এ-যেন মধুরেণ সমাপয়েৎ ৷
এ-যেন ছয় বছর পর পূর্ণতা পেলে ঝালমুড়ি রাজনীতির ৷
সে দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঝালমুড়ি ভাগ করে খেয়ে বিজেপির অন্দরেই বিতর্কের ঝাঁঝের মুখে পড়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয় । অভিনেত্রী-নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় প্রথম তাঁকে কটাক্ষ করেছিলেন । পরে বিজেপির তৎকালীন কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ এবং দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও বাবুলের ‘ঝালমুড়ি কূটনীতি’র বিরোধিতা করেন । দলের অন্যান্য নেতা এবং কর্মীদের একাংশের মধ্যেও তখন বাবুল সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছিল । পরিস্থিতি তখন এমনই হয়ে ওঠে যে, এক দিন দলের রাজ্য দফতরে কোর কমিটির বৈঠকে দলীয় সহকর্মীদের ঝালমুড়ি খাইয়ে এবং গান গেয়ে সেই বিতর্ক লঘু করার চেষ্টা করেছিলেন সুপ্রিয় বড়াল ওরফে বাবুল সুপ্রিয় ।
সেই ঝালমুড়ির রেশ কাটতে না কাটতেই খবরের শিরোনামে আসে চা-কুকিজ ৷ সে-বার নেদারল্যান্ডস সফরে যাওয়ার পথে দমদম বিমানবন্দরে ফের দেখা হয় মমতা-বাবুলের । বিমানবন্দরে ঢোকার মুখে ভিআইপি লাউঞ্জে গিয়ে আচমকা দেখা হয়ে যায় দু’জনের ৷ মমতাকে দেখে বাবুলই প্রথম এগিয়ে যান ৷ মুম্বইয়ের বিমান ধরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি ৷ মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে পেয়ে বাবুল একগাল হেসে বলেন, কী দিদি, আমাকে না-খাইয়েই চলে যাবেন ? বাবুলের আবদার শুনে দিদিও হেসে ফেলেন ৷ এর পর বাবুলকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিমানবন্দরের একটি রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়েন ৷ সেখানেই চা-কুকিজ খাওয়ান বাবুলকে ৷
আবার অতি সম্প্রতি মোদি মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের সময় মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয় ৷ তখন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও শোনা গিয়েছিল বাবুলের সম্পর্কে সহানুভূতির সুর ৷ আক্ষেপ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “আজ বাবুল সুপ্রিয় খারাপ হয়ে গিয়েছে ।”
তবে এর সম্পূর্ণ বিপরীত ছবিও দেখা গিয়েছে । মমতাকে সরাসরি আক্রমণ করতেও দেখা গিয়েছে বাবুলকে । আবার বাবুলের মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন মমতা । নেতাজি জয়ন্তীতে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের চত্বরে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি শুনে মমতা ক্রুদ্ধ হওয়ার পরেও কড়া কটাক্ষ করেছিলেন বাবুল । নেটমাধ্যমে ‘টিএমসি’ (তৃণমূল)-কে নিয়মিত ‘টিএমছিঃ’ বলেও কটাক্ষ করতেও এক সময় দেখা গিয়েছিল বাবুলকে । এ ভাবেই বাবুলের সঙ্গে মমতার সম্পর্কের ‘অম্লমধুর’ রসায়ন বার বার প্রকাশ্যে এসেছে । রাজনৈতিক ভাবে মতভেদ থাকলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাবুল সুপ্রিয়র ব্যক্তিগত সম্পর্কে অবশ্য কোনও দিনই ভাটা পড়েনি ৷ মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে কলকাতার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের উদ্বোধনে উপস্থিত থেকেছেন ৷ আবার কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ দ্রুত শেষ করার ব্যাপারে সব রকম সাহায্য করেছেন রাজ্যকে ৷
বিধানসভা ভোটের পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার বাবুলের ভূমিকার বেশ পরিবর্তন চোখে পড়ছিল ৷ এমনিতে নেটমাধ্যমে যথেষ্ট সপ্রতিভ এবং নিয়মিত আসানসোলের এই সাংসদ ৷ কিন্তু, বিধানসভা ভোটে পরাজয়ের পর খানিকটা চুপচাপই ছিলেন তিনি । ফুটবল অন্তঃপ্রাণ এই গায়ক ইউরো কাপ এবং কোপা আমেরিকা নিয়ে নিয়মিত পোস্ট করতেন । মাঝে একবার বিধানসভা ভোটের বিপর্যয় নিয়েও নেটাগরিকদের একাংশের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি । কিন্তু, সরাসরি তৃণমূল বিরোধী কিছু লিখতে দেখা যায়নি তাঁকে ৷
বাবুল সুপ্রিয় মানেই যেন একটা চমক ৷ শহরতলির সুপ্রিয় বড়াল মুম্বইয়ের গায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন ছোট্টবেলায় ৷ একদিন হঠাৎ সেই স্বপ্নকে সার্থক করতে ট্রেনে চেপে পড়েন ৷ তারপর ফিল্মি দুনিয়ায় শুরু হয় সুপ্রিয় বড়ালের স্বপ্ন-সফর ৷ জনপ্রিয়তায় ভর করে সেই সুপ্রিয় বড়াল হয়ে ওঠেন বাবুল সুপ্রিয় ৷ হৃত্বিক রোশন, আমিশা প্যাটেলকে সামনে রেখে তাঁর ‘কহো না পেয়ার হ্যায়’ গান আজও তরুণ তরণীর হৃদয়ে ঢেউ তোলে ৷ এহেন বাবুল সুপ্রিয় রাজনীতিতে আসার জন্য নাম লিখিয়ে ফেলেন ৷ সরাসরি বিজেপির পতাকায় সাংসদ হন, মন্ত্রীও হন ৷ যোগগুরু রামদেবকে পাশে বসিয়ে বিমান থেকে উড়ন্ত চুম্বন ছুঁড়ে রাজনীতিতে তাঁর ভালবাসা জাহিরও করেন ৷ এবার সেই প্রেমের দ্বিতীয় পর্ব শুরু করলেন বাবুল সুপ্রিয় ৷
মাস দেড়েক আগে লিখেছিলেন,
হ্যাঁ, কিছু কথা বাকি রয়ে গেলো..
হয়তো কখনো বলবো..
আজ নাই বা বললাম…
সত্যি! এমন কিছু বলবেন একটি বারের জন্যও আঁচ করতে পারেননি বিজেপি নেতারা ৷