কলকাতা: সোমবার তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দলের শীর্ষ নেতারা মেতে রইলেন বাগযুদ্ধে। সেই যুদ্ধে শামিল ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি (Subrata Bakshi) থেকে শুরু করে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim), প্রবীণ সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় (Sudip Bandyopadhyay), দলের রাজ্য মুখপাত্র তথা সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) প্রমুখ। সেই বাগযুদ্ধের মধ্যেই সন্ধ্যায় কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) বাড়ি গেলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তিনি কালীঘাট ছাড়তেই নেত্রীর বাড়িতে ঢোকেন কলকাতার মেয়র এবং পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সূত্রের খবর, নেতাদের এই তরজায় মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। নেতাদের চাপানউতোরে দলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকরাও বিভ্রান্ত। অনেক নেতাই আবার নিজেদের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে বলাবলি করছেন, প্রতিষ্ঠা দিবসে শীর্ষ নেতারা এরকম কাদা ছোড়াছুড়ি না করলেই ভালো করতেন।
মাস দেড়েক আগে খোদ অভিষেকই দলের মধ্যে নবীণ-প্রবীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে বিতর্কের সূচনা করেছিলেন। পরে তাঁর হয়ে ব্যাট ধরতে নামেন রাজ্য মুখপাত্র কুণাল। তিনিও বলেন, নতুন প্রজন্মকে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রবীণ বলেই সাত খুন মাপ হতে পারে না। তারও পরে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলীয় সভায় মমতা প্রবীণদের পক্ষ নেন। তিনি প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়ের নাম করে বলেন, সৌগতদা প্রায়ই বলেন, অনেক বয়স হয়েছে। আর ভোটে দাঁড়াব না। আমি বলি, বয়স কোনও ব্যাপার নয়। আসল হল মন। পরবর্তীকালে কুণাল এই বিতর্ক চালিয়ে যেতে থাকেন। এদিকে সম্প্রতি অভিষেককে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে খুব একটা দেখা যাচ্ছিল না। ঘনিষ্ঠদের অভিষেক জানান, তিনি নিজের লোকসভা কেন্দ্র নিয়েই থাকতে চান। মাসখানেক ধরে অভিষেককে দল নিয়ে কোনও কথাও বলতে দেখা যাচ্ছিল না। দিনকয়েক আগে তিনি বিদেশ থেকে ফেরেন। শনিবার তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতা অভিষেকের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। বৈঠক থেকে বেরিয়ে সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, আমরা অভিষেককে লোকসভা ভোটের মুখে আরও সক্রিয় হতে বলেছি।
আরও পড়ুন: প্রতিষ্ঠা দিবসে সুব্রতকে তীব্র আক্রমণ কুণালের
সোমবার ছিল দলের ২৭ তম প্রতিষ্ঠা দিবস। সকালে মমতা এবং অভিষেক সোশ্যাল মিডিয়ায় দলীয় কর্মীদের শুভেচ্ছা জানান এবং আগামী লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে বলেন। পরে প্রতিষ্ঠা দিবসের এক সভায় দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি বলেন, অভিষেক লড়াই থেকে পিছিয়ে আসবেন না বলেই আমার ধারণা। যদি তিনি লড়াইয়ের ময়দানে থাকেন, তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখেই লড়বেন। দলীয় সভাপতির এই বক্তব্যের পরই তেড়েফুঁড়ে ওঠেন রাজ্য মুখপাত্র কুণাল। তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের পিছিয়ে পড়া শব্দ নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে। তাঁকে এটা প্রত্যাহার করতে হবে। অভিষেকের পিছিয়ে পড়ার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে। তিনি সুব্রতকে থার্ড পার্সন সিঙ্গল নাম্বার বলেও কটাক্ষ করেন। শুধু তাই নয়, আরও বাছা বাছা শব্দবাণে বেঁধেন দলীয় সভাপতিকে। আবার দলের এক সভায় কলকাতার মেয়র বলেন, মমতাই আমাদের মুখ্যমন্ত্রী, আমাদের নেত্রী। কিছু মানুষ দলের মধ্যে বিভেদ ঘটাতে চাইছে। তৃণমূলের কোনও সমস্যা নেই। বিকেলে উত্তর কলকাতায় প্রতিষ্ঠা দিবসের এক সভায় তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মমতা না থাকলে সারা দেশের রাজনীতিতে তৃণমূল ছাগলের তৃতীয় সন্তান হয়ে থাকত। ওই মঞ্চেই পরে কুণাল বলেন, সুদীপদা এই কথা না বললেই পারতেন। উনি থাকলে বুঝিয়ে দিতাম, ছাগলের তৃতীয় সন্তান কাকে বলে।
সব মিলিয়ে সোমবার প্রতিষ্ঠা দিবসে তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা দিনভর ব্যস্ত রইলেন কলতলার ঝগড়ায়। দিনের শেষে নেত্রীর সঙ্গে একান্তে কথা হল অভিষেকের। তবে নেতাদের এই চাপানউতোর নিয়ে দুজনের মধ্যে কোনও আলোচনা হয়েছে কি না, তা জানা যায়নি।
আরও খবর দেখুন