কলকাতা: এবার লোকসভা ভোটের প্রচারে কি বিজেপি নেতারা বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণের রাস্তায় না হাঁটার কৌশল নিচ্ছেন? এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলায় তিনটি সভা সারলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আরামবাগের সভায় মোদির মুখে দুই একবার দিদি শব্দ শোনা গিয়েছিল। কিন্তু কৃষ্ণনগরে এবং বুধবার বারাসতের কাছারি ময়দানের সভায় মোদি একবারও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নেননি। শাসকদলের নাম উল্লেখ করে তৃণমূলকে তোলাবাজ, মাফিয়ারাজের দল বলে আক্রমণ শানিয়েছেন। কিন্তু মমতা, দিদি কিংবা ভাতিজা শব্দগুলি তাঁর মুখে অনুপস্থিত ছিল।
রাজনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিভিন্ন সভা, সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী মোদি কিংবা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নাম উচ্চারণ করছেন না। তিনি কেন্দ্রীয় সরকার কিংবা বিজেপির নাম করছেন। মোদি-মমতার সাম্প্রতিক ভাষণে নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ উঠে না আসায় আশ্বস্ত হচ্ছে নাগরিক সমাজ। অনেকেই বলছেন, এটাই যদি এবার লোকসভা ভোটে প্রচারের ট্রেন্ড হয়, তাহলে বাংলার রাজনীতিতে তা অবশ্যই সুলক্ষণ। মাস কয়েক আগেও মমতা, অভিষেকদের মতো তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের মুখে লাগাতার মোদি-শাহের নাম শোনা যেত। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ চালিয়েছেন তাঁরা। আবার মোদি, শাহরা বাংলায় এসে মমতা-অভিষেকদের নাম ধরে আক্রমণ করতেন।
আরও পড়ুন: বাংলার সংস্কৃতি বাঁচাতে ব্রিগেডে আসুন, জনতাকে বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট কিংবা ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের প্রচারে বঙ্গবাসী ব্যক্তি আক্রমণের জোয়ার দেখেছিল। মোদি, শাহরা প্রচারে এসে যেমন মমতা এবং অভিষেকের নাম ধরে লাগাতার ভাষণ দিয়েছেন, কর্মী-সমর্থকদের গা গরম করেছেন, ঠিক তেমনি মমতা-সহ তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরাও মোদি, শাহের নামে কুকথা বলতে দ্বিধা করেননি। নির্বাচন কমিশন নানা নির্দেশ দিয়েও ব্যক্তিগত আক্রমণ বন্ধ করতে পারেনি। এবারও কমিশন ফতোয়া দিয়েছে, প্রচারে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা চলবে না। প্রশ্ন উঠেছে, সেই কারণেই কি মোদির এই সংযম?
তবে রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, সবে তো শুরু। এখনও ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি। সেভাবে ভোটের প্রচারও শুরু হয়নি। পুরোদমে প্রচার চালু হয়ে গেলে বোঝা যাবে, ব্যক্তিগত আক্রমণ হচ্ছে কি না। যদিও চলতি মাসের প্রথমেই বাংলায় তিনটি সভা করে প্রধানমন্ত্রী ভোটের হাওয়া তুলে দিয়েছেন। তিনটি সভাতেই তাঁর মুখে বিরোধী পক্ষের কোনও নেতার নামেই ব্যক্তিগত আক্রমণ শোনা যায়নি। শুরুটা ভালো হলে শেষটাও ভালো হবে, এই আশাতেই দিন গুনছেন বঙ্গবাসী। সত্যিই যদি এবারের ভোট প্রচারে বাংলায় ব্যক্তিগত আক্রমণ বন্ধ হয়, তার প্রভাব কিন্তু হবে সুদূরপ্রসারী।