন আম জনতা মেহনতের মজদুরি ১ টাকা হলে, এই রাজ কর্মচারিরা পেতেন তার ৫০/৬০/১০০ গুণ বেশি মাইনে৷ কারণ ইংরেজরা জানতো আম আদমি আর সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে ফারাক রাখাটা জরুরি৷ ১০০ কোটি মানুষকে শাসন করার জন্য সেদিন সেটা জরুরিই ছিল, তারা সরকারি কর্মচারী ছিল না, ছিল রাজকর্মচারি। সেই ইংরেজরা চলে গেল, দেশ স্বাধীনও হল, কিন্তু সরকারি কর্মচারিরা রাজ কর্মচারিই থেকে গেল। একই হিসেব নিকেশ, লেখা জোখার কাজ করেন একজন অ্যাকাউন্ট্যান্ট৷ সরকারি দফতরে কাজ করলে তার এক মাইনে, আর বড়বাজারে দোকানে বসে সেই কাজ, কি তার চেয়েও বেশি কাজের জন্য অনেক অনেক কম মাইনে বরাদ্দ৷ এটা সবাই জানে। সেই ১৯৪৭ থেকেই আম জনতার কাছে সরকারি স্কুল খারাপ, সরকারি হাসপাতাল খারাপ, সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা খারাপ, সরকারি সব কিছুই খারাপ, কিন্তু সরকারি চাকরি? সেটা সব থেকে ভালো। হ্যাঁ বেশিরভাগ মানুষের কাছেই এটাই সত্যি, একটা সরকারি চাকরির জন্য ধরা করা, ঘুষ দেওয়া, হত্যে দিয়ে পড়ে থাকার কথা আমরা জানি, সবাই জানে। কতটা ভালো? সরকারি দফতরে একজন কনিষ্ঠ কেরানি, আর বেসরকারি দফতরের কেরানির মধ্যে কতটা তফাত? রবি ঠাকুর লিখছেন,

কিনু গোয়ালার গলি।
দোতলা বাড়ির
লোহার-গরাদে-দেওয়া একতলা ঘর
পথের ধারেই।
লোনা-ধরা দেওয়ালেতে মাঝে মাঝে ধসে গেছে বালি,
মাঝে মাঝে স্যাঁতা-পড়া দাগ।
মার্কিন থানের মার্কা একখানা ছবি
সিদ্ধিদাতা গণেশের
দরজার ‘পরে আঁটা।
আমি ছাড়া ঘরে থাকে আরেকটা জীব
এক ভাড়াতেই,
সেটা টিকটিকি।
তফাত আমার সঙ্গে এই শুধু,
নেই তার অন্নের অভাব।
বেতন পঁচিশ টাকা,
সদাগরি আপিসের কনিষ্ঠ কেরানি।
খেতে পাই দত্তদের বাড়ি
ছেলেকে পড়িয়ে।
শেয়ালদা ইস্টিশনে যাই,
সন্ধেটা কাটিয়ে আসি,
আলো জ্বালাবার দায় বাঁচে।
এঞ্জিনের ধস্‌ ধস্‌,
বাঁশির আওয়াজ,
যাত্রীর ব্যস্ততা,
কুলি-হাঁকাহাঁকি।
সাড়ে দশ বেজে যায়,
তার পরে ঘরে এসে নিরালা নিঃঝুম অন্ধকার।

আজ এই ছবি কতটা আলাদা? একজন কেঃ সঃ চাকুরে, কেন্দ্রীয় সরকারি চাকুরে, ওই কনিষ্ঠ কেরানির আজকের দিনে মাইনে কত? মানে মাসের শেষে কত টাকা তেনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়? নয় নয় করে হাজার পঞ্চাশ টাকা, রাজ্য সরকারের? হাজার চল্লিশ টাকা। বেসরকারি দফতরে? কত? ১৬/১৮ হাজার টাকা। একজন কলেজ শিক্ষকের মাইনে দেড় লক্ষ টাকা, সেই কলেজেই একই পড়াশুনো করান, কন্ট্রাকচুয়াল জব, মাইনে কত? ৪০ হাজার টাকা। যত ওপরে উঠবেন তত অবাক হবেন। কেন এনাদের এত বেশি মাইনে? কত বড় দায়িত্ব তাঁরা পালন করেন? হাজার একটা সরকারি গাফিলতির ফলে, যে অসংখ্য সমস্যা তৈরি হয়, ব্রিজ ভাঙে, রাস্তা ফেটে চৌচির হয়, ঘুষ নিয়ে চোলাই হয়, মানুষ মারা যায়, ওই ঘুষ নিয়েই আরও কত কিছু, ক’জন সরকারি কর্মচারীর শাস্তি হয়, হয়েছে? একটা কলেজের একটা বিষয়ে ৩০ জনের মধ্যে ২৮ জন ফেল, সেই বিষয়ের শিক্ষককে ছাঁটাই করা হয়েছে? একটা স্কুলে ৬০ জনের মধ্যে ২৫ জন ফেল, কজনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে? হয়নি। কিন্তু তাদের মাইনে বেশি৷

কেবল বেশিই নয়, কিছুদিন পর পর তাদের পে কমিশন হয়, চতুর্থ পে কমিশন, মানে ১৯৮৮/৮৯ র আগে যে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ১২০০ টাকা বেসিক স্যলারি পেতেন, সেই তিনি সপ্তম পে কমিশনের পর ৬৫ হাজার টাকা বেসিক পে পান, ১৯৮৮/১৯৮৯ সালে দৈনিক ন্যূনতম মজুরি ছিল ১১০ টাকা, আজ সেটাই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৮ টাকা, এটাই সরকারের হিসেব, সাধারণভাবে গ্রাম বাংলায় একজন ক্ষেতমজুর ১৯৯০ সালে পেতেন ১২০ টাকা ১০ ঘন্টার কাজের বদলে, আজ তিনি পান ২৩০ টাকা, মানে খুব বেশি হলে দু গুণ, আর সরকারি কর্মচারীদের মাইনে বেড়েছে ৫০/৬০ গুণ। এই বিরাট বৈষম্য নিয়ে কথা বলবে কে? হুদো হুদো শ্রমিক নেতারা আছেন, তাঁদের একজনেরও ধক নেই এটা বলার, যে এই বৈষম্য মেটাও, অসংগঠিত ক্ষেত্রে অবস্থা কতটা করুণ, চাকরির মাইনের স্থিরতা নেই৷ এই যে লক ডাউন গেল, কতজন সরকারি কর্মচারীর চাকরি গিয়েছে? কতজন সরকারি কর্মচারির মাইনে কমেছে? কমা তো দূরের কথা, নিয়মিত বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধি হয়েছে, কেন? সারা দেশের ৩/৪% এই সরকারি কর্মচারীরা কোন এমন কাজ করেন, কোন এমন কাজ করতে পারেন, যা বাইরের কেউ পারে না? কতগুলো রেল দুর্ঘটনায়, কতগুলো পথ দুর্ঘটনায় যেখানে সরকারি গাড়ি বা বাসের দায় ছিল, সেখানে সেই কর্মচারীদের চাকরি গিয়েছে? শেষমেষ বাসের ব্রেক, রেলের যান্ত্রিক গোলযোগের কথাই জানানো হয়েছে, এ তো নতুন কিছু নয়৷ কিন্তু মাইনে ৩০ বছরে ৪০/৫০ গুণ বাড়বে, আমি বেসিক স্যালারির কথা বলছি। এরপরে ডি এ, মহার্ঘ ভাতা, সেই মহার্ঘ ভাতা নাকি আবার ওনাদের অধিকার, সরকারকে দিতেই হবে, দাবি করছেন কারা? শ্রমিক নেতারা, মার্কসবাদ পড়া, বামপন্থী নেতারা, বাড়িতে লেনিনের ছবি ঝোলে, সেই নেতারা।

এই মহার্ঘ ভাতা কী? আপনাকে মাইনে দেওয়া হয়, ওদিকে জিনিষপত্রের দাম বাড়ছে, বাড়বেও, যে হারে জিনিষপত্র, পেট্রল ডিজেলের দাম বাড়বে, সেই হারে আপনার মাইনেও বাড়ানো হবে৷ সোজা হিসেব, আপনার মাইনে মানে বেসিক পে ১০০ টাকা, এবার হিসেব করে দেখা গেল জিনিষপত্রের যা দাম বেড়েছে তা সামলাতে হলে, আপনাকে আরও ১৫ টাকা বেশি দিতে হবে, তাহলে আপনার মাইনে হবে ১১৫ টাকা৷ বাড়ি ভাড়া ভাতা ইত্যাদি বাদ রাখছি৷ মোদ্দা কথা হল, জিনিসপত্রের দাম বাড়ার চাপ যাতে আপনাকে না নিতে হয়, সেই জন্য মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হয়৷ কারা পান? দেশের কমবেশি ২.৫ কোটি মানুষ, যাঁরা রাজ্য বা কেন্দ্রে সরকারি পদে কাজ করছেন, তাঁদের জন্য বছরে দু’বার এই হিসেব করা হয়, মাইনে বাড়ানো হয়। আচ্ছা দেশের মোট শ্রমিক সংখ্যা কত? ৫০ কোটি। মানে কমবেশি ৫% রাজকর্মচারিদের মূল্যবৃদ্ধির ছ্যাঁকা যেন না লাগে, তাই তাদের মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হয় এবং মহামান্য আদালত বলেছে, এটা তাঁদের অধিকার।

মোরা দুজনায় রাজার জামাই, খাইদাই ঘুরি ফিরি, আহাকি মোদের ছিরি, মোরা দিনে করি যাদুগরি, রাতে আয়েসে ঘুমাই। সেরি বাজারেই এনারা যান, যেখানে বাকি ৪৮ কোটি শ্রমিক শাক সবজি, মাছ, ডাল, তেল, নুন কিনতে যান। ৪৮ কোটির মহার্ঘ ভাতা নেই, তাদের মহার্ঘ ভাতা অধিকার নয়, ২.৫ কোটি মানুষের মহার্ঘ ভাতাটা হল অধিকার। তো আমাদের রাজ্যে সরকারি কর্মচারি কত? কমবেশী ১০ লক্ষ, জনসংখ্যা? ৯ কোটির কিছু বেশি। মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যেকের গায়ে একইভাবে ছ্যাঁকা দিচ্ছে, একইভাবে প্রভাব ফেলছে, কিন্তু মহার্ঘ ভাতার কথা হচ্ছে কেবল ১০ লক্ষ মানুষের, বাকি মানুষের অধিকার নিয়ে কারা কথা বলবে? মহামান্য আদালত বাকিদের মহার্ঘ ভাতা নিয়ে কবে কথা বলবেন? মাইনে থাকলে বাড়ি ভাড়ার ভাতা, স্বাস্থের খরচের জন্য ব্যবস্থা কিম্বা ভাতা, যাতায়াত বা অন্যান্য ভাতা, দিতে হবে, মহার্ঘ ভাতাও দিতে হবে বৈকি, কিন্তু সেটা সবার অধিকার, সব্বার, দেশের ৫০ কোটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার, ১০০% শ্রমিক কর্মচারীদের অধিকার, সেটা কেবল মুষ্ঠিমেয় সরকারি কর্মচারিদের অধিকার হয়ে দাঁড়ালে তো বাকিদের কাছে সেই মহার্ঘ ভাতা, হয়ে উঠবে আরেক বিরাট সমস্যা, সরকারি কর্মচারিরা মহার্ঘ ভাতা চাইবেন, বেতন কমিশন চাইবেন, এটা তো স্বাভাবিক৷ কিন্তু রাষ্ট্র, প্রশাসন, শ্রমিক সংগঠন, আদালত কি কেবল তাঁদের কথাই ভাববেন? ২.৫ শতাংশ রাজকর্মচারিদের কথা? গরিষ্ঠাংশ শ্রমজীবী মানুষদের কথা ভাববে কে?

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০
১১ ১২ ১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭
১৮ ১৯ ২০ ২১ ২২ ২৩ ২৪
২৫ ২৬ ২৭ ২৮ ২৯ ৩০ ৩১
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

ভারত পাক সীমান্তে রাজস্থানে বিএসএফের হাতে গ্রেফতার পাক সেনা
রবিবার, ৪ মে, ২০২৫
পহেলগাম আবহে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা জয়শঙ্করের
শনিবার, ৩ মে, ২০২৫
বাংলায় কথা বললে হেনস্থা হতে হচ্ছে, অমিত শাহকে চিঠি লিখলেন এই সাংসদ
শনিবার, ৩ মে, ২০২৫
এবার আরব সাগরে মহড়া শুরু ভারতীয় নৌ-বাহিনীর
শনিবার, ৩ মে, ২০২৫
৪ দিনেই ১০ লক্ষ পুণ্যার্থী, দিঘার জগন্নাথধামে রোজই নামছে ভক্তের ঢল
শনিবার, ৩ মে, ২০২৫
দিলীপ বিতর্কে নজর দলের, জনগণের টাকায় কেন মন্দির? প্রশ্ন শমীকের
শনিবার, ৩ মে, ২০২৫
জারি ত্রিমুখী নিষেধাজ্ঞা! ভারতের কোপে কতটা চাপে পাকিস্তান?
শনিবার, ৩ মে, ২০২৫
কলকাতায় আকাশছোঁয়া ডেটের স্বপ্নে ছেঁকা! বন্ধ ৮৩টি ক্যাফে
শনিবার, ৩ মে, ২০২৫
পাকিস্তানের ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ দশা! ভারতের অবস্থা কেমন?
শনিবার, ৩ মে, ২০২৫
হিটস্ট্রোকে কলকাতার রাস্তায় অজ্ঞান ঘোড়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়
শনিবার, ৩ মে, ২০২৫
ভারতের সীমানায় ঢুকে শ্রীলঙ্কার জলদস্যুদের হামলা, জখম ১৭
শনিবার, ৩ মে, ২০২৫
জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী
শনিবার, ৩ মে, ২০২৫
পোপ হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প! নেট দুনিয়ায় শুরু জল্পনা, সত্যিটা কী?
শনিবার, ৩ মে, ২০২৫
পহেলগামে হামলাকারীদের সন্ধানে কলম্বো বিমানবন্দরে তল্লাশি
শনিবার, ৩ মে, ২০২৫
২২ বছর পর বন্ধ হচ্ছে স্কাইপ, কিন্তু কেন? জেনে নিন আসল কারণ
শনিবার, ৩ মে, ২০২৫
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.
Developed By KolkataTV Team