কলকাতা সোমবার, ০৬ মে ২০২৪ |
K:T:V Clock

চতুর্থ স্তম্ভ : যেদিন সুনীল জলধি হইতে আসিল আদানি ভারতবর্ষে 
সম্পাদক Published By:  • | Edited By:
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১ নভেম্বর, ২০২১, ১০:৩০:১২ পিএম
  • / ৩৩৯ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • • | Edited By:

গত ১৯ অক্টোবর, দেশের সব বড় বড় কাগজে এক পাতা জুড়ে এক বিজ্ঞাপন অনেকের চোখে পড়েছে, যাদের চোখে পড়েনি, তাদের জন্য আবার, এই যে দেখুন, হিন্দু পত্রিকায়, পাতা জোড়া বিজ্ঞাপণ, মধ্যে বুদ্ধের ছবি, একদিকে যোগী আদিত্যনাথ, মুখ্যমন্ত্রী উত্তরপ্রদেশ, অন্যদিকে দেশের প্রধান সেভক, নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি। সেদিন কুশিনগরে নতুন তৈরি বিমানবন্দর উদ্বোধনের অনুষ্ঠান, দেশের জনগণের হাতে তুলে দেওয়া হবে ওই বিমানবন্দর, তারই অনুষ্ঠান। তাতে হাজির রাজ্যের রাজ্যপাল, মোদি সরকারের ৪-৫ জন মন্ত্রী, হাজির রাজ্য সরকারের মন্ত্রী, বিজ্ঞাপণেই লেখা আছে, ৫৮৯ কোটি একর জমিতে ২৫০ কোটি টাকায় তৈরি হয়েছে এই বিমানবন্দর, এর ফলে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ, আন্তর্জাতিক পর্যটক সংখ্যার ২০% বৃদ্ধি, পূর্বাঞ্চলে পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং গর্বের সঙ্গে জানানো হয়েছে যে, উত্তরপ্রদেশের সবথেকে লম্বা রানওয়ে তৈরি হল এই কুশিনগরেই।

প্রধানমন্ত্রী যখন এই মহান প্রকল্পের উদ্বোধন করছিলেন, ঠিক সেই সময়ে দেশের নীতি আয়োগের লোকজন, হিসেব করে দেখছে, কত টাকায়, কার কাছে এই বিমানবন্দর বিক্রি করা হবে, হ্যাঁ তাঁরা এই বিমানবন্দর বিক্রি করার দাম ও শর্ত নির্ধারণ করছেন, ভারত সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছরে যে ৬ টা বড়, ৭ টা ছোট এয়ারপোর্ট বিক্রি করা হবে, তার মধ্যে আছে এই কুশিনগর এয়ারপোর্ট। মানে ২০ তারিখ যা দেশের মানুষের কাছে দেওয়া হল, বিজ্ঞাপণের ভাষায় লোকঅর্পণ করা হল, সেটা এক বছরের মধ্যে বেচে দেওয়া হবে, সম্ভবত এক বছর পরে, গৌতম আদানি এই এয়ারপোর্টের মালিক হবেন।

কেউ কল্পনাতেও আনতে পারেন? কেউ ভেবে উঠতে পারবেন যে, প্রধানমন্ত্রী এক এয়ারপোর্টের উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন এটা জেনে যে, এক বছরের মধ্যে সেটা বেচে দেওয়া হবে? কেবল ওটাই নয়, ৬ টা বড়, ৭ টা ছোট এয়ারপোর্ট আগামী বছরে বিক্রি হবে। তার সার্কিটও রেডি, বেনারস, গয়া, কুশিনগর, বৌদ্ধ সার্কিট, প্রচুর ট্যুরিস্ট আসবেন, দারুণ ব্যবসা হবে, ব্যবসা করবে আদানি।

মিলিয়ে নেবেন, আজ বলছি, মাস ছয়েক পরেই মিলিয়ে নেবেন এই সার্কিট যাবে আদানির কাছে, যেমন করে তাদের হাতে গেছে আমেদাবাদ, জয়পুর, লখনউ, তিরুবন্তপুরম, ম্যাঙ্গালোর আর গৌহাটি। উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের আগে বিরাট প্রচার হল, প্রধান দেশ সেভক বড় বড় কথা বললেন, নির্বাচনের পরে সেই প্রকল্প বেচে দেওয়া হবে, আদানিকেই বিক্রি করা হবে, কম দামেই বিক্রি করা হবে। এর আগেই ম্যাঙ্গালোর, লখনউ, আমেদাবাদের নন অ্যারোনটিকাল সম্পত্তি, মানে জমি বাড়ি ইত্যাদি ৫০০ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছে এই আদানির কাছে, বিক্রির কদিন আগেই যে সম্পত্তির মুল্যায়ন হয়েছিল ১৩০০ কোটি ধার্য করা হয়েছিল, কর্মচারী ইউনিয়নের তরফে এই অন্যায় হাতবদলের কথা, মোদিজীকে জানানোও হয়েছে, কিন্তু কি করা যাবে, মোদিজী তো ন খায়েঙ্গে, ন খানে দেঙ্গে মুখেই বলেন, আসলে লুঠমার চলছে, মাথায় বসে আছেন নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি।
কি রকম লুঠমার?

এই আদানিদের নাম ২০১৪ র আগে শুনেছেন? জানতেন? ছিল তো বটেই কিন্তু কতটা ছিল? তাদের হাতে কি কেবল ৬ টা এয়ারপোর্ট চলে গেছে? তাদের হাতে গেছে দেশের রেল, সড়ক যোগাযোগ, জাহাজ বন্দর, কোলমাইন, বিদ্যুৎ পরিবহন, শস্য গুদাম, ভোজ্য তেল, আপেল সমেত বিভিন্ন ফলের বাজার, এমন কি ডিফেন্স, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনের ব্যবসা, ২০১৪ থেকে তাদের এই উত্থান রকেট গতিকেও হার মানাবে। একটু বিশদে আলোচনা করা যাক। ২ আগস্ট ২০১৯, ১০ কোটি অথরাইজড শেয়ার ক্যাপিটাল আর ২৫ লক্ষ পেইড আপ ক্যাপিটাল নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, আদানি এয়ারপোর্ট হোল্ডিংস লিমিটেড, ঠিক এই মুহূর্তে সেই কোম্পানির কাছে আছে আমেদাবাদ, জয়পুর, লখনউ, তিরুবন্তপুরম, ম্যাঙ্গালোর আর গৌহাটি এয়ারপোর্ট, তাদের হাতে আছে মুম্বাই ছত্রপতি শিবাজী এয়ারপোর্টের ৭৪% শেয়ার মালিকানা। বিশ্বের কোনও কোম্পানির এই অগ্রগতি দেখাতে পারবেন?
আগেও বলেছি, আবারও বলছি, ২০ অক্টোবর যে কুশিনগর এয়ারপোর্ট আমাদের টাকায় তৈরি করা হল, তা আগামী বছরে আদানিদেরই হাতে যাবে, তার সঙ্গেই থাকবে বেনারস আর গয়া বিমানবন্দর, মিলিয়ে নেবেন। এই বিমানবন্দরগুলো আদানির হাতে দেওয়ার বছরখানেক আগেই, মোদি সরকার বড় অ্যামাউন্টের টাকা খরচ করেছে। তিরুবন্তপুরম আর গৌহাটি রানওয়ের জন্য খরচ হয়েছে ১০০ কোটি টাকা, গৌহাটির নতুন টার্মিনালের জন্য খরচ হয়েছে ১০০০ কোটি টাকা, মানে বেশ সাজিয়ে গুজিয়ে পাত্রী বিদেয় করা হয়েছে, ন খাউঙ্গা, ন খানে দুঙ্গা।

এবার সমুদ্রবন্দরের দিকে চোখ ফেরানো যাক। গুজরাটে মুন্দ্রা, হাজিরা, দাহেজ সমুদ্রবন্দর আদানিদের হাতে। অন্ধ্র প্রদেশের নেল্লোর এ কৃষ্ণপত্তনম, উড়িষ্যার ধামরা, কেরালার ভিজহিন্দম, চেন্নাই এর কাট্টুপল্লি, নবি মুম্বাইয়ের দিঘি সমুদ্রবন্দরও ওই আদানিদের হাতে, যে আদানির নাম আমরা ২০১৪ র আগে শুনিইনি, খুব শিগগির এই তালিকা আরও লম্বা হচ্ছে, নতুন আরও কিছু বন্দর আদানিদের হাতে যাচ্ছে, শোনা যাচ্ছে, এই বাংলারও এক সমুদ্র বন্দরের দিকে তাদের নজর পড়েছে। রেলপথের কথায় আসুন, ঘুরপথে কী কী যাচ্ছে বা গেছে, এখনই বলতে পারব না, তবে অফিসিয়ালি আদানি গ্রুপ ৩০০ কিলোমিটার রেললাইন পাতছে, এটা তাদের নিজস্ব রেলপথ।

বিমানবন্দর, জাহাজবন্দর, রেলপথ হল, এবার সড়ক পরিবহন, এই বছরেই তারা ৬৫০ কিলোমিটার নতুন রাস্তা বানানোর বরাত পেয়েছে, আদানিদের হাতে ৮৫০০ সার্কিট কিলোমিটার বিদ্যুৎ পরিবহণ ছিল, তাদের ঘোষিত লক্ষ্য ছিল ২০ হাজার সার্কিট কিলোমিটার, ২০২২-এর মধ্যে, শুনলে খুশি হবেন, এই সব অতিমারি ইত্যাদির মধ্যেও ২০২১ এই আদানি গ্রুপ সেই লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে ফেলেছে, কত তাড়াতাড়ি জমি অধিগ্রহণের কাজ হয়েছে, পরিবেশ সংক্রান্ত অনুমতি পাওয়া গেছে। অবশ্য কোম্পানি গৌতম আদানির, পাশে পরধান সেভক, কে আটকাবে? কার ঘাড়ে কটা মাথা?

আদানি এগ্রিকালচারের কথা আপনার রান্নাঘর জানে, ভোজ্য তেলের দাম গত এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে, আপনার ঘরে ফরচুন এসেছে। হিমাচল প্রদেশের  চাষিরা জানে আদানিদের আপেল আর ফল ব্যবসা, সে কথা আপনাদেরও আগে জানিয়েছি, সারা দেশ জুড়ে তাঁরা ফসলের গোদাম তৈরি করছেন, কৃষি বিল যে আসতে চলেছে, তা তাঁরা বিলক্ষণ জানতেন, এই বাংলাতেও একটা গোদাম তাঁরা তৈরি করছেন, এবার ফসল গোদামে ঢুকলে, স্বাভাবিকভাবেই সেই ফসলের দাম তাঁরাই নির্ধারণ করবেন, আদানি ছাপ মারা করলার দাম হবে ১৩০ টাকা কেজি, ন খাউঙ্গা, ন খানে দুঙ্গা।

এবার আসুন ডিফেন্সে, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরি করছে আদানি গ্রুপ। আন ম্যানড এরিয়াল সিস্টেম, হেলিকপ্টার, সাবমেরিন, এয়ার ডিফেন্স গান, মিসাইল, স্মল আর্মস,
না এখনও পর্যন্ত পরমাণু বোমা তৈরির বরাত তাঁরা পাননি, এখনও পাননি বলে, পাবেনই না, এমনও তো নয়। কয়লাতে আদানি গ্রুপের চোখ অনেকদিন আগেই পড়েছে, বিভিন্ন অঞ্চলের কোল ব্লক যারই হোক, তা তোলার কাজ ওনারাই করছেন, ওনাদের নিজেদেরও কোল ব্লক আছে, ওনাদের রিজার্ভ ভান্ডার হল ২৮৪৩ মিলিয়ন টন কয়লা, আমি এদেশের কথা বলছি, এছাড়াও অস্ট্রেলিয়াতে বিরাট কোলমাইনস ওনাদেরই হাতে রয়েছে, ঘটনাচক্রে প্রধানমন্ত্রীর অস্ট্রেলিয়া সফরের পরেই তাঁর হাতে এসেছে ওই কয়লাখনি, এবং কত সমাপতন দেখুন, কোইনসিডেন্ট, ওই কয়লা খনিতে উৎপাদন শুরু হবার ঠিক পরেই আমাদের দেশে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার অভাব, এতটাই তীব্র সে অভাব যে এখনই কয়লার জোগান না এলে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হবে, ওদিকে আরেক কোইনসিডেন্ট, ঠিক এই সময়ে কোল ইন্ডিয়ার উৎপাদনও গেছে কমে, গত এপ্রিল সেপ্টেম্বারে ৬৭০ মিলিয়ন টন কয়লার বদলে, উঠেছে মাত্র ২৪৯ মিলিয়ন টন, কাজেই এক তীব্র অভাব, দেশকে বাঁচাতে মাঠেই আছেন আদানি, কয়লার দাম? সে তো তাঁরাই ঠিক করবেন। আর এই পরিস্থিতে রাজ্যে রাজ্যে বিদ্যুৎ জোগান বজায় রাখতে, কিছু বেশি পয়সা খরচ হলে হবে, দেশের মানুষকে তো অন্ধকারে ফেলে রাখা যায় না, কী বলেন, আপনারা? কদিন পরে আমাদের পাঠ্য পুস্তকে নতুন গান লেখা থাকবে,

যেদিন সুনীল জলধি হইতে আসিল আদানি ভারতবর্ষে,
উঠিল বিশ্বে সে কি কলরব, সে কি মা ভক্তি, সে কি মাহর্ষ!
সে দিন তোমার প্রভায় ধরার প্রভাত হইল গভীর রাত্রি;
বন্দিল সবে, “জয়তু আদানি। জগত্তারিণি! জগদ্ধাত্রি!

দেশ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, আমার স্বদেশ, আপনার স্বদেশ, বিক্রি হয়ে যাচ্ছে,
বিক্রি করছে এক বেনিয়া, যে বলেছিল, না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা।

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১
১২ ১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮
১৯ ২০ ২১ ২২ ২৩ ২৪ ২৫
২৬ ২৭ ২৮ ২৯ ৩০ ৩১  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

পাণ্ডুয়ায় অভিষেকের সভার দিনই বোমা ফেটে মৃত ১ কিশোর
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সুখ-সম্পদে ভরে উঠবেন এই ৫ রাশির জাতক
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
লখনউ দুরমুশ, আইপিএলের মগডালে KKR
রবিবার, ৫ মে, ২০২৪
নারিনের ব্যাটে ভর করে ২৩৫ করল KKR
রবিবার, ৫ মে, ২০২৪
কাল, সোমবার এসএসসি মামলার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে
রবিবার, ৫ মে, ২০২৪
ফের নারিনের তাণ্ডব, বড় রানের পথে কলকাতা
রবিবার, ৫ মে, ২০২৪
স্কুলে বেত খেয়েছিলাম: প্রধান বিচারপতি
রবিবার, ৫ মে, ২০২৪
হোয়াইট হাউসের গেটে ধাক্কা গাড়ির
রবিবার, ৫ মে, ২০২৪
৯ নম্বরে ব্যাট করতে এলেন ধোনি, চলছে ট্রোলিং
রবিবার, ৫ মে, ২০২৪
এশীয় বংশোদ্ভূত সাদিক খান লন্ডনের মেয়র
রবিবার, ৫ মে, ২০২৪
লখনউয়ের বিরুদ্ধে কী হবে নাইটদের একাদশ?
রবিবার, ৫ মে, ২০২৪
শ্রেয়সের হৃদরোগের কারণ কোভিড ভ্য়াকসিন!
রবিবার, ৫ মে, ২০২৪
বাড়িতে পিঁপড়ের উপদ্রব! জেনে নিন কীভাবে রেহাই পাবেন
রবিবার, ৫ মে, ২০২৪
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.   Privacy Policy
Developed By KolkataTV Team