কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক : একটা গান ছিল সে অনেক পুরনো। মামা তার ভাগনা-ভাগনিদের গানের সুরে স্বরবর্ণ শেখাচ্ছেন। দার্জিলিং (Darjeeling) যেতে যেতে। ‘এই ঘোন্টু এই দোয়েল। কী মামা। তোরা কোথায় রে? এ বার পুজোর ছুটিতে তোদের দার্জিলিং নিয়ে যাব বলেছিলাম, তোরা কি যাবি?’ সেই গানের সুরে, ছন্দে মাদকতায় আরও একটা জিনিস সহজসরল ভাবে মিশে গিয়েছিল, তা হল ট্রেন-চলার গতি। ছোট ট্রেন বা টয় ট্রেন (Toy Train)। গানটা ছিল রাহুল দেব বর্মণের (R D Barman) কন্ঠে। সুরকার তিনিই।
পাহাড়ে এখন বিপুল ছেত্রী (Bipul Chhetri) খুব জনপ্রিয়। নতুন ছেলে মেয়েরা যেমন বিটিএস (BTS) শোনেন, তেমনই বিপুলের গান। কালিম্পুংয়ের ছেলে বিপুল গিটার হাতে গাইছেন, ‘দর্জিলিং কো রেল গাড়ি ছুক ছুক করতে আগে বড়ি’…ন্যারো গেজের উপর দিয়ে সেই ছুক ছুক করে চলা ঐতিহ্যের রেলগাড়ি এ বার এনএমপি (NMP) বা জাতীয় মনিটাইজেশন পাইপলাইনের নজরে পড়েছে। কেন্দ্রের এই পরিকল্পনায় দার্জিলিংয়ের মত চার-চারটে পাহাড়ি রেললাইনকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইউনেসকোর হেরিটেজ (Heritage) তকমা লাগানো টয় ট্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাই চিন্তিত পাহাড়ের মানুষ।
শীতের সকালের ঘুম স্টেশন
হাতবদল ঘটলে কী হবে? রেললাইনের পাশ দিয়ে গড়ে ওঠা যে ধোঁয়া-ওঠা জনবসতি, ছোটখাটো রুটিরুজির ছাতায় যে সব পাহাড়ি মানুষের টিকে থাকা, তাঁদের কী হবে? সরিয়ে দেওয়া হবে, উচ্ছেদ ঘটবে? ছোট ছোট দোকান, খাবার হোটেল, কেনাকাটার লোকাল বাজার সব খালি করে দেবে?
পাহাড়ে ঘেরা কার্শিয়াং
আর রেলের কর্মীদের আশঙ্কা, টয় ট্রেনের বেসরকারিকরণ ঘটলে বুঝি তাঁদের চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়বে। কেননা দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে (DHR) ইতোমধ্যেই কর্মী সঙ্কোচের কাজ শুরু করে দিয়েছে। যাঁরা অবসর নিচ্ছেন, তাঁদের জায়গায় আর নতুন নিয়োগ করা হচ্ছে না।
কুয়াশাছন্ন রংটং স্টেশন৷
‘কী যে হবে আমাদের?’ লোপসাং শেরপার বয়স হল। নয় নয় করে আশি বছর। রেলের জমিতে একটা ছোট দোকান আছে। ওই দিয়েই সংসার চলে। ওই জলের বোতল, বিস্কিট, সিগারেট এই সব বিক্রি হয়। এটা ঠিকই শুধু এই লোপসাং শেরপার দোকানই না, গা-ঘেঁষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে থাকা আরও অনেক দোকান-ঘরই বেআইনি ভাবে রেলের জমিতে তৈরি হয়েছে। সে আজকের কথা না। রেল বা স্থানীয় প্রশাসন এ সবে নাক গলায় না। কিন্তু এ বার?
রোদেলা সকালে বাতাসিয়া লুপ
ইউনেসকো (UNESCO) কেন্দ্রকে চিঠি লিখেছে। জানতে চেয়েছে হেরিটেজ তকমাটি অক্ষত রেখে কী ভাবে কাজ করবে বেসরকারি সংস্থা? আর হেরিটেজ মুকুটটি খোয়া গেলে? স্থানীয়রা বলছেন, ‘একবার হেরিটেজের গুরুত্ব হারিয়ে ফেললে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের ঘণ্টা বেজে যাবে।’ হ্যাঁ মৃত্যুঘণ্টা।