সল্টলেকে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের অফিসে ডব্লিউবিপিডিসি (WBPDCL) এল এর তরফ থেকে দুটো প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। এই দুটো প্রকল্প উদ্বোধন করেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। উপস্থিত ছিলেন দফ্তরের সকল আধিকারিক গন। দুটি প্রকল্পের নাম হলো বিনামূল্যে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পার্শবর্তী এলাকার বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানমুখী দক্ষতা বৃদ্ধি ও ডব্লিউবিপিডিসিএল এর সাগরদিঘী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে লেওনের (উপহ্রদের) মাধ্যমে ছাই মিশ্রিত জলের পুনঃসঞ্চালন এবং পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা।
শিল্পকে বাঁচাতে গেলে সমাজের সাথে একাত্মীকরন প্রয়োজন। এরই অঙ্গ হিসাবে ডব্লিউ বি পি ডি সি এল (WBPDCL) তার সি এস আর (CSR) কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশে পাশে স্থানীয় বেকার যুবক-যুবতীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করার একটি উদ্যোগ শুরু করেছে। স্থানীয় যুবক-যুবতীরা সঠিক ভাবে দক্ষ হলে এবং এ বিষয়ে যথাযথ সার্টিফিকেট পেলে বিভিন্ন শিল্পে তাদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। উপযুক্ত মানের দক্ষতা এবং সারা ভারতে গ্রহণ যোগ্য যথাযথ শংসাপত্র প্রদান করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কারিগরি শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন বিভাগের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। যেহেতু তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করার সময় অনেক লোকের জমি নেওয়া হয়েছে, তাই সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জমিহারা পরিবারগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সম্ভাব্য প্রশিক্ষণার্থীরা যেহেতু একটি উল্লেখযোগ্য সময়ের জন্য প্রশিক্ষণে নিযুক্ত থাকবেন, তাই বৃত্তি এবং পরিবহন ভাঙা হিসাবে সামান্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে যাতে তাদের পরিবারগুলি এদের প্রশিক্ষণ চলাকালীন কোনরূপ ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। ন্যাশনাল স্কিলস কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক প্যারামিটারের অধীনে ছয় মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে দুটি আইটিআই (ITI) যথা আইটিআই, সিউড়ি এবং আইটিআই, বহরমপুর (বক্রেশ্বর এবং সাগরদিঘী পাওয়ার প্ল্যান্টের কাছাকাছি) কোর্সের স্থান হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: শনিবার ডুরান্ডের প্রথম ম্যাচে মুম্বইয়ের মুখোমুখি মহামেডান
নিম্নলিখিত আটটি (৮) ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে –
১. সহকারী ইলেকট্রিশিয়ান — নির্মাণ
২.ফিটার যান্ত্রিক সমাবেশ
৩. সহকারী ইলেকট্রিশিয়ান ঘরোয়া সমাধান
৪. সহকারী সার্ভেয়ার
৫. ইনস্টলেশন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ (গৃহস্থালী যন্ত্রপাতি)
৬. প্রচলিত মিলিং অপারেটর
৭. গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং
৮. আসবাবপত্র এবং ফিটিং
অংশগ্রহণকারী প্রশিক্ষণার্থীদেরকে প্রতি মাসে ৬,০০০ টাকা বৃত্তি এবং প্রতি মাসে ১,০০০ টাকা পরিবহণ ভাতা দেওয়া হবে। আইটিআই-তে কোর্স এবং মূল্যায়ন সফলভাবে সমাপ্ত করার পরে, প্রশিক্ষণার্থীরা একটি জাতীয়ভাবে স্বীকৃত শংসাপত্র পাবেন।
এই উদ্দেশ্যে পৃথক আবেদনের জন্য একটি অনলাইন পোর্টাল খোলা হয়েছে। এবিষয়ে বিপুল সাড়া পাওয়া গেছে। ২ টি আইটিআই-এর প্রতিটিতে ব্যাচ শুরু করার জন্য প্রার্থীদের বাছাই করা হয়েছে। প্রথম ব্যাচ ৪ঠা আগস্ট, ২০২৩-এ শুরু হচ্ছে আইটিআই, সিউড়ি-তে ২১৬ জন প্রার্থী নিয়ে। এই ২১৬ জন থাকছেন ২ টি ট্রেডে – ১৫৬ জন ফিটার মেকানিক্যাল অ্যাসেম্বলিতে এবং ৬০ জন সহকারী ইলেকট্রিশিয়ান নির্মাণে। পরবর্তী ব্যাচটি ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে আইটিআই, বহরমপুরে শুরু করার কথা ঠিক হয়েছে। ধীরে ধীরে এই দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণের জন্য ইচ্ছুক সমস্ত যোগ্য আবেদনকারীকে পরবর্তী ব্যাচগুলিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
ডব্লিউ বি পি ডি সি এল এর সাগরদিঘী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে লেওনের (উপহ্রদের) মাধ্যমে ছাই মিশ্রিত জলের পুনঃসঞ্চালন এবং পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা:
সাগরদীঘি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প হল ডব্লিউ বি পি ডি সি এল এর বৃহত্তম বিদ্যুৎ কেন্দ্র। যার বর্তমান ক্ষমতা ১৬০০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ এবং ১৮ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ। এছাড়া আসন্ন ৬৬০ মেগাওয়াট সুপারক্রিটিক্যাল থার্মাল ইউনিট এবং ২০ মেগাওয়াট ভাসমান সোলার প্ল্যান্টের মাধ্যমে সাগরদীঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বর্তমানে এখানে দৈনিক জলের প্রয়োজন প্রায় ১:৩০ লাখ ঘনমিটার। যেহেতু জল সবচেয়ে মূল্যবান একটি প্রাকৃতিক সম্পদ, তাই পরিবেশের দৃষ্টিকোণ থেকে এর সংরক্ষণ অপরিহার্য এবং সচেতনভাবে এর ব্যাপক ব্যবহার সীমিত করা উচিত। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল “হ্রাস করা পুনর্ব্যবহার আবর্তন”। এই প্রকল্পের ফলে ৬৬০ মেগাওয়াট সুপারক্রিটিক্যাল ইউনিটের মাধ্যমে ক্ষমতা বৃদ্ধির পরেও জলের প্রয়োজনীয়তা যথাযোগ্য সীমার মধ্যে থাকবে। এছাড়াও, এই প্রকল্পটি “জিরো ডিসচার্জ” এর পরিবেশগত নিয়মগুলির পালন করতেও সহায়তা করবে।
এই উপহ্রদের ধারণক্ষমতা ৬ লাখ ঘনমিটার। ২৬.৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০২৩ সালের মে মাসে সম্পূর্ণ হয়। প্রকল্পের প্রত্যাশিত: দৈনিক পুনরুদ্ধার ৪০,০০০ ঘনমিটার জল।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য ছাই মূলত দুভাবে সংগৃহিত হয় যথাক্রমে “বটম অ্যাশ” এবং “ফ্লাই অ্যাশ”। “ফ্লাই অ্যাশ এর সিংহ ভাগ সিমেন্ট শিল্পে ব্যবহৃত হয়। অবশিষ্ট “ফ্লাই অ্যাশ”এবং “বটম অ্যাশ” জলে মিশ্রণ করে ছাই পুকুরে নিষ্কাশন করা হয়। ছাই পুকুরে ছাইকণা নিচে থিতিয়ে গেলে, উপরের স্বচ্ছ জল “ডিক্যান্টেশন চেম্বার” থেকে পুনরুদ্ধার করে কৃত্রিম জলাধারে স্থানান্তরণ এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন রাসায়নিক ও ভৌতপ্রক্রিয়া সহযোগে পরিশোধন করে পুনর্ব্যবহার যোগ্য করা হয়।