কলকাতা: কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর বেশ কয়েক মাস কেটে গিয়েছে। বঙ্গে হাজির হয়েছে করোনার তৃতীয় ঢেউ (Covid-19 Third Wave)। নিজের চারিত্রিক বদল ঘটিয়ে সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতার চারগুণ বাড়িয়েছে করোনা ভাইরাস। অর্থাৎ, আগে ভাইরাস একজনকে সংক্রমিত (Covid-19 Third Wave) করলে, এখন সে আক্রমণ করছে ৪ জনকে। ওই ৪ জনের থেকে আবার সংক্রমিত হচ্ছেন ১৬ জন। ঠিক সেই কারণেই বাংলায় হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।
বাংলায় আক্রান্তের সংখ্যা আচমকা বেড়ে গেলেও হাসপাতালে ভর্তি না হয়েই অনেকে সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তৃতীয় ঢেউয়ে হাসপাতালে ভর্তির হার অনেক কম। কিন্তু যারা এর সংক্রমণ ক্ষমতা নিয়েই চিন্তিত চিকিৎসকরা। যারা দুটি ডোজ নিয়েছেন, তাঁরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। অর্থাৎ, প্রোটিন স্পাইক বা কামড় ক্ষমতা কম হলেও ভ্যাকসিনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা ইমিউনিটি সহজেই ভেঙে দিচ্ছে ভাইরাস। যারা ভ্যাকসিন পাননি বা একটি ডোজ পেয়েছেন, তাঁদের নিয়ে চিন্তা বাড়ছে।
ডাঃ কুণাল সরকার বলেন, এই ভাইরাস নিজের চেহারা পাল্টে এমন একটা অবস্থায় গিয়েছে যে সে চারগুন সহজে ছড়িয়ে পড়ছে। খারাপ ভাবে সংক্রমিত করার হাত ২৫ শতাংশ। দ্বিতীয় ঢেউ পর্যন্ত মৃত্যু হার ছিল ১.৩ থেকে ১.৪ শতাংশ। যে সমস্ত দেশ ওমিক্রনের ধাক্কা ইতিমধ্যেই সামলেছে, সেখানে মৃত্যু হার ০.৩ শতাংশ। হাসপাতালে উপর বিশাল চাপ পড়ুক এটা আমরা চাইছি না, সে কারণেই সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কুণালের কথায়, ‘জমায়েত-ভিড় বাড়ালে প্যানডেমিকের বেস বেড়ে যাবে। একবার তা বেড়ে গেলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। সে কারণেই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। বাংলায় হাসপাতালে ভর্তির হার ৬ শতাংশ। এখনই ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের উপর চাপ নেই।’ মাস্ক পরা ছাড়াও বাকি সমস্ত বিধিনিষেধ মেনে চললে সহজেই ভাইরাসকে বাগে আনা যাবে, এমনটাই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার, অভিজিৎ চৌধুরী, অতিমারি বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায় এবং চিকিৎসক কুণাল সরকারদের পরামর্শ, তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলার একমাত্র উপায় জমায়েত বন্ধ করা। একইসঙ্গে বাড়ির বাইরে বেরোলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। এই দুইয়ের সঙ্গে দূরত্ববিধি মেনে চললে এই ঢেউ আটকানো সম্ভব। আজ, মঙ্গলবার থেকে আগামী ৫ থেকে ৬ দিনের মধ্যে এই ভ্যারিয়েন্ট কতটা ক্ষতিকর এবং সংক্রামক তা বোঝা যাবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের মেট্রো শহরগুলির মধ্যে পজিটিভিটি রেটে শীর্ষে রয়েছে কলকাতা। তবে জেলা শহরের হিসেবে ধরলে সংক্রমণের (Covid-19 Third Wave) নিরিখে হিমাচল প্রদেশের লাহুল-স্পিতি কলকাতার আগে রয়েছে। সেখানে সাপ্তাহিক পজিটিভিটি রেট ছিল ৬৩.৬৪ শতাংশ বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, কলকাতায় সাপ্তাহিক পজিটিভিটি রেট ৩৮.৩৭ শতাংশ। মোট পরীক্ষার ৮৯ শতাংশ আরটিপিসিআর টেস্ট এবং বাকি ১১ শতাংশ র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট।