বীরভূম: অনুব্রতর (Anubrata Mondal) অনুপস্থিতিতে নিজেকে কেষ্ট মন্ডল ভাবছে সিউড়ির তৃণমূল বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী। বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন সদ্য অপসারিত সিউড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান প্রণব কর (Suri Municipality Chairman Pranab Kar)। তিনি বলেন, সিউড়ি পুরসভা থেকে টাকা তুলে দিতে বলছিলেন। দুর্নীতি করতে বলছে সিউড়ির তৃণমূল বিধায়ক তথা বীরভূম জেলা কোর কমিটির আহবায়ক। আপস না করাই আমাকে চাপ দিয়ে পুরসভার চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করলেন। সেই কারণেই আমি চেয়ারম্যান এবং কাউন্সিলর পদ থেকে পদত্যাগ করেছি।
বিগত কয়েক মাস ধরেই কেষ্টহীন বীরভূম। এরমাঝেই ওই জেলায় তৃণমূলের অন্তর্কলহ প্রকট গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। সেই জল্পনাকে সত্যি করে সোমবার সিউড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করলেন প্রণব কর। পাশাপাশি ছাড়লেন ১৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদও। যদিও চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, শারীরিক ও পারিবারিক সমস্যার কারণেই এই সিদ্ধান্ত। পদত্যাগী চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা প্রণব করের বিস্ফোরক অভিযোগ করেন, সিউড়ির তৃণমূল বিধায়ক চাপ দিয়ে আমাকে পদত্যাগ করিয়েছেন। অনুব্রত অনুপস্থিতিতে সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায় চৌধুরী নিজেকে কেষ্ট মন্ডল ভাবছেন। সিউড়ি পুরসভা থেকে আমার কাছে কাটমানি চাইছেন। সেই কারণেই আমি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি। যা নিয়ে বীরভূম জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে চাঞ্চল্যকর পরিবেশ। তাহলে কি অনুব্রত ও তার ঘনিষ্ঠদের জেলা তৃণমূল থেকে মুছে ফেলতে চাইছে দল ? প্রশ্ন উঠছে একাধিক।
পদত্যাগী সিউড়ি পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রণব করের অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন বলছেন তৃণমূল বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, পুরসভা চালাতে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রণব বাবুর বিরুদ্ধে কাউন্সিলরদের বড় অংশ সরব হয়েছেন। তিনি পারিবারিক ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে পদত্যাগ করেছেন।
আরও পড়ুন: ২১ দিনের কন্যা সন্তান বিক্রির চেষ্টা, গ্রেফতার মা সহ ৬
বিষয়টা ঠিক কী? সিউড়ি পুরসভার ২১ জন কাউন্সিলরই তৃণমূলের। তার মধ্যে ১৩ জন মাস ছয়েক আগে অনাস্থা আনেন চেয়ারম্যান প্রণব করের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়। পরবর্তীতে কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করেন সাংসদ শতাব্দী রায় ও বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী। তারপর পঞ্চায়েত ভোটে নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন সকলেই। ভোট মিটতেই সোমবার সকালে মহকুমা শাসক অনিন্দ সরকারের কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিলেন প্রণব কর।
এই পদত্যাগ নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তুলেছে বীরভূমে তৃণমূলের অন্তর্কলহ নিয়ে। যদিও জেলা রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, জেলবন্দি অনুব্রত মণ্ডলকে বীরভূম জেলা তৃণমূল থেকে মুছে ফেলতে চাইছেন দল। সদ্য ত্রিস্তর গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে অনুব্রত মণ্ডল ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তৃণমূল নেতা আব্দুল করিম খান দলীয় টিকিট পায়নি। তার জায়গায় কেষ্ট বিরোধী হিসেবে পরিচিত কাজল শেখ বীরভূম জেলা পরিষদের তৃণমূল প্রার্থী হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষবার জেলা সফরে বীরভূম এসেছিলেন গত জানুয়ারি মাসে। সেই সময় বিধায়ক বিকাশ রায় চৌধুরী, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা, লাভপুরে তৃণমূল বিধায়ক অভিজিৎ সিনহা এদের ব্যানার, ফেস্টুন এ ছবি দেখা গেলেও কেষ্ট ব্রাত্য ছিল। খুব স্বাভাবিকভাবেই জেলার রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে শুধু কেষ্ট নয়, পাশাপাশি অনুব্রত অনুগামীদের ও জেলা তৃণমূল মুছে ফেলছে।