উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার দাবিতে দিনকয়েক যাবৎ সরব হয়েছেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বারলা। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। উত্তরবঙ্গের শান্তি বিঘ্নিত করছেন বারলা, এই অভিযোগ তুলে এবার বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করল তৃণমূল।
আরও পড়ুন: রাজ্যজুড়ে চলবে ভারী থেকে মাঝারি বৃষ্টি
কোচবিহার জেলার যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি জাকারিয়া হোসেন কোচবিহারের দিনহাটা থানায় রবিবার বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন। জাকারিয়ার বক্তব্য, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন নিয়ে বারলার দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার দাবির মাধ্যমে তিনি শান্তি বিঘ্নিত করতে চাইছেন।
এদিকে বারলার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের প্রসঙ্গে কোচবিহার জেলার বিজেপি সভানেত্রী মালতি রাভা রায় বলেন, ‘জাকারিয়াবাবু যখন আইনের দ্বারস্থ হয়েছেন, তখন আইন আইনের মতো করেই চলুক। জন বার্লা কী বলেছেন, তা তদন্ত করে দেখা হোক। উনি উত্তরবঙ্গে বঞ্চিত মানুষের কথাই বলতে চেয়েছেন। ভোট পরবর্তী হিংসার কথা বলেছেন।’
আরও পড়ুন: বড় সাফল্য সেনার, এনকাউন্টারে খতম ৩ জঙ্গি
শনিবার পৃথক রাজ্যের ইস্যুতে বারলা বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই উত্তরবঙ্গ রাজ্য অথবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা দরকার। করোনা সংকট কাটলেই এই দাবি নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বারস্থ হব। তাঁর দাবি, ‘কেন্দ্র পর্যাপ্ত টাকা পাঠালেও উত্তরবঙ্গের মানুষ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশি রোহিঙ্গারা ভোটার, র্যাশন কার্ড পেলেও বঞ্চিত উত্তরবঙ্গের অনেক ভূমিপুত্র।’
বারলা এই বক্তব্যকে অবশ্য সমর্থন করেনি রাজ্য বিজেপি। এই প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, এটা দলের বক্তব্য নয়। বাংলা ভাগ চায় না রাজ্য বিজেপি। বিজেপি চায় রাজ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হোক। সাংসদ–বিধায়কদের সম্মান করা হচ্ছে না। সেই কারণেই এই ধরনের মন্তব্য সামনে আসছে।
আরও পড়ুন: নির্মীয়মাণ স্কুল ভেঙে মৃত ৫
পৃথক রাজ্যের ইস্যুতে পালটা সুর চড়িয়েছে তৃণমূলও। প্রাক্তন বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেন, ‘বিজেপি বিধানসভা ভোটে হার মেনে নিতে পারেনি। তাই উস্কানিমূলক কাজ করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার গঠনের পর থেকে উত্তরবঙ্গের সর্বত্র উন্নয়ন হয়েছে।। এর পরেও যদি কেউ বাংলা ভাগের চক্রান্ত করে তাহলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলনে নামব।’
রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বিজেপি সাংসদকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘ইংরেজরা একসময় বাংলা ভাগের চক্রান্ত করেছিল, ফের নতুন করে সেই চক্রান্ত হচ্ছে৷ বাংলার মানুষ বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে৷ উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গকে কখনওই আলাদাভাবে দেখা হয় না৷ উত্তরবঙ্গ ভাগের পরিকল্পনা নিয়ে যদি কোনও আশান্তি সৃষ্টি হয় তবে সেই দায় নিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে৷’
আরও পড়ুন: রাজ্যজুড়ে চলবে ভারী থেকে মাঝারি বৃষ্টি
কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীও বারলার বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘উত্তরবঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়েই গোটা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। তাকে কেউ ভাঙতে পারবে না। কিন্তু বারলা নিজের বক্তব্যে অনড় থাকায় এবার আইনি পথে হাঁটল রাজ্যের শাসকদল।’