দক্ষিণ দিনাজপুর: দক্ষিণ দিনাজপুরের পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম পতিরামের জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো। এই মুহূর্তে জমিদার বাড়ির মন্দিরে প্রতিমা গড়ার কাজে চরম ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। জন্মাষ্টমীর দিন থেকেই দুর্গা প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয়ে যায়। প্রায় আট পুরুষ আগে শুরু হয়েছিল ঘোষ বাড়ির দুর্গাপুজো। আজও পুরনো রীতিনীতি মেনে পুজোর আয়োজন করা হয়। তবে পুজোয় আগের সেই জৌলুস নেই। বর্তমানে জমিদার বাড়ির সদস্যরা দেশের একাধিক জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। বর্তমানে পতিরাম জমিদার বাড়িতে সাগর কুমার ঘোষ ও তাঁর স্ত্রী কল্পনা ঘোষ থাকেন। তবে পুজোর চারদিন পরিবারের সকলে জমিদার বাড়িতে একত্রিত হন। পুজো কেন্দ্র করেই হয় পরিবারের মিলন উৎসব।
বর্ধমান থেকে নদীপথে দিনাজপুরের পতিরামে এসে ব্যবসা শুরু করেন ঘোষ পরিবার। নৌকা ও বজরা নিয়ে এই অঞ্চল থেকে ধান ও পাটের রফতানি, আমদানির ব্যবসায় ফুলে ফেঁপে ওঠে তাঁদের পরিবার। ইংরেজির ১৮৯০ এর দশকে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে দিনাজপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জমিদারি অর্জন করে ঘোষ পরিবার। ১৯৩০ সালের পতিরামের বিশাল এলাকা নিয়ে বাড়ি তৈরি করেন ঘোষ পরিবারের সদস্যরা। যে বাড়ি আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে ইতিহাসকে সাক্ষী করে।
আরও পড়ুন: ঘাটালের পুজো কমিটিগুলির হাতে সরকারি অনুদানের চেক তুলে দিল পুলিশ প্রশাসন
জানা গিয়েছে, অতীতে এই পুজোতে মনসামঙ্গল গান, যাত্রাপালা সহ মহিষ, পাঁঠা, লাউ বলির প্রচলন থাকলেও সেই সব রীতি এখন তুলে দিয়েছেন জমিদার বাড়ির বর্তমান প্রজন্ম। তবে অতীতের রীতি মেনেই আজও নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো চলছে এই জমিদার বাড়ির বর্তমান গৃহকর্তা সাগর কুমার ঘোষের হাত ধরে। এই পুজোতে বিভিন্ন খ্যাত নামা স্বাধীনতা সংগ্রামীর আনাগোনা ছিল বলেও জানা গিয়েছে।
বহু বছর আগে দশমীর সকালে ছোট্ট নৌকা বানিয়ে সেটির পুজো করা হত। যেহেতু ঘোষ পরিবারের ব্যবসা ছিল নদীকেন্দ্রীক এবং আমদানি রফতানির। তাই সেই নৌকা মাথায় করে মূল বাড়িতে নিয়ে আসা হত। পরিবারের পক্ষ থেকে সারা বছর সেই নৌকা বাড়ির ঠাকুর ঘরে রাখা হত। কিন্তু সেইসব এখন আর হয় না। এখনও জেলার অন্যান্য পুজোতে অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি জেলাবাসী পতিরাম ঘোষ বাড়ির পুজোতে একবার হলেও মায়ের দর্শন করতে আসেন।
দেখুন অন্য খবর