নয়াদিল্লি: করোনার জুজু না কি স্রেফ রাজনীতি? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রোম সফর বাতিলের পিছনে কী কারণ রয়েছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা অব্যাহত। শুক্রবার গভীর রাতে বিদেশমন্ত্রকের এক যুগ্মসচিব চিঠি দিয়ে সফর বাতিল করার বিষয়টি জানিয়েছেন। নবান্নে খুব সংক্ষিপ্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।
তাতে লেখা রয়েছে, এই অনুষ্ঠান একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর অংশগ্রহণের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ মহলে সফর বাতিল হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি রোম যাচ্ছেনও না। তৃণমূলের একটা অংশের দাবি, পুরোপুরি রাজনৈতিক কারণে এই সফর বাতিল করা হয়েছে। কেন্দ্রের এই আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে জোড়াফুল শিবির।
আরও পড়ুন: নভেম্বর পর্যন্ত ১৪৪ ধারা, তা হলে কি ত্রিপুরায় দুর্গাপুজো হবে না? বিজেপিকে নিশানা মমতার
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ইতালি সরকার আমাকে স্পেশাল পারমিশন দিয়েছিল। স্রেফ প্রতিহিংসার কারণে কেন্দ্রীয় সরকার যেতে দিল না। এভাবে আমাকে আটকানো যাবে না। রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, অত্যন্ত অনৈতিক কাজ। একটা দেশের মুখ্যমন্ত্রী একটি প্রেস্টিজিয়াস অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন, সেটা আটকানো উচিত হয়নি। উনি তো দেশেরই প্রতিনিধিত্ব করতেন।
ইতালির এক সংগঠন মমতাকে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানে যোগদানের ব্যাপারে সম্মতিও জানিয়েছিলেন। ওই অনুষ্ঠানটি মূলত শান্তি সম্মেলন। সব ধর্মের প্রতিনিধিরা সেখানে উপস্থিত থাকবেন। কায়রোর গ্রেট ইমাম থেকে খ্রিস্টান অর্থোডক্স চার্চের প্রধান অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন। এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে পোপ ও জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলকেও।
আরও পড়ুন: ‘গরুর দুধে সোনা রয়েছে’ বলেই বিশ্বাস করেন বিজেপির অধ্যাপক সভাপতি
করোনা পরিস্থিতিতে এই সম্মেলন আয়োজনের জন্য বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ইতালি সরকার। মুখ্যমন্তী শিল্পপতিদের একটি দলকে নিয়ে যেতে চাইলেও সেই প্রস্তাবে সবুজ সংকেত দেয়নি ইতালি সরকার। করোনার জেরে কনফারেন্সেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে মূল অনুষ্ঠানটি হবে। দেশ-বিদেশের বহু প্রতিনিধিও উপস্থিত থাকবেন।
কোনও মুখ্যমন্ত্রী বিদেশ সফরে গেলে বিদেশমন্ত্রকের তরফে একটি ‘ওকে লেটার’ প্রয়োজন হয়। মুখ্যমন্ত্রীর সমস্ত শর্ত মেনে সেই লেটারটি চেয়ে বিদেশমন্ত্রকে আবেদন জানালেও তা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। কী কারণ সেটাও স্পষ্ট চিঠিতে উল্লেখ করেনি কেন্দ্র সরকার। ছোট্ট একটি চিঠি পাঠিয়েই দায় সেরেছে তারা।
আরও পড়ুন: গুলিতে ক্ষতবিক্ষত শরীরের উপরেও বর্বর আক্রমণ, অসমে পুলিশের ফটোগ্রাফার গ্রেফতার
বর্তমানে আমেরিকা সফরে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তিনি। কোয়াড সম্মেলনে বাইডেন ছাড়াও জাপান, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে আলাপচারিতা সেরেছেন নমো। তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, এই পরিস্থিতিতে মমতার ইউরোপ সফরের অনুমতি দিলে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে চলে যেতেন মোদি। সে কারণেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সফর বাতিল করা হয়েছে।
এর আগে মমতার চীন সফর বাতিল করেছিল মোদি সরকার। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ভবানীপুর উপনির্বাচনের ঠিক আগে এইভাবে আচমকা মমতার সফর বাতিল করে আদপে তৃণমূলের হাতে নয়া অস্ত্র তুলে দিল গেরুয়া শিবির। ভবানীপুরের প্রচারে এই সফর বাতিলের বিষয়টিকে যে ইস্যু করবে তৃণমূল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরও পড়ুন: এবার গোয়া দখলের লক্ষ্যে ময়দানে তৃণমূল