মগরাহাট: জোড়া খুনের পর দেহ টুকরো টুকরো করে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিল অভিযুক্ত জানে আলম মোল্লা। মগরাহাট জোড়া খুন-কাণ্ডের তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পারে পুলিস। খুনের ঘটনার পর থেকেই ফেরার ছিল জানে আলম। মোবাইল টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে অবশেষে রবিবার দক্ষিণ কলকাতার চারু মার্কেট থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। পুলিস জানিয়েছে, সোমবার ডায়মন্ড হারবার আদালতে তুলে ধৃতকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানাবে পুলিস।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করেন ডায়মন্ডহারবার জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ ব্যানার্জি। তিনি পুরো ঘটনার বিবৃতি দেন। শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে মলয় মাখাল ও ভলান্টিয়ার বরুণ চক্রবর্তীকে নৃশংসভাবে খুন করার অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় উঠে আসে জানে আলম মোল্লার নাম। ডায়মন্ড হারবার জেলার পুলিস আধিকারিকরা তদন্তের শুরুতেই গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে।
পুলিস সূত্রে খবর, জানে আলমের সমস্ত পরিচিত, আত্মীয়-ঘনিষ্ঠদের উপরও নজরদারি চলে। দফায় দফায় চলে জিজ্ঞাসাবাদ। শনিবার সন্ধ্যায় একটি ফোন নম্বর পায় তদন্তকারীরা। হাতে আসে এক সিসিটিভি ফুটেজও। মোবাইল ও সিসিটিভি ফুটেজ ট্র্যাক করে অভিযুক্তের গাড়ির গতিবিধি লক্ষ্য করে পুলিস বুঝতে পারে গাড়িটি কলকাতার দিকে যাচ্ছে। তড়িঘড়ি বিষয়টি কলকাতা পুলিসে জানানো হয়। মুহূর্তেই কলকাতার সমস্ত থানা এবং ট্রাফিক পুলিসের কাছে পৌঁছে যায় সিসিটিভির ফুটেজ। নির্দেশ দেওয়া হয়, গাড়িটিকে পাকড়াও করার। জেলা পুলিস ও কলকাতা পুলিসের যৌথ উদ্যোগে রবিবার টলিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় আলমকে।
প্রাথমিক জেরার পর পুলিস জানতে পারে, শনিবার রাতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পার্কিং এরিয়ায় লুকিয়ে ছিল জানে আলম। নিজেই ওই গাড়িটি চালাচ্ছিল সে। সারারাত ধরে রীতিমতো লুকোচুরি খেলছিল আলম।
বেশ কিছুদিন আগে ইমারতি সামগ্রী কেনার জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ী জানে আলম মোল্লাকে টাকা দিয়েছিলেন মলয় মাখাল। মোট ৮০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন মলয়। অভিযোগ, এরপর দীর্ঘদিন কেটে গেলেও ইমারতি দ্রব্য মেলেনি। টাকা চাইলেও ফেরত দেয়নি জানে আলম মোল্লা। শনিবার টাকা ফেরত দেবে বলে মলয়কে নিজের সার কারখানায় ডেকে পাঠায় জানে আলম মোল্লা। মলয়ের সঙ্গে ছিলেন তাঁর বন্ধু সিভিক ভলান্টিয়ার বরুণ চক্রবর্তীও। বরুণ ও মলয় আসতেই প্রথমে গুলি ও তারপর গলার নলি কেটে কারখানার মধ্যে তাঁদের খুন করা হয়।
পুলিস জানায়, খুন করার পর দেহগুলোকে টুকরো টুকরো করে খুনের প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা করছিল জানে আলম। তবে গুলির শব্দে পাড়ার লোকেরা এসে যাওয়ায় সেই সুযোগ পায়নি সে। খুনের পরই গা ঢাকা দিয়েছিল আলম। তবে শেষরক্ষা হয়নি। একদিনের মধ্যেই গ্রেফতার হয় জানে আলম মোল্লা।
শুধু ডায়মন্ড হারবার নয়, কলকাতাতেও ভুয়ো ব্যবসার ফাঁদ পেতেছিল আলম। পুলিসের কাছে অভিযোগ এসেছে, অনলাইনে পণ্যসামগ্রী বিক্রি করার ভুয়ো ব্যবসা ফেঁদে অনেকের থেকে টাকাও নিয়েছিল সে। অভিযোগকারী জানায়, পণ্য সামগ্রী বিক্রির জন্য ৩০ হাজার টাকা নিয়েছিল আলম। কিন্তু আজ অবধি কিছুই বিক্রি করেনি।