কলকাতা: আজ রথযাত্রা। রথের দিন আর বৃষ্টি হবে না তা কী হয়। সকাল থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে শহর থেকে জেলায়। আর সেই বৃষ্টি মাথায় করেই পুরী থেকে দিঘায় ভক্তদের ভিড়। শুধু তাই নয়, জেলায় বেশ কিছু রথযাত্রাও বেশ খ্যাত।
দিঘায় চলতি বছর অক্ষয় তৃতীয়ার দিন মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মন্দিরের শুভ উদ্বোধন করেন। রথযাত্রার দুদিন আগেই দিঘায় পৌঁছে যান তিনি।রথযাত্রার সুরক্ষা সম্পর্কিত সমস্ত প্রস্তুতির বিষয় নিয়ে উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিক থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। জানানও হয়েছে, ফাঁকা রাস্তায় টানা হবে রথ। রাস্তার দুপাশে ব্যারিকেডে থাকবে রথের রশি। ভক্তরা ছুঁতে পারবেন রথের রশি। সকাল ৯ থেকে শুরু হয়েছে উপাচার। দুপুর ২টোয় আরতি। যাত্রা শুরু ২ টো ৩০ মিনিটে। পৌনে এক কিলোমিটার পেড়িয়ে জগন্নাথ যাবে মাসির বাড়ি।দিঘায় রথযাত্রার একদম সামনের রথে থাকছে বলভদ্রের রথ তালধ্বজ। এই রথটির উচ্চতা ২৯ ফুট। সবুজ এবং লাল রঙে চিত্রায়িত করা হয়েছে। রথের সামনে রয়েছে চারটি কালো রঙের প্রতীকী ঘোড়া। রথযাত্রায় ঠিক মাঝখানে থাকছে সুভদ্রার রথ দর্পদলন। রথের উচ্চতা ২৮ ফুট। রথের সামনে রয়েছে কমলা রঙের চারটি প্রতীকী ঘোড়া। রথযাত্রার একেবারে শেষে থাকছে জগন্নাথ দেবের রথ নন্দীঘোষ। লাল এবং হলুদ রঙে সেজেছে এই রথ। ৩০ ফুট লম্বা এবং ২২ ফুট চওড়া। রথের চারদিকে নয়জন পার্শ্ব দেবতার ছবি রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন : আসছে ঐতিহাসিক মুহূর্ত, দিঘায় গড়াবে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার রথের চাকা
সেজে উঠেছে পুরী। রথযাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানান রীতিনীতি। প্রথমে ১০৮টি পাত্রের পবিত্র জল দিয়ে দেবতাদের স্নান করানো হয়। তারপর রথ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এতে পুরোহিতরা বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করে নতুন রথগুলিকে পবিত্র করেন। রথযাত্রা এই উৎসবের সবচেয়ে বিশেষ অংশ যেখানে হাজার হাজার ভক্ত ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রার রথ গুন্ডিচা মন্দিরে টেনে নিয়ে যান। দেবতারা সেখানে নয় দিন অবস্থান করেন। ওড়িশা পুলিশ জানিয়েছে যে প্রায় ১৫ লক্ষ ভক্তের ভিড় সামাল দেওয়ার দেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ক্যামেরা এবং ড্রোন নজরদারি। শহরের নির্দিষ্ট স্থানে সাব-কন্ট্রোল রুমও স্থাপন করা হয়েছে।
শুধু দিঘা বা পুরী নয়, জেলার নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে বহু খ্যাত রথযাত্রার ছবি। সেরকমই প্রাচীন মল্লভুমে রথ উৎসব ঘিরে জড়িয়ে রয়েছে নানান ইতিহাস। আজও সেই ইতিহাসের সাক্ষী হিসাবে সাড়ম্বরে পালিত হলো মল্ল রাজাদের প্রাচীন রথ উৎসব। প্রাচীন রীতি মেনেই মল্লগড় বিষ্ণুপুরে ৩৫০ বছরের বেশী প্রাচীন রথের রশিতে টান দিলেন অগনিত ভক্ত। রথে সওয়ার হলেন ঠাকুর রাধা মদন গোপাল জিউ। আজ রাজা নেই কিন্তু রাজাদের অস্তিত্ব আজও টিকে রয়েছে মল্লগড়ের মাটিতে। আর সেই প্রাচীন ইতিহাস কে বাঁচিয়ে রেখে রথ উৎসব কে পালন করে চলেছেন মাধবগঞ্জের উৎসব কমিটি।
পুরী, মাহেশের পরেই মহিষাদলের রথের নাম শোনা যায়। ভারতে একমাত্র কাঠের রথ হল মহিষাদলের প্রাচীন এই রথ। মহিষাদলের রথ মদনগোপাল জিউ-র রথ নামে খ্যাত।মদনগোপল জিউর সঙ্গে থাকেন জগন্নাথ ও রাজবাড়ির শালগ্রাম শিলা শ্রীধর জিউ। আগে সতেরো চূড়া রথ ছিল। এখন তেরো চূড়া রথ হয়েছে। তেরো চূড়া রথের ঢাকার উচ্চতা ৪ ফুট। বেধ ৮ ইঞ্চি ও পরিধি ১২ ফুট। লোহার পাত দিয়ে মোড়া মোট ৩৪টি চাকা আছে। রথের উচ্চতা প্রায় ৫৫ ফুট। তবে কলস ও ধ্বজা দিয়ে সাজানো হলে উচ্চতা ৭০ ফুটের বেশি হয়ে যায়।
রথযাত্রা ঘিরে মেতে উঠলেন শিল্পাঞ্চলের মানুষ। শিল্পাঞ্চলের বেশ কয়েকটি বনেদি রথযাত্রাকে ঘিরে এ বারেও উৎসাহ উদ্দীপনার খামতি নেই।যেমন কয়লাঞ্চল শহর রানিগঞ্জের সিয়ারশোল রাজবাড়ীর রথ। শুক্রবার সকালে সিয়ারসোলের মালিয়া পরিবার কূল দেবতা দামোদর চন্দ্র জিউয়ের পুজো করে রথে চাপানো হল। তারপর নতুন রাজবাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয় পুরানো রাজবাড়িতে। রথটি অনেক পুরানো ও ভারী। আগে উৎকল সমাজের শ্রমিকরা রথ টানতেন। এখন বড় লরি দিয়ে রথ টানা হয়। এই উপলক্ষ্যে প্রাচীন রথের মেলাও শুরু হল এদিন থেকে।
দেখুন ভিডিও