কলকাতা: আগামী শুক্রবার পাটনায় বসছে বিজেপি বিরোধী দলগুলির মেগা বৈঠক। তার ঠিক এক সপ্তাহ আগে শুক্রবার পাটনাতে বসে এই মেগা বৈঠকের অন্যতম উদ্যোক্তা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার দাবি করলেন, বিরোধী ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া গতি পাচ্ছে। ওই বৈঠককে ভয় পেয়ে বিজেপি আগামী বছর সাধারণ নির্বাচন এগিয়ে আনতে পারে। নীতীশ কুমার যখন পাটনায় এই দাবি করছেন, তখনই বাংলার সাগরপারে কাকদ্বীপে তৃণমূল নেত্রী কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন কংগ্রেসকে। শতাব্দী প্রাচীন এই দলকে বিজেপির বড় দোসর বলেও কটাক্ষ করলেন তিনি। পাটনা বৈঠকের এক সপ্তাহ আগে কংগ্রেসের প্রতি মমতার এই উষ্মা দুই দলের পারস্পরিক বোঝাপড়ায় চিড় ধরবে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।
এর আগে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব অভিযোগ করেছিলেন, আম আদমি পার্টি এবং তৃণমূল বিজেপির সুবিধা করার পথ নিয়ে চলছে। খোদ রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেন, কংগ্রেসের ভোট কাটার জন্য তৃণমূল এবং আপ গোয়া-সহ বিভিন্ন রাজ্যে প্রার্থী দিয়েছিল। বাংলার সাগরদিঘির উপ নির্বাচনে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাসের জয়ের পর মমতা জানিয়েছিলেন, তৃণমূল লোকসভা ভোটে একাই লড়বে। তারপর তিন মাস যেতে না যেতেই বিধানসভায় কংগ্রেসের একমাত্র প্রার্থী বায়রন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন। তাতে বেজায় চটে যায় রাজ্য কংগ্রেস। তার ঢেউ লাগে দিল্লিতেও। কংগ্রেসের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ টুইট করে তৃণমূলের এই আগ্রাসী মনোভাবের নিন্দা করেন। পাটনা বৈঠকের আগে এই ঘটনা বিরোধী ঐক্যের পক্ষে ক্ষতিকারক হবে বলেও রমেশ অভিযোগ করেন।
এর পরেও পাটনা বৈঠকের উদ্যোগ এগিয়ে চলেছে। সেখানে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়্গে থেকে শুরু করে এনসিপির শরদ পাওয়ার, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআইয়ের ডি রাজা, ডিএমকের এম কে স্ট্যালিন, শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে, আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল, আরজেডির নীতিশ কুমার-সহ তাবড় বিরোধী নেতাদের হাজির থাকার কথা। বস্তুত, কংগ্রেসের অনুরোধেই নীতীশ কুমার বৈঠকের তারিখ পিছিয়ে ২৩ জুন করেছেন। আগে সেই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল ১২ জুন। তখন রাহুল, খাড়্গে, স্ট্যালিন থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছিলেন। তাঁদের অনুরোধে তারিখ পিছিয়ে দেন নীতিশ কুমার।
এদিকে জাতীয় স্তরে বোঝাপড়ার কথা হলেও বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে কোনও আপসে যেতে রাজি নন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী থেকে অধিকাংশ নেতা। তার মধ্যেই শুক্রবার কাকদ্বীপের সভায় যে ভাষায় তৃণমূল নেত্রী কংগ্রেসকে আক্রমণ করলেন, তাতে জোট প্রক্রিয়া ধাক্কা খেতেও পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। তৃণমূল নেত্রী বলেন, কংগ্রেস, তোমরা অনেক রাজ্য চালিয়েছ। সিপিএমের বড় দোসর। সিপিএমের বড় দোসর। আর সংসদে আমাদের সাহায্য চাও। কিন্তু মনে রেখো, বাংলায় সিপিএমের সঙ্গে ঘর করে আমাদের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে আসবে না। তাঁর আরও মন্তব্য, বিজেপির কোলে কংগ্রেস দোলে, সিপিএমের কোলে কংগ্রেস দোলে, কংগ্রেসের কোলে বিজেপি দোলে। তিনি কার্যত বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসকে এক বন্ধনীতে রেখে আক্রমণ শানিয়েছেন।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরও মমতাকে জবাব দিতে সময় নেননি। তিনি বলেন, মমতাই তো বিজেপির সব চেয়ে বড় দালাল। উনি একাধিকবার বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধেছেন। উনি এখন পাগলের প্রলাপ বকছেন। আমাদের কাছে ওঁর কথার কোনও গুরুত্ব নেই।
বিজেপি বিরোধী জোট প্রসঙ্গে মমতার প্রস্তাব, যে রাজ্যে যে বিরোধী দল বেশি শক্তিশালী, সেই রাজ্যে সেই বিরোধীকে সামনে রাখতে হবে। তার অর্থ, বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস আসন নিয়ে কোনও দর কষাকষি করতে পারবে না। তৃণমূলের শর্তেই কংগ্রেসকে চলতে হবে। মমতার মতোই অবস্থান আম আদমি পার্টিরও। সেক্ষেত্রে পঞ্জাব এবং দিল্লিতে আম আদমি পার্টিই শেষ কথা বলবে আসন নিয়ে। দিল্লি এবং পঞ্জাবে আম আদমি পার্টির সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক বাংলার তৃণমূলের মতোই তিক্ত। দিল্লির অর্ডিন্যান্স প্রসঙ্গে কেজরির পাশে কংগ্রেসের দাঁড়ানোর ঘোর বিরোধী দিল্লি-পঞ্জাবের প্রদেশ কংগ্রেসের। সেই কারণেই কেজরিওয়াল এখনও রাহুল-খাড়্গের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না।
এই রকম পরিস্থিতিতে শুক্রবার তৃণমূল নেত্রী যে চড়া সুরে কংগ্রেসকে বিঁধেছেন, তাতে পাটনার বিরোধী বৈঠক কংগ্রেস এবং তৃণমূলের পক্ষে অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।