কলকাতা, ২১ জুলাই: তিনি জননেত্রী। তিনি মানুষের কাছের নেত্রী। প্রচলিত সব বাঁধ ভেঙে মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ায় তাঁর বিকল্প নেই। একুশের মঞ্চ থেকে সেই পরিচিত স্বভাবেই ধরা দিলেন তৃণমূল নেত্রী। হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিলেন সাধারণ মানুষের আহার। তাঁদের ‘চোখের জল’কে। বৃষ্টি ভেজা একুশের সভা থেকে এর পরই বিজেপিকে ধুয়ে মুছে সাফ করার ডাক দিলেন। আজকের সভা থেকে অন্তত একটা বিষয় স্পষ্ট করে দিলেন মমতা, এই মুহূর্তে তাঁর মূল নিশানায় বিজেপি। সেই নরেন্দ্র মোদি বিরোধী লড়াইকে সপ্তমে তোলার কাজটাই সুচতুর ভাবে করলেন তৃণমূল প্রধান।
বেশ কিছু পণ্যের উপর থেকে কর ছাড়ের সুবিধা তুলে নেওয়ার সুপারিশ করেছিল মন্ত্রিগোষ্ঠী। জিএসটি পরিষদ তার অনেকগুলিতেই সায় দিয়েছে সম্প্রতি। মাছ, মাংস (বরফে রাখা বাদে), দই, পনির, চাল, ডাল, আটা, গুড়, মধু, মুড়ির মতো গোড়া থেকেই প্যাকেটবন্দি এবং লেবেল সাঁটা পণ্যে বসানো হয়েছে ৫ শতাংশ জিএসটি। চেকবই ইস্যু করতে ব্যাঙ্কগুলি যে ফি নেয়, তাতেও মেটাতে হবে ১৮ শতাংশ কর। চড়া করের আওতায় ঢুকছে হোটেলের হাজার টাকার কম দামি ঘর এবং ব্যাঙ্কের চেকবই-ও।
সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, এমনিতেই সাধারণ রোজগেরে গৃহস্থ খাদ্যপণ্য, জ্বালানি-সহ সব কিছুর বর্ধিত দামে বিপর্যস্ত। আর কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করতে এই মূল্যবৃদ্ধিতেই হাতিয়ার করলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঞ্চে দাঁড়িয়ে কর্মী-সমর্থকদের কাছ থেকে মুড়ি চাইলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এর পরই বিজেপি নেতা-নেত্রীদের কাছে মমতার প্রশ্ন, বিজেপির নেতারা মুড়ি খাবেন না কি? মমতা অভিযোগ করেন, রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও জিএসটি দিতে হচ্ছে। বলেন, ‘‘আমার প্রশ্ন, মারা যেতে কত জিএসটি দিতে হবে!’’
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: ২৪-এ বিজেপির কারাগার ভেঙে ফেলুন, মানুষের সরকার আনুন: মমতা
মমতার কথায়, দেশের মানুষের চাকরি নেই। বেকারত্ব লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তেল-গ্যাসের দাম বেড়েই চলেছে। কেন পরিস্থিতি তৈরি হল? প্রশ্ন মমতার। একশো দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ-প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূল নেত্রী বলেন, বাংলাকে একশো দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না। গরিব মানুষ গত সাত মাস ধরে কাজ করে টাকা পাচ্ছেন না। আরও কত টাকা বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র। কেন হকের টাকা বন্ধ করে দিলেন? ভোটে হেরেছেন বলে ভাতে মারার চেষ্টা করবেন? ১০০ দিনের কাজের টাকা যদি না দেয় বিজেপি সরকার, দিল্লি গিয়ে আপনাকে ঘেরাও করব- একুশের সভা থেকে হুঙ্কার মমতার।
মঞ্চে মুড়ি এনে অভিনব প্রতিবাদের রেশ কাটার আগেই ফের চমক। এবার গ্যাস সিলিন্ডারের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি ইস্যুতেও একুশের মঞ্চ থেকে তোপ দাগলেন নেত্রী। প্রতিবাদের ধরন-পদ্ধতিতে ছিল চমক। একটি প্রতীকী এলপিজি সিলিন্ডার দেখা গিয়েছিল ভিড়ের মাঝে। তা চোখে পড়ায় মমতা সিলিন্ডারটি মঞ্চে নিয়ে যেতে বলেন। তারপর ডেকে নেন সাংসদ দেবকে। তাঁর হাতেই সেই প্রতীকী সিলিন্ডার তুলে দিয়ে প্রতিবাদের মুখ করে দেন নেত্রী। বলেন, “এই সিলিন্ডারেরও দাম বাড়ছে উত্তরোত্তর। বুঝতেই পারছেন, আমরা কোন সরকারের আমলে বসবাস করছি।” ইডি-সিবিআই তলবের সঙ্গে জড়িয়ে দিলেন মুড়ি-সিলিন্ডার নিয়ে প্রতিবাদকেও। বললেন, “ইডি-সিবিআই অফিসাররা কারও বাড়িতে গেলে ভয় পাবেন না। বাড়িতে তাঁদের ডেকে বসাবেন। আমন্ত্রণ জানাবেন। তৃণমূল কংগ্রেস ভয় পায় না। যারা ভীতু তাঁরা ভয় পায়।”
মমতার অভিযোগ, দরিদ্র মানুষের সব কিছু চুরি করে নিয়েছে এই সরকার। তাঁর কথায়, “কত টাকা কামাবে? বলছে, মহারাষ্ট্র ভেঙেছি। এরপর বাংলাও ভাঙব। আমি বলেছি, এখানে যে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আছে, সে কিন্তু দারুণ। আগে তাকে দেখো!”