কোয়েল মন্ডল, দক্ষিণ ২৪ পরগনা- বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের (Low Pressure Bay Of Bengal) চোখ রাঙানি। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে প্রবল দুর্যোগ। সুন্দরবনের উপকূলে জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতা (Tide Warning) । পাথরপ্রতিমায় বাঁধ উপচে নদী ও সমুদ্রের জল ঢুকেছে লোকালয়ে। আতঙ্কের প্রহর গুনছে নদী পাড়ের বাসিন্দারা। দুর্যোগ (Disaster) মোকাবিলায় তৎপর- প্রশাসন।
উত্তর এবং পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের ওড়িশা উপকূলের কাছে নিম্নচাপ এলাকার সৃষ্টি। আগামী দু’দিনে এই নিম্নচাপ আরও শক্তি বাড়িয়ে সুস্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হবে। যার প্রভাবে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস। জেলার উপকূলীয় এলাকায় চরম বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
জেলার সুন্দরবন উপকূলে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে। একদিকে নিম্নচাপ অন্যদিকে অমাবস্যার ভরা কোটালের জোড়া ফলায় কার্যত প্রকৃতি যেন রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলীয় এলাকায়।
জেলা জুড়ে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পাশাপাশি উপকূলে বইছে ঝড়ো হাওয়া। নদী এবং সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠেছে।
জলস্তর যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যেই জেলার পাথরপ্রতিমার দূর্বাচটি পঞ্চায়েত এলাকার ব্যানার্জি ঘেরিতে সপ্তমুখী নদীর বাঁধ উপচে নোনা জল ঢুকেছে লোকালয়ে। প্লাবিত হয়েছে বিঘের পর বিঘে চাষের জমি ও মাছের ভেড়ি।
অন্যদিকে নামখানার ফ্রেজরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নান্দাভাঙ্গা, মৌশুনির সল্টঘেরি, পাথরপ্রতিমার গোবর্ধনপুর সহ গঙ্গাসাগরের একাধিক জায়গায় বাঁধের বেহাল অবস্থা। যে কোন মুহূর্তে এই সকল বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকায় প্লাবনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে রাতের ঘুম উড়েছে উপকূলের বাসিন্দাদের।
তবে দুর্যোগ মোকাবেলায় তাৎপর রয়েছে প্রশাসন। জেলা স্তর, মহকুমা স্তর ও ব্লক স্তরে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
ফ্রেজারগঞ্জ, নামখানা, কাকদ্বীপ, সাগরে পুলিশ এবং সিভিলডিফেন্সের তরফে জলপথে এবং স্থলপথে চলছে মাইক প্রচার। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় একাধিক দুর্বল বাঁধ মেরামতের কাজও শুরু করেছে সেচ দফতর।
প্রবল বর্ষণের পাশাপাশি সুন্দরবনের উপকূলে জলোচ্ছ্বাসের সর্তকতা থাকার কারণে উপকূলের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। বকখালি এবং গঙ্গাসাগর সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের নামতে দেওয়া হচ্ছে না। ব্লক অফিস এবং পঞ্চায়েত অফিস গুলিতে মজুদ করা হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ সামগ্রী।
প্রস্তুত রাখা হয়েছে বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলিকে। বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে আগামীকাল থেকে জেলা জুড়ে দুর্যোগ পরিস্থিতি চরম আকার নিতে চলেছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় দফায় দফায় বৈঠক করছে জেলা প্রশাসন।
উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের ওড়িশা উপকূলের কাছে সুস্পষ্ট নিম্নচাপের অবস্থান।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় এটি শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। প্রাথমিকভাবে এটি উত্তর অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছে ধীর গতিতে। দক্ষিণবঙ্গে বুধবার ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা উপকূলের জেলায়। উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। বাকি সব জেলাতে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা ঝড় বাতাস বইবে। বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দশ জেলাতে।
উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর ঝাড়গ্রাম কলকাতা হাওড়া হুগলি বাঁকুড়া ও পশ্চিম বর্ধমান জেলাতে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা। বাকি সব জেলাতে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা ঝড় বাতাস বইবে। উত্তরবঙ্গে বুধবার সতর্কতা না থাকলেও বজ্রবিদ্যুৎসহ হালকা মাঝারি বৃষ্টি বিক্ষিপ্তভাবে দু-এক জায়গায় হতে পারে। বৃহস্পতিবার থেকে ফের সর্তকতা ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির। প্রবল বৃষ্টি হতে পারে উত্তর দিনাজপুর ও কোচবিহারের দু এক জায়গায়। বিক্ষিপ্তভাবে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা। দার্জিলিং থেকে মালদা সব জেলাতেই ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি।
দেখুন আরও খবর-