একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে জমে গেছে আই লিগ। ডিসেম্বরে শুরু হওয়া আই লিগের শেষ দৃশ্যে হতে চলেছে চরম নাটক। এত দিন লিগ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে গতবারের বিজয়ী গোকুলম এফ সি-ই সবার আগে ছিল। মঙ্গলবার তারা যদি শ্রীনিধি এফ সি-র সঙ্গে ম্যাচ ড্র-ও করতে তাহলেও চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত। কিন্তু ম্যাচটা তারা হেরে গেল ১-৩ গোলে। হার সেদিনই মহমেডান স্পোর্টিং ২-০ গোলে হারাল রাজস্থান এফ সি-কে। ব্যস, তাতেই শেষ ম্যাচে লিগের ফয়সালার ইঙ্গিত। এখন যা অবস্থা ১৭ ম্যাচে গোকুলমের পয়েন্ট ৪০। সম সংখ্যক ম্যাচে মহমেডানের পয়েন্ট ৩৭। শনিবার সল্ট লেক স্টেডিয়ামে মহমেডান যদি হারিয়ে দেয় গোকুলমকে তাহলে এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন হবে ময়দানের সাদা-কালো ব্রিগেড। বছরটা বেশ ভালই যাচ্ছে মহমেডানের। চল্লিশ বছর পর তারা কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তার আগে হয়েছে ডুরান্ড কাপে রানার্স। এখন শেষ বিচারে তারা যদি আই লিগেও চ্যাম্পিয়ন হয় তাহলে সোনায় সোহাগা। তবে যে রকমভাবে গোকুলম অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে গেল শ্রীনিধির কাছে তাতে মনে হচ্ছে মহমেডানের কপালেই আই লিগের চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা লেখা হয়ে গেছে।
শনিবার সল্ট লেক স্টেডিয়ামে মহমেডানের সমর্থনে গলা ফাটাতে হাজির থাকবে প্রায় পঞ্চাশ হাজার সমর্থক। যদিও গোকুলাম যদি ড্র করতে পারে তাহলে তারাই চ্যাম্পিয়ন হবে। কিন্তু একে তো অপ্রত্যাশিত হারের জের, তার ওপর পঞ্চাশ হাজার দর্শকের চাপ নিয়ে গোকুলমের পক্ষে ম্যাচ জেতা খুব মুশকিল। প্রায় পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা হয়ে গেছে মহমেডানের। লিগ জেতার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না তাদের। কিন্তু শ্রীনিধির কাছে গোকুলমের হার সব অঙ্ক উল্টে দিয়েছে। এখন শেষ দৃশ্যে কী নাটক অপেক্ষা করছে কে জানে। তবে সব কিছু মিলিয়ে শনিবার ম্যাচ জেতার ব্যাপারে মহমেডানই ফেভারিট। শনিবার জিতলে মহমেডান এবং গোকুলমের পয়েন্ট হবে ৪০। কিন্তু হেড টু হেড বিচারে মহমেডান হবে চ্যাম্পিয়ন। কারণ দুই দলের প্রথম লেগের ম্যাচের ফল ছিল ১-১। তাই গোল পার্থক্য বিবেচ্য হবে না।
আরও একটা ব্যাপারে, মনে হচ্ছে, মহমেডানের ভাগ্যে আই লিগটা দেখা যাচ্ছে। তাদের ফুটবল সচিব দীপেন্দু বিশ্বাস। রাজ্যের প্রাক্তন বিধায়ক ফুটবল জীবনে ভারতের নামী স্ট্রাইকার ছিলেন। খেলেছেন কলকাতার তিন প্রধানেই। ফুটবলার হিসেবে তিনি আই লিগ জিতেছেন মোহনবাগান এবং ইস্ট বেঙ্গলের হয়ে। ১৯৯৭-৯৮ সালে মোহনবাগান যখন প্রথম জাতীয় লিগ জেতে তখন দীপেন্দু ছিলেন সেই দলের সদস্য। আবার ২০০০-০১ সালে ইস্ট বেঙ্গল যখন প্রথম জাতীয় লিগ জেতে তখন দীপেন্দু ছিলেন লাল হলুদের নিয়মিত ফুটবলার। আর এবার যদি মহমেডান আই লিগ জেতে তাহলে সেই ট্রফিতেও হাত ছোঁয়াবেন তিনি। সম্পূর্ণ হবে একটা বৃত্তের। গত এক বছর ধরে দীপেন্দু দলটার সঙ্গে আঠার মতো জড়িয়ে আছেন। নিজের সন্তানের মতো লালন করেছেন দলটাকে। বিদেশি কোচ থেকে ফুটবলার সব রিক্রূট করেও দল গঠনে কোনও হস্তক্ষেপ করেননি। হয়তো দিনের শেষে তার পুরস্কার পেতে চলেছেন দীপেন্দু। শনিবার তাঁর মহমেডান চ্যাম্পিয়ন হলে একটা ব্যাক্তিগত রেকর্ড হয়ে যাবে দীপেন্দুরও। মনে হচ্ছে সেই দিকেই যাচ্ছে আই লিগের ভাগ্য।