কলকাতা: বঙ্গরাজনীতিতে নারীশক্তি৷ তৃণমূল মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র সম্পাদকীয় পাতায় একটি প্রবন্ধ লিখেছেন ড. অজন্তা বিশ্বাস৷ তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চর্চা৷ সেই চর্চার জল গড়িয়েছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট পর্যন্ত৷ যিনি লিখেছেন তাঁর পরিচয়, তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক৷ কিন্তু অধ্যাপনার বাইরে আরও একটি পরিচয় রয়েছে ড. অজন্তা বিশ্বাসের৷ আর সেটাই রাজনৈতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে৷
আরও পড়ুন: বিজেমূল তত্ত্ব ভুল ছিল, তৃণমূলের পাশে থাকার ইঙ্গিত দিয়ে জানাল CPI
কে এই অজন্তা বিশ্বাস? আলিমুদ্দিনের নেতাদের চেয়ে অজন্তা বিশ্বাসের পরিচয় আর ভালো কারও জানা নেই৷ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপকের বাবা অতীতের জাঁদরেল সিপিএম নেতা৷ নাম অনিল বিশ্বাস৷ সিপিএমের প্রয়াত প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদকের মেয়ে হলেন অজন্তা বিশ্বাস৷ বাবার মতো তিনিও বামপন্থা আদর্শ নিয়ে বড় হয়েছেন৷ পড়তেন প্রেসিডেন্সি কলেজে৷ বরাবর মেধাবী ছাত্রী বলেই পরিচিত ছিলেন৷ পড়াশোনার ফাঁকে সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি করতেন৷ পরে রবীন্দ্রভারতী থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন৷ তাঁর লেখা প্রবন্ধ বেরিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র ‘জাগো বাংলায়৷’
‘জাগো বাংলায়’ অজন্তা বিশ্বাসের লেখা আলিমুদ্দিনে কেন আলোড়ন ফেলেছে তা এবার খানিকটা হলেও স্পষ্ট৷ কিন্তু সিপিএমের অন্দরে এখন যে প্রশ্ন উঠছে সেটা হল, ‘জাগো বাংলা’ যে তৃণমূলের দৈনিক মুখপত্র তা বিলক্ষণ জানেন অজন্তা বিশ্বাস৷ সেটা জানার পরেও তৃণমূলের দৈনিক মুখপত্রের জন্য কেন কলম ধরলেন? যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কাছে ব্যাপারটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ৷ বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর সিপিএমের একটা বড় অংশ তৃণমূলের বিরোধিতার পথ থেকে সরে এসেছে৷ তাঁদের কাছে বিজেপিই হল এক নম্বর শত্রু৷ কিছুদিন আগে দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ফেসবুক লাইভে স্বীকার করে নিয়েছিলেন, ‘বামপন্থীদের একাংশ বিজেমূল তত্ত্ব খাড়া করেছিল তাতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে৷ বিজেপির সঙ্গে কাউকে এক পংক্তিতে বসানো যায় না৷ তৃণমূলের বিরুদ্ধে অনেক কিছু বলার আছে৷ কিন্তু তৃণমূল-বিজেপিকে এক আসনে বসানো ভুল হয়েছে৷’
আরও পড়ুন: LIVE: আমি লিডার নই, ক্যাডার: মমতা
শুধু তাই নয়, ভোটে পরাজয়ের পর দলের নেতারা হারের নানা বিশ্লেষণ করে বেরাচ্ছেন৷ কারও মতে, বিজেপিকে কম আক্রমণ করা হয়েছে৷ কেউ বলছে, তৃণমূল-বিজেপিকে এক লাইনে ফেলা ঠিক হয়নি৷ মূল শত্রু কে? তা নিয়েই বিভ্রান্তি তৈরি হয়৷ এর মধ্যেই বাঁকুড়ায় গিয়ে বিমান বসু বলেন, ‘জাতীয় স্তরে বিজেপিকে ঠেকাতে দল সব রকম পথই খোলা রাখবে।’ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কথায়, সিপিএম নেতারা যে তৃণমূলকে ‘অচ্ছুৎ’ ভাবছেন না তা পরিস্কার৷ নেতারাই যখন তৃণমূলের প্রতি নরম মনোভাব নিয়েছন তখন জাগো বাংলায় লিখে অন্যায় করেননি অজন্তা বিশ্বাস৷ বরং এগুলিকে তৃণমূল-সিপিএম কাছাকাছি আসার প্রক্রিয়া হিসাবে দেখা যেতে পারে৷