কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে এখন থেকেই বিজেপি বিরোধী জোট গড়ার সলতে পাকানোর কাজ শুরু করতে চায় তৃণমূল। খুব শীঘ্রই তৃণমূল বিজেপি বিরোধী রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে কনক্লেভ ডাকার উদ্যোগ নিয়েছে। দলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় রবিবার একথা জানিয়ে বলেন, আমরা এখনই কাউকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ করার কথা ভাবছি না। বিজেপির জনবিরোধী নীতিগুলির বিরুদ্ধে আগামিদিনে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করার মঞ্চ হিসেবেই ওই কনক্লেভের কথা ভাবা হচ্ছে।
১৯৮৩ সালে অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত এনটি রামারাও অকংগ্রেসি ফ্রন্ট গড়ার লক্ষ্যে প্রথম ওই ধরনের কনক্লেভ করেছিলেন। ২৮ মে তাঁর জন্মদিন উপলক্ষ্যে বিজয়ওয়াড়াতে ওই কনক্লেভ বসেছিল। বস্তুত সেই সময় ওই কনক্লেভ থেকেই জাতীয় স্তরে বিরোধী ঐক্যের সূচনা হয়। তার ফলশ্রুতিতেই ১৯৮৯ সালে বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং প্রধানমন্ত্রী হন।
পরবর্তীকালে কাশ্মীরে একই ধাঁচের অকংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীদের কনক্লেভের উদ্যোগ নিয়েছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা। তারও পরে কলকাতাতেও কংগ্রেস বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের কনক্লেভ হয়েছিল। তার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসু। এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ফারুক আবদুল্লার ভূমিকাও ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ ওই সময়। ১৪টি বিরোধী দলের প্রায় ২৪ জন নেতা বিজয়ওয়াড়ায় প্রথম কনক্লেভে উপস্থিত ছিলেন।
তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র জানান, এখন থেকে বিজেপি বিরোধী দলগুলি যে পদক্ষেপই করবে, তা তার প্রধান লক্ষ্য হবে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোট। পারস্পরিক আলাপ আলোচনা, মত বিনিময়, যৌথ কর্মসূচির মাধ্যমে গড়ে উঠবে বিরেধী জোট। ওই জোটে আঞ্চলিক দলগুলিরও বিশেষ ভূমিকা থাকবে। যেমন তামিলনাড়ুর ডিএমকে, তেলঙ্গনার টিআরএসের মতো দলগুলি এই জোটে থাকবে।
সুখেন্দুশেখর আরও জানান, দেশের গণতন্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থেই এই ধরনের বিরোধী জোট দরকার। দেশে বিজেপির বারবারন্ত হওয়ার পরেই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে পড়ার মুখে।
সংসদের দ্বিতীয় পর্বের অধিবেশন চলাকালীনই দিল্লিতে বসছে তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। সেখানেও বিরোধী কনক্লেভ নিয়ে আলোচনা হবে বলে সূত্রের খবর। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য ২০১৯ সালের সোকসভা ভোটের পর থেকেই অবিজেপি জোটের কথা বলে চলেছেন। তবে সেই জোটের নেতৃত্ব কোন দলের হাতে থাকবে, তা এখনও চূড়ান্ত নয়। যদিও মমতার অভিযোগ, অবিজেপি জোট গড়ার ব্যাপারে কংগ্রেস আন্তরিক নয়। বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পায় কংগ্রেস। তাঁর মন্তব্য, ‘কংগ্রেস যদি কিছু না করে, তার জন্য আমরা তো হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না।’ বিজেপি বিরোধিতায় তাঁর যে কোনও খাদ নেই, তা বোঝাতেই মমতা উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির পাশে দাঁড়িয়েছেন। যোগী রাজ্যে প্রচারে গিয়ে তাঁর দাবি, উত্তরপ্রদেশে এবার বিজেপি হারছেই।
তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্রের অভিযোগ, বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিতে রাজ্যপালরা কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। রাজ্যগুলির দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজকর্মে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছেন। তিনি বলেন, বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ না হলে এই পরিস্থিতি বদল করা যাবে না।