বসিরহাট: বর্ষায় নদীর বাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছেন সুন্দরবনের (Sundarbans ) মানুষ। সুন্দরবনের বুকে বন্যা নতুন নয়। প্রতি বছরের মতো এবছরও বর্ষাকালে বাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে নদী পাড়ের বসবাসকারী মানুষেরা। জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ, বন্যা এসব নিয়েই বাঁচতে হয় সুন্দরবনবাসীকে। বসিরহাটের সুন্দরবনের মিনাখাঁ, হাসনাবাদ, সন্দেশখালি ১ ও ২নং ব্লক, হিঙ্গলগঞ্জ ও হাড়োয়ার মতো ৬টি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ বর্ষা বাড়তেই নতুন করে দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ছেন। কারণ সেই দুর্বল নদী বাঁধ।
সুন্দরবনের সাহেবখালি, যোগেশগঞ্জ, রমাপুর, মামুদপুর ও ধামাখালি সহ সুন্দরবনের প্রচুর গ্রামে প্রতিবছর কখনও বাঁধ উপচে, কখনও বাঁধ ভেঙে বা বাঁধে ফাটল ধরে নদীর জল ঢুকে যায়। যার ফলে ক্ষতি হয় একদিকে যেমন চাষের। পাশাপাশি প্রচন্ড ক্ষতির মুখে পড়ে মিষ্টি জলের পুকুরের চাষ হওয়া মাছগুলি। বঙ্গোপসাগরে নতুন করে তৈরি হয়েছে ঘূর্ণাবর্ত। যার জেরে দক্ষিণবঙ্গের উপকূলীয় এলাকায় চলছে নাগাড়ে বৃষ্টি। সঙ্গে চলছে ঝোড়ো হাওয়া। আর যার ফলেই বসিরহাটের কাঁচা বাঁধগুলি বৃষ্টির জলে ধুয়ে নদীর সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। যার ফলে গ্রামের মধ্যে ঢুকছে প্রচুর জল। ডুবে যায় বাড়ি, চাষের জমিও, তার ফলেই সমস্যার মধ্যে পড়েন সুন্দরবনের মানুষ। চোখের সামনেই নিজেদের সর্বনাশ দেখছেন ওঁরা।
আরও পড়ুন: হেদুয়ায় ভাঙল বিপজ্জনক বাড়ির একাংশ
গ্রামবাসীদের একাংশ মতে, বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ম্যানগ্রোভের মাটি চুরি করছেন। জমি চুরি করছেন। জেসিবি দিয়ে মাটি কেটে সেই জায়গায় মাছের ভেড়ি তৈরি করা হচ্ছে। ধুয়ে মুছে সাফ করে দেওয়া হচ্ছে জঙ্গল। নষ্ট হচ্ছে জমির ধারণ ক্ষমতাও। যার ফল ভোগ করছে সাধারণ মানুষ।
বসিরহাট সেচ দফতরের আধিকারিক রানা চট্টোপাধ্যায় বলেন, বসিরহাট জুড়ে বাঁধ রয়েছে মোট ৭৫০ কিলোমিটার। তার মধ্যে মাত্র তিন থেকে চার শতাংশ বাঁধ পাকা। অর্থাৎ মাত্র ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বাঁধ পাকা রয়েছে। বাকি পুরো বাঁধ এলাকা কাঁচা। বৃষ্টির জলে সেগুলো ধুয়ে নদীর সঙ্গে মিশে যাওয়া সমস্যা বাড়ে। তাই বেশ কিছু এলাকায় ইতিমধ্যে বাঁধের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। যদিও দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কখনও সিমেন্ট বা বালির বস্তা আবার কখনও বাঁশের পাইলিং দিয়ে বাঁধের কাজ হয়। যা এই প্রবল ঝোড়ো হওয়াকে সামলাতে পারে না। তার ফলে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে সুন্দরবনের রায়মঙ্গল, বিদ্যাধর, ইছামতি ও কলাগাছি সহ একাধিক নদী। যা মোটামুটি সুন্দরবনের মানুষের দুশ্চিন্তা বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট।