কলকাতা: শীতলকুচির ১৪ বছরের কিশোর মৃণাল হক৷ ভোটের দিন অর্থাৎ ১০ এপ্রিল বুথের অদূরে অচৈতন্য অবস্থায় মাটিতে পড়ে ছিল৷ তখন সকাল সাড়ে ৯ টা৷ গুজব রটে যায় কেন্দ্রীয় বাহিনী ওই কিশোরকে খুন করেছে৷ এই গুজব থেকেই শীতলকুচিতে যাবতীয় গোলমালের সূত্রপাত৷ সিআইডি তাঁদের তদন্ত রিপোর্টে এ কথাই জানিয়েছে হাই কোর্টে৷
ভোটের দিন শীতলকুচিতে গোলমাল হচ্ছে বলে পুলিসের কাছে খবর আসে৷ পুলিস এবং কুইকরেন্সপন্স টিম তৎক্ষণাৎ বুথ নম্বর ১২৬ লাগোয়া এলাকায় পৌঁছয়৷ দেখা যায়, মাটিতে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে আছে কিশোর মৃণাল হক৷ পুলিস এবং বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছনো মাত্রই প্রায় ৭০-৮০জন গ্রামবাসী তাঁদের ঘিরে ধরে৷ দাবি জানাতে থাকে, কেন্দ্রীয় বাহিনী ওই কিশোরকে খুন করেছে৷ যদিও সিআইডি তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, ওই কিশোরকে পুলিস উদ্ধার করে মাথাভাঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি করে৷ কিন্তু, গুজব থামানো যায়নি৷ উত্তেজিত গ্রামবাসী ও তাঁদের ভিড়ে মিশেথাকা দুষ্কৃতীরা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে আক্রমণ করে৷ কুইক রেসপন্সটিমের গাড়ি ভাঙচু করা হয়৷ সিআইডি রিপোর্টে বলা হয়েছে, সে সময় সিআইএসএফ অফিসার দীপক কুমারের নির্দেশে জওয়ানরা শূন্যে ছ’ রাউন্ড গুলি চালায়৷ এই সময় পরিস্থিতি খানিকটা নিয়ন্ত্রণে আসে। এর এক ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ফের শীতলকুচিতে পরিস্থিতিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন-কিষেণজির দশম মৃত্যু বার্ষিকীর আগে জঙ্গলমহলে বিশেষ সতর্কতা
প্রায় ৩৫০-৪০০ সশস্ত্র জনতা বুথের বাইরে জমায়েত করে৷ তাঁদের হাতে ছিল, লাঠি,লোহার রড, বন্দুক, বোমা৷ বুথ চত্ত্বরে ঢুকে পড়ে তারা বাহিনীকে আক্রমণ করে৷ আক্রমণ করা হয়, ভোটে কর্তব্যরত ভোট কর্মী, হোমগার্ড এবং আশাকর্মীদেরও৷ এরই মধ্যে সাব ইন্সপেক্টর গোবিন্দ দাস এবং তাঁর দল ঘটনাস্থলে পৌঁছয়৷ সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের উপর চড়াও হয় উত্তেজিত জনতা৷ ভিড়ের ভেতর থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং পুলিসের বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়৷ ভিড় হটাতে গোলমাল নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিস লাঠি চালায়৷ কিন্তু, পরিস্থিতি তাতে আরও ঘোরাল হয়ে ওঠে৷ ওই ৪০০ জনের দলবল আরও মারমুখী হয়ে ওঠে৷ রিপোর্টে বলা হয়েছে, কেউ কেউ সে সময় বুথের ভেতরেও ঢুকে পড়ে৷ বুথের ভেতর বোমা ছোড়া হয়৷ যার জেরে ভোটদাতাদের কেউ কেউ আহত হন৷ হাই কোর্টে জমা পড়া রিপোর্টে সিআইডি জানিয়েছে, এরপরই আত্মরক্ষার খাতিরে কেন্দ্রীয় বাহিনী জওয়ানরা ন’রাউন্ড গুলি চালায়৷ যার জেরে মৃত্যু হয়৷