কোচবিহার: রাজ্যের সাতটি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন শীঘ্রই৷ তৃণমূল চাইছে বিজেপিকে ৭-০ গোল দিতে৷ কিন্তু কোচবিহারের দিনহাটায় তৃণমূলের দুই শিবিরের কোন্দল শাসকের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ একদিকে রয়েছে উদয়ন গুহ-র শিবির৷ অন্যদিকে প্রাক্তন জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের অনুগামীরা৷ দলীয় শৃঙ্খলার পরোয়া না করেই রবিবার প্রকাশ্যেই রাজ্য সহ-সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে তোপ দেগেছেন উদয়ন গুহ৷ দলীয় কোন্দল এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে তৃণমূলের লোকেরাই বলতে শুরু করেছে, এরকম চলতে থাকলে উপনির্বাচনেও আসনটা হাতছাড়া হবে৷
আরও পড়ুন: বিধানসভা নির্বাচনে বাঁকুড়ায় ভালো ফল করেও শক্তি হারাচ্ছে বিজেপি
দিনহাটায় এবার তৃণমূল প্রার্থী করেছিল উদয়ন গুহকে৷ তিনি বিজেপির নিশীথ প্রামাণিকের কাছে ৫৭ ভোটে হেরে যান৷ সাংসদ নিশীথ বিধায়ক হয়ে রাজ্যে থাকতে চাননি৷ তিনি পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়ে গিয়েছেন৷ অপরদিকে নাটবাড়ি কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ৷ তিনিও জয়ের স্বাদ পাননি৷ কিন্তু ক্ষমতায় নিজেকে টিকিয়ে রাখতে তাঁর পাখির চোখ এখন দিনহাটা আসনটি৷ ওই আসনে প্রার্থী হতে রবীন্দ্রনাথ ঘোষও চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ তৃণমূল সূত্রে খবর, জেলার অধিকাংশ নেতাকর্মীও বিধায়ক পদেই দেখতে চাইছেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে। কারণ তাদের অভিযোগ, দলীয় কোন্দলের জেরেই হারতে হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঘোষের মত জনপ্রিয় নেতাকে। আর এই বিষয়টাই এবারও মেনে নিতে পারছে না উদয়ন গুহ-র শিবির৷ এই নিয়েই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত, প্রকাশ্যে সে ইঙ্গিত দিচ্ছেন উদয়ন গুহও৷
সদ্য হওয়া বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের জেলা কোচবিহারে ভালো হয়নি তৃণমূলের ফল। ৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র দুটিতে ঘাসফুল ফুটেছে। বাকি ৭টি আসনে পাপড়ি মেলেছে পদ্ম। তৃণমূল কংগ্রেসের অন্তর্কলহকেই মূলত এইজন্য দায়ী করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে জেলার তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় এবং ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া উদয়ন গুহ কোমর বেঁধেছেন প্রাক্তন জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বিরুদ্ধে। তারই জেরে এবার কোচবিহার জেলায় ভরাডুবি তৃণমূলের। গত ২১ জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভার্চুয়াল সভায় চেয়ারের সারি ছিল ঠিকই, কিন্তু নেতা-কর্মী শূন্য। বর্তমানে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বিপক্ষে চোরাস্রোত বয়ে চলেছে জেলায়।
আরও পড়ুন: মমতার আগে রণকৌশল তৈরিতে সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকে দিল্লিতে অভিষেক
তৃণমূল কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব বারেবারে অভ্যন্তরীণ বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ভুলে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহার জেলায় ৯টি আসনের মধ্যে ৮টি আসনই তৃণমূলের দখলে ছিল। তখন জেলা সামলেছেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। ২০২১ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের ঝুলিতে রয়েছে মাত্র ২টি আসন। ২০০-রও বেশি আসন পাওয়া তৃণমূল কংগ্রেসে বড় বেমানান লাগছে কোচবিহার জেলার নির্বাচনী ফল। বর্তমান জেলা সভাপতি কী করছেন, এই প্রশ্ন আগেই উঠেছিল। এদিন বিষ্ণু সরকারের বক্তব্যকে দলের কর্মীর মনের কথা বলে মান্যতা দেওয়ায় ঘটনা কি তবে রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বিপরীতে উদয়ন গুহর ভূমিকাও স্পষ্ট করছে? প্রশ্ন উঠেছে কোচবিহারে, তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরেও।