নদিয়া: জঙ্গি যোগে আটক কৃষ্ণনগরের (Krishnanagar) যুবক। ভয় দেখাতে গিয়ে নিজেই পুলিশের জালে পড়লেন যুবক। জঙ্গি যোগের অভিযোগে ওই যুবককে আটক করেছে কৃষ্ণনগরের কোতোয়ালি থানার পুলিশ। কাজের জন্য দুবাইতে গিয়েছিলেন নদিয়ায় কৃষ্ণনগরের যুবক রানা বিশ্বাস। পরে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। এবার তাঁর ফেসবুক পোস্টের ছবি ঘিরে দেখা দিয়েছে চাঞ্চল্য। কিছুদিন আগেই ওই যুবকের সঙ্গে কয়েকজন পাকিস্তানি যুবকের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। পাথুরে এলাকায় অস্ত্র নিয়ে রয়েছেন ব্যক্তি। পাহাড়ি এলাকায় অস্ত্র নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে এক ব্যক্তি। কোনও শপিংমলে অন্য দু’জনের সঙ্গে সেলফি। এইসব ছবি পোস্ট করেছেন রানা। ছবির ক্যাপশন হিসেবে লেখা হয়েছে, ‘মাই ফ্রেন্ড’, ‘ফ্রেন্ড ভাই লোগ’। পহেলগাম ঘটনার মাঝে নতুন করে চিন্তা বাড়াচ্ছে রাজ্যের।
রানা বিশ্বাস বাড়ি কৃষ্ণনগরের কোতোয়ালী থানার অন্তর্গত ভান্ডারখোলা মল্লিকপাড়া এলাকায়। কিছুদিন আগেই ওই যুবকের সঙ্গে কয়েকজন পাকিস্তানি যুবকের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ওই ছবিতে দেখা যায় পাকিস্তানের দুই যুবক অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে পাহাড়ি এলাকায় বসে আছে। সন্দেহ করা হচ্ছে তারা পাকিস্তানি জঙ্গি। এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।তাঁর সঙ্গে কি পাকিস্তানের জঙ্গিদের যোগসাজস রয়েছে? সেই প্রশ্ন উঠেছে। কোতোয়ালি থানার পুলিশ তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। এর পাশাপাশি তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এনআইএ, সেন্ট্রাল আইবি, স্টেট আইবি ও এসটিএফ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই যুবকের সঙ্গে প্রতিবেশীর স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। গত ২০২৩ সালের মার্চ মাসে প্রতিবেশী ওই মহিলাকে নিয়ে পালিয়ে যায় ওই যুবক। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ওই মহিলাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসে পরিবারের লোকজন। মারধরের ভয়ে ওই যুবক নিজের বাড়িতে না ফিরে কৃষ্ণনগরের পার্শ্ববর্তী নতুনগ্রামে মাসির বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। সেখান থেকে মুম্বইয়ে জামাইবাবুর কাছে গিয়ে কাজ শুরু করে। সেখানেও থেকে এক দালালের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ১২০০০০/- টাকার বিনিময়ে এবছরের ৩ রা জানুয়ারি দুবাই পাড়ি দেন। সেখানে একটি স্বর্ণ কারখানার বয়ের কাজ দেওয়ার কথা থাকলেও দেখা যায় তাকে দেওয়া হয়েছে সুইপারের কাজ। কাজ পছন্দ না হওয়ায় তিনি কাজ করেননি। ফলে আর্থিক সমস্যায় পড়েন তিনি। ওই কারখানার মেসে পরিচয় হয় পাকিস্তানি দুই যুবকের সঙ্গে। তাদের মধ্যে একজনের নাম আমজিদ খান, তার বাড়ি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুন এলাকায়। তারা তাকে সাহায্য করেন এবং বন্ধুত্ব তৈরি হয়। ওই দুই যুবকের সঙ্গে অভিযুক্ত রানা বিশ্বাস একটি শপিং মলে গিয়ে সেলফি তোলেন। ওই দুই পাকিস্তানি যুবক অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র সহ কিছু ছবি রানাকে দেখায়।
আরও পড়ুন: কিছুক্ষণের অপেক্ষা তারপরই বদল ঘটবে আবহাওয়ার
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা শর্তে পাকিস্তানের দুই যুবক ওই ছবিগুলো রানাকে দেয় বলে দাবি পুলিশের। পুলিশের আরও দাবি যেহেতু ওই যুবক ওই মহিলার স্বামীর ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছিলেন না সেই কারণে তাকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ছবি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি ওই পাকিস্তানের যুবকদের পাকিস্তানি ভাই বলে উল্লেখ করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ছবি পোস্ট করার কিছুক্ষণ পরেই ভুল বুঝতে পেরে ছবি ডিলিট করে দেয় রানা বিশ্বাস। কিন্তু কেউ সেই ছবি স্ক্রিনশট করে রাখেন। দুবাইয়ে ৮ দিন থাকার পর দেশে ফিরে এসে ফের মাসির বাড়িতে থাকতে শুরু করে ওই যুবক। গত ঈদের আগে নিজের বাড়ি ফিরে আসে।
এরই মধ্যে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পরেই সন্দেহভাজন জঙ্গিদের ছবি পোস্ট করে এনআইএ। সেই ছবির সঙ্গে পাকিস্তানি যুবকদের মিল থাকায় কয়েকদিন আগে ফের সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই যুবকের সঙ্গে পাকিস্তানি যুবকদের ছবি ভাইরাল হয়। সেখানে ওই যুবকের জঙ্গিযোগ অভিযোগ তোলা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ওই যুবককে আটক করে থানার পুলিশ। গতকাল গভীর রাতে তদন্তে আছে এনআইএ এস টি এফ ও রাজ্য ও কেন্দ্রের আইবি। পুলিশের দাবি এখনো পর্যন্ত ওই যুবকের সাথে জঙ্গি যোগের কোন প্রমাণ মেলেনি। তবুও দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে পাশাপাশি ঘটনার6 তদন্ত চালাচ্ছে তারা। ঘটনার পর থেকেই আতঙ্কে যুবকের পরিবার।
দেখুন ভিডিও