রামপুরহাট: বৃহস্পতিবার৷ বেলা ১টা৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ৷ বেলা তিনটে৷ গ্রেফতার রামপুরহাট ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি আনারুল হোসেন (TMC leader Anarul Hossain)৷
শুক্রবার৷ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ৷ রামপুরহাট কাণ্ডে (Rampurhat Violence) তদন্তভার সিবিআইয়ের (Rampurhat CBI) হাতে৷
শনিবার৷ রামপুরহাটে পুড়ে হওয়া বাড়িতে ঢুকল সিবিআইয়ের দল৷ ঘণ্টা তিনেকের চিরুনি তল্লাশি৷
রবিবার৷ ফের একবার রামপুরহাটে সিবিআই৷ নিজেদের হেফাজতে নিল আনারুল হোসেনকে৷
গত চারদিন এভাবেই প্রেক্ষাপট পাল্টে গেল৷ রামপুরহাট অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তে ফের নতুন বাঁক৷ রামপুরহাট থানা থেকে আনারুল হোসেনকে নিয়ে পান্থশ্রীর অস্থায়ী ক্যাম্পে চলে গেল সিবিআই৷ যে আনারুল হোসেনকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ গত সোমবার রাতে যে তৃণমূল ব্লক সভাপতির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল৷ যে আনারুলের সঙ্গে ভাদু সেখ গোষ্ঠীর একাধিক গণ্ডগোলের খবর প্রকাশ্যে এসেছিল৷ যে আনারুলের ভূমিকা নিয়ে রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ, সেই আনারুল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে৷
রামপুরহাটের ঘটনায় প্রথম থেকেই খবরের শিরোনামে ছিল আনারুল হোসেনের নাম৷ এলাকার এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতার ভূমিকা নিয়ে উঠেছিল একাধিক প্রশ্ন৷ কীভাবে নিজে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে রামপুরহাট ও সংলগ্ন এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেছিল সে, তা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই গুঞ্জন-জল্পনা চলছিল৷ বৃহস্পতিবার রামপুরহাটে পৌঁছে প্রথমেই আনারুলের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হয়ে ওঠেন মমতা৷ তখনই বোঝা গিয়েছিল আনারুলের অবস্থান বরদাস্ত করছে না রাজ্য প্রশাসন৷ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর দ্রুত গ্রেফতার করা হয় এই ব্লক সভাপতিকে৷ প্রথমে বাড়ি ঘিরে ফেলে চিরুনি তল্লাশি চালানো হয়৷ যদিও আনারুল গোষ্ঠীর দাবি ছিল, তাদের নেতা নিরাপরাধ, নির্দোষ৷ তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে৷
আরও পড়ুন: Rampurhat-CBI Investigation: জখমদের সঙ্গে কথা বলার হাসপাতালের অনুমতি পাবে কি সিবিআই?
রাজ্য পুলিসের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর আনারুলের বক্তব্য ছিল, ‘আমি আত্মসমর্পণ করেছি৷ দিদির নির্দেশে৷ দলের জন্য কাজ করি৷ কোনও অন্যায় করিনি৷ আমাকে ফাঁসানো হয়েছে৷’ আজও যখন কাপড়ে মাথা মুড়ে সিবিআই প্রতাপশালী তৃণমূল নেতাকে নিজেদের সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছিল তখনও সেই চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের তত্ত্বকেই আওড়ালেন আনারুল৷ বোঝানোর চেষ্টা করলেন, তাঁকে ‘বলির পাঠা’ করা হচ্ছে৷
গত বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান দেখে বোঝা গিয়েছিল, আনারুল হোসেনের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ সময়ের অপেক্ষা৷ যেভাবে কয়েকঘণ্টার মধ্যে সেদিন পুলিস আনারুলকে গ্রেফতার করেছিল তারপর জল্পনা আরও বাড়ছিল৷ স্পষ্ট হচ্ছিল, আনারুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সোমবার রাতে ঘটনার অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবে পুলিস৷ তদন্ত যখন একটি নির্দিষ্ট পথে এগোচ্ছিল, ঠিক তখনই হাইকোর্টের নির্দেশে এই ঘটনার তদন্তভার গেল সিবিআইয়ের হাতে৷ আর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তদন্তের দ্বিতীয় দিনই আনারুলকে নিজেদের হেফাজতে নিল৷ যা স্পষ্ট, আনারুলকে ‘স্ক্যান’ করে পুড়ে খাক হওয়া বাড়ির ভিতরের খবর সামনে আনতে চাইছে সিবিআই৷ সিবিআই সূত্রে খবর. আরও কয়েকজনকে আজই জিজ্ঞাসাবাদ করতে চলেছে সিবিআই৷