রাতুল বন্দ্যোপাধ্যায়: বাইক বাহিনীর তাণ্ডবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন অশোকনগরের বাসিন্দারা। স্থানীয়দের অভিযোগ, সন্ধ্যা নামলেই শহরের তিন নম্বর চত্বরে বাইক বাহিনীর দাপাদাপি শুরু হয়ে যায়। আর বাইকের পিছনে সঙ্গিনী থাকলে তো কথাই নেই। তখন বীরপুঙ্গবদের বাইকের গতি আরও বেড়ে যায়। গত কয়েক মাসে বেপরোয়া বাইকের বলি হয়েছেন বেশ কয়েকজন। গত সোমবার রাতেই বাইকের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন পঙ্কজ পোদ্দার নামে এক প্রৌঢ়। তিনি অশোকনগর স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পঙ্কজ ওইদিন রাতে গল্প করছিলেন। আচমকা একটি দ্রুত গতির বাইক এসে তাঁকে ধাক্কা মারে। প্রথমে অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। পরে অবস্থার অবনতি হলে বারাসত হাসপাতালে এবং পরে তাঁকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই তিনি মারা যান। এই ঘটনার পরই স্থানীয়রা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন। অবিলম্বে বাইক বাহিনীর তাণ্ডব বন্ধ না হলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন।
তবে সোমবারের ঘটনার পর পুলিশ নাকা চেকিং শুরু করেছে। তা কত দিন চলবে,তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, এর আগেও পুলিশ একাধিকবার নাকা চেকিং চালু করেছিল। কিন্তু দুতিন দিন পরই সেসব পাট উঠে যায়। সব মিলিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ তুঙ্গে উঠেছে।
আরও পড়ুন: ধাক্কা নয়, গাল টিপে আদর করেছেন বললেন সাংসদ সুনীল
প্রবীণ বাসিন্দাদের মতে, নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের হাতে দু-চাকার যান যেন মানুষ মারার কল হয়ে উঠেছে। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েও আজ অশোকনগরে নিরাপদ নয় সাধারণ মানুষ। তাঁরা জানান, সন্ধ্যা নামলেই অশোকনগরের রাস্তায় বাইক বাহিনীর দাপাদাপি শুরু হয়। এলাকার বাইরের যুবকরাও বাইক নিয়ে চলে আসে। বিকট শব্দে বাইক চালানো ওই যুবকদের নেশা হয়ে উঠেছে। স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, কখনও কখনও পুলিশ বাইক চালকদের ধরলেও আবার তাদের ছাড়ানোর জন্য রাজনৈতিক চাপ আসে পুলিশের উপর। তাই পুলিশও গা ছাড়া মনোভাব দেখায়।
অশোকনগর চৌরঙ্গি মোড় থেকে অশোকনগর স্টেডিয়াম সংলগ্ন নিউমার্কেট চত্বর পর্যন্ত রাস্তার ধারে গজিয়ে উঠেছে বিভিন্ন ক্যাফে। সেই সব ক্যাফেতেই অশোকনগর ছাড়াও হাবড়া, গুমা, দত্তপুকুর সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্ধ্যায় যুবক যুবতীদের ভিড় শুরু হয়। সব ক্যাফের সামনেই চোখে পড়ে বাইকের লম্বা লাইন। স্থানীয়রা জানান, অনেক সময় পিছনে সঙ্গিনী নিয়ে যুবকরা বাইকের প্রতিযোগিতায় নামে। তার সঙ্গে রয়েছে নেশার উপদ্রব। এই বাইক বাহিনীর ভয়ে সন্ধ্যায় রাস্তায় সাধারণ মানুষ বেরতে ভয় পান। ছোটদের টিউশনে পাঠাতেও ভয় পান অভিভাবকরা। বারাসত জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, বিষয়টি আমাদের গোচরে এসেছে। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি দ্রুত।