কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: দু-একটা ছবি। ভাইরাল। যে ছবিকে নিয়ে আগুপিছু সত্য অনুসন্ধান হয়নি। এক রাজনৈতিক দলের তরফে আরেক দলকে আক্রমণ করতে হাতিয়ার করা হয়েছে ছবিটা।
কোন ছবি?
ছবিটা গত দু-তিনদিন ধরে সংবাদ শিরোনামে থাকা অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের। কোনও ছবিতে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। আবার কোনও এক ছবিতে এক অনুষ্ঠান মঞ্চে। নেটমাধ্যমে এমনই ছবি ভাইরাল হয়েছে। যার পিছনে বিজেপি, আরও ভালো করে বললে শুভেন্দু অধিকারীর ভূমিকা। কেন শুভেন্দু? কারণ অর্পিতার ছবি টুইট করে শুভেন্দু দাবি করেছিলেন একুশের মঞ্চে রয়েছেন মডেল-অভিনেত্রী। দলের মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য সেই ‘মিথ্যাচার’ প্রমাণ করে দিয়েছেন। দেবাংশু টুইটে করেছেন আসল ছবিটা, যেটা কোনও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানই নয়, এক অরাজনৈতিক রক্তদাব শিবির।
এবার প্রসঙ্গ আরেকটি ছবির। যাতে দেখা গিয়েছে, মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাজগোজ করে ফটোশুট অর্পিতার। যে ছবি দেখিয়ে বিজেপি দাবি করেছে, অর্পিতার সঙ্গে পার্থর ঘনিষ্ঠতা। এখন প্রশ্ন, কোনও নেতা-মন্ত্রী সঙ্গে কারও ছবি ভাইরাল হলেই কী ঘনিষ্ঠতার তত্ত্ব সেঁটে দেওয়া যায়?
পার্থ-অর্পিতার মতো ভাইরাল হয়েছে আরেকটি ছবি। যে ছবিটি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের খনি দফতরের সচিব পূজা সিঙ্ঘলের। ছবিটি ভাইরাল হয়েছে আজ। রবিবার। ২৪ জুলাই, ২০২২। ছবিটি আসলে ৫ বছরের পুরনো। তখন পূজা আইএএস আধিকারিক। যে পূজা এখন সাসপেন্ডেড। ঘুষ নেওয়ার অপরাধে গ্রেফতার পর্যন্ত হয়েছেন। হাজার কয়েক টাকার ঘুষ নয়। কোটি কোটি টাকা ঘুষ।
কে এই পূজা? কী অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে?
ইডি সূত্রে খবর, ২০০০ ব্যাচের আইএএস ক্যাডার পূজার ১৫০ কোটি টাকার হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তির সন্ধান মিলেছে। ৬ মে পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব, ঝাড়খণ্ড, দিল্লি-সহ দেশের ১৮টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে পূজা, তাঁর স্বামী এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট সুমনের বাড়ি থেকে নগদ ১৯ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়। মে মাসে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সাসপেন্ডও হন।
পূজা এর আগে ডেপুটি কমিশনারের দায়িত্বও সামলেছেন। পূর্বতন বিজেপি সরকারের কৃষি সচিব হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। বিভিন্ন জেলায় জেলাশাসকের পদে থাকাকালীন পূজা এবং তাঁর স্বামী অভিষেকের অ্যাকাউন্টে বেতন ছাড়াও প্রায় ১ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা জমা পড়ে বলে দাবি ইডির।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অর্পিতার ছবি ভাইরাল করে বিজেপি একাধিক অভিযোগ তুলেছে। সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই পূজা-শাহের ছবি প্রসঙ্গ তুলেছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। কুণালের স্পষ্ট মন্তব্য, একজন জননেতার সঙ্গে হাজার মানুষের ছবি দেখা যেতেই পারে। অমিত শাহের সঙ্গে পূজার ছবি বহু পুরনো। এক অনুষ্ঠানের ছবি। পরে পূজা অপরাধী প্রমাণিত হয়েছে। চাকরি গিয়েছে। জেল খেটেছেন। আমরা তো একবারও শাহের সঙ্গে সেই ছবি নিয়ে ঘৃণ্য রাজনীতি করিনি। আসলে তৃণমূল কংগ্রেস গঠনমূলক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। এই দল দুর্নীতি প্রশ্রয় দেয় না।
মুখপাত্রের আরও মন্তব্য, “বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, তিনি আজকে বলেছেন, ওই টাকা তৃণমূলের! আজব কথা! আমরা দায়িত্ব নিয়ে বলছি, ওই টাকার সঙ্গে যদি তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। যাঁদের নাম আসছে, তাঁদের দায় ও দায়িত্ব এর জবাব দেওয়ার। তৃণমূল কংগ্রেস কাউকে কোনও অন্যায় কাজ করতে বলেনি।”
দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বাম আমলের প্রসঙ্গ তোলেন কুণাল। তিনি বলেন, “আইকোরের অনুকূল মাইতি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের গলায় যখন উত্তরীয় পরাচ্ছিলেন, আর মহম্মদ সেলিম যখন পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, সেই ছবি কী প্রমাণ করে? কুণালের প্রশ্ন, তার মানে বুদ্ধবাবু ও সেলিম আইকোর দ্বারা লালিতপালিত নাকি সিপিএম আইকোরের টাকায় লালিতপালিত?” কারও সঙ্গে ছবি দেখা মানেই তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত, এটা বলা যায় না। আদালতে দোষ প্রমাণিত হলেই তবেই তাঁর বিরুদ্ধে আঙুল তোলা উচিত, বক্তব্য তৃণমূল মুখপাত্রের।