পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমানের (Purba Bardwan) আউশগ্রাম জঙ্গলমহলের গোপালপুর উল্লাসপুর গ্রামে আট বছরে পড়ল এক অনন্য দুর্গোৎসব (Durga Puja 2025)। লেখক রাধামাধব মণ্ডলের উদ্যোগে শুরু হওয়া এই সর্বজনীন দুর্গাপুজো এখন রাজ্য জুড়েই বিশেষ পরিচিত। প্রতিবারই নতুনত্বে ভরা থাকে এই পুজো—কখনও শ্রমজীবী, কখনও কৃষক, কখনও বৃহন্নলা কিংবা সমাজের প্রান্তিক মানুষদের দেবী রূপে মণ্ডপে স্থান দিয়ে এসেছে এই উৎসব। গত বছর বিতর্ক হলেও, এ বছর আবার অভিনবত্বের ছোঁয়ায় এগোচ্ছে পুজো।
এবার গোপালপুর উল্লাসপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি পুজো করছে পাঁচ আদিবাসী শ্রমজীবী নারীকে সামনে রেখে। প্যান্ডেল ও মণ্ডপ সাজানো হচ্ছে “বাংলার বইগ্রাম” থিমে—যেখানে বইয়ের প্রচ্ছদে সাজানো হচ্ছে চারদিক। প্রতিমাতেও থাকছে অভিনব শিল্পের ছোঁয়া। গ্রামের মানুষ থেকে শুরু করে আগত দর্শনার্থীরা খুশি এই উদ্যোগে।
আরও পড়ুন:
গ্রামের ইতিহাসও কম আবেগঘন নয়। অজয় নদীর ধারে একসময় মন্বন্তরে ধ্বংস হওয়া এই গ্রামে বহুদিন কোনো পুজোই ছিল না। জমিদারদের পুজোতে দূরে বসে থাকা কিংবা প্রসাদ না পাওয়ার শৈশব স্মৃতিই লেখক রাধামাধব মণ্ডলকে অনুপ্রাণিত করেছে নিজের গ্রামে সর্বজনীন দুর্গোৎসব শুরু করতে। সেই আবেগ থেকেই শুরু হয়েছিল এই যাত্রা, যা আজ মহাসমারোহে অষ্টম বর্ষে পা দিল।
চতুর্থীর দিন রাজ্যের নানা অভিনেতা, সাহিত্যিক ও আমলা হাজির থাকবেন উদ্বোধনে। প্রতি বছরের মতো এবারও প্রকাশিত হবে সাহিত্যপত্রিকা ‘সহজ’, যেখানে কলম ধরবেন প্রথম সারির লেখকেরা। পুজো উপলক্ষে মহিলাদের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে পরিচালনা কমিটিতে—রাখী মণ্ডল, তুলিকা মণ্ডল, মিতালী কর্মকার, বন্দনা ঘোষ, টুম্পা মেটে ও সন্ধ্যা মেটে সকলে মিলে আয়োজনের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
পুজোর চারদিন জুড়ে চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গ্রামের মেয়েরা নাটক মঞ্চস্থ করবেন, সঙ্গে থাকবে লোকসংস্কৃতির নানা পরিবেশনা। তথ্যচিত্রে তুলে ধরা হবে আউশগ্রামের ঐতিহ্য এবং বাংলার গর্ব পাণ্ডুরাজার ঢিবি। এভাবেই এক প্রান্তিক গ্রামে দুর্গাপুজো হয়ে উঠেছে লোকসংস্কৃতি ও মানবিকতার এক বর্ণাঢ্য উৎসব।
দেখুন আরও পড়ুন: