বাঙালির কাছে মহালয়া মানেই ভোরবেলা রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী স্তোত্র পাঠ। ঘুম চোখে সংস্কৃতে চন্ডীপাঠের স্তোত্র কানে পড়লেই মনে হয় শেষ হল উমার অপেক্ষায় দিন গোনা। পিতৃপক্ষের শেষ আর দেবীপক্ষের শুরু। একদিকে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তার সূচনা যেমন মহালয়া। তেমনি আবার সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে পূর্ব পুরুষদের আত্মার শান্তির কামনা করে তাঁদের প্রার্থনা ও অঞ্জলি প্রদান করা হয়।
সনাতন ধর্ম অনুযায়ী প্রয়াত আত্মাদের মর্তলোকে পাঠিয়ে দেয়া হয়, প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয় তাকে মহালয় বলা হয়। মহালয় থেকেই এই মহালয়া । পিতৃপক্ষেরও শেষদিন এটি । মহাভারত ও পুরাণের এই মহালয়াকে ঘিরে রয়েছে নানা গল্পকথা। স্বর্গত প্রিয়জনকে জল দানের মাধ্যমে পূণ্য অর্জনের রীতি এভাবেই চলে আসছে। মহালয়ার ভোরে প্রিয়জন ও পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে জল দান করাই তর্পণ। মহলয়ার সকাল তাই প্রত্যেক বছরই গঙ্গার ঘাটে ঘাটে তর্পণের ভিড়, সূর্য ও পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে জল দান শেষে প্রার্থনারত অগুনতি মানুষের ঢল মহালয়ার এক চেনা ছবি। জেনে নিন এ বছর মহালয়ার সূর্য সিদ্ধান্ত ও বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুযায়ী তর্পনের সময়
২০২২-এ মহলয়ার তর্পণের সময় কাল
২৪ সেপ্টেম্বর, শনিবার রাত্রি ২. ৫৭ মিনিট থেকে অমাবস্যা তিথি শুরু হচ্ছে এই তিথি,
থাকবে ২৫ সেপ্টেম্বর, রবিবার রাত্রি ৩:২৫ মিনিট পর্যন্ত
এই সময়কালে অর্থাৎ শনিবার ভোররাত থেকেই তর্পণ করা যাবে
(ছবি সৌ: Flickr)
অন্যদিকে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে
২৪ সেপ্টেম্বর, শনিবার রাত্রি ৩:১৩ মিনিট থেকে অমাবস্যা তিথি শুরু হচ্ছে
পরের দিন, ২৫ সেপ্টেম্বর, রবিবার রাত্রি ৩:২৫ মিনিট পর্যন্ত থাকবে অমাবস্যা তিথি
একদিকে পিতৃপক্ষের শেষ দিনে যেমন তর্পণ করা হয়। তেমনই আবার দেবীপক্ষের সূচনায় এই মহালয়ার তিথিতেই চক্ষুদান করা হয় দুর্গা প্রতিমার। মৃণ্ময়ী থেকে চিন্ময়ী রূপে প্রতিষ্ঠিত হন দেবী।
পুরাণ কাহিনী অনুযায়ী অসুরদের বধ করতে মা দুর্গার মহিষাসুরমর্দিনী রূপ সৃষ্টিতে সামিল হয়েছিলেন শিব, বিষ্ণু, দেবরাজ ইন্দ্র, ব্রহ্মাসহ অন্যান্য দেবতারা। কৈলাসে উমার পতিগৃহ ছেড়ে পিতৃগৃহে আগমন অসুর বিজয়ের আনন্দে। মহিষাসুর বধের পর সপরিবারে সেই বিজয়-উৎসব পালন করতেই উমার পিতৃগৃহে আগমন। তাই দুর্গাপুজোর আগমনের সূচনায় মহালয়া তিথি যেন বাঙালির প্রাণের উৎসবের এক মাহেন্দ্রক্ষণ।