নদীয়া: বাবা দিনমজুর, ছোট থেকেই দারিদ্রতা কে সঙ্গে নিয়েই পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন তেহট্টের আশরাফপুরের যুবক সাকিরুল সেখ (Sakirul Sekh)। সম্প্রতি সাকিরুল সর্বভারতীয় নেট পরীক্ষায় (NET Exam) সারা দেশে ১৭ র্যাঙ্ক করে সকলকে চমকে দিয়েছেন। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোট থেকেই মেধাবী সাকিরুল। বাবা সমীর শেখ দিনমজুর। এলাকার একটি হাটে গাড়িতে কলা তোলার কাজ করেন। বাকি সময় অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করেন। নিজে মাধ্যমিকের গণ্ডি না পেরোলেও ছেলের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখে পিচুপা হননি তিনি। সংসারে অভাব থাকলেও ছেলেকে তা বুঝতে দেননি। কষ্ট করে জুগিয়েছেন ছেলের পড়াশোনার খরচ। আশা ছিল একদিন সফল হবেই, অবশেষে সাফল্য এল। ছেলের নেট পরীক্ষার ফল প্রকাশ হতেই খুশি সমীর বাবু। তিনি জানিয়েছেন গবেষণা করে শুধু আমাদের জন্য নয় দেশের জন্য কাজ করুক ছেলে।
তেহট্টের শ্যামনগর সিদ্ধেশ্বরী ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে ভর্তি হন সাকিরুল। সেখানে কেমিস্ট্রিতে ৮৫ শতাংশ নাম্বার পেয়ে বিএসসি পাশ করেন। এরপর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি শেষ করেই নেটের প্রস্তুতি, প্রথমবারেই সাফল্য পেলেন। তার এই সাফল্যে গর্বিত এলাকাবাসী। সাকিরুলের এই সাফল্যের পথ সহজ ছিল না। অভাবের সংসারে একদিকে কলার হাটে কাজ অপরদিকে অন্যের জমিতে দিনমজুরি করে পড়াশোনার খরচ বহন করেছে বাবা। সরকারি যোজনায় পাওয়া ঘর ও ইলেকট্রিকের আলো এলেও একটি ছোট্ট ঘরেই দিন কাটে গোটা পরিবারের। তবে দুঃসময়ে পাশে পেয়েছেন বিভিন্ন সমাজসেবী ও শিক্ষকদের। ছেলের পরিশ্রমের ফলে স্বপ্নপূরণ হয়েছে, ছেলে যেন একটা ভালো কাজ পায় এমনই জানান সাকিরুলের মা বেদানা বিবি। ছেলের এই সাফল্যে সুখের আশায় বুক বেঁধেছেন পরিবার।
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব-৯)
সাকিরুলের কথায় পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ থাকলেও এতদূর পৌঁছাবে সেটা ভাবতেই পারেনি। ছোট থেকে ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করে একটা সরকারী চাকরি করে পরিবারের পাশে দাঁড়াবে। তবে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর কেমিস্ট্রি নিয়ে বিএসসি এরপর এমএসসি শেষ করে নেট পরীক্ষা। সেখানে তার এই অসাধারণ সাফল্য। বর্তমানে গবেষণা করতে চান তিনি। একসময় সাধারণ সরকারি চাকরি করে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে থাকলেও এখন পরিবারের পাশাপাশি গবেষণা করে দেশের হয়েও কাজ করতে চান সাকিরুল।
আরও খবর দেখুন