কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) বিরুদ্ধে মানহানিকর মন্তব্য করার অভিযোগের ভিত্তিতে আইনজীবী কৌস্তভ বাগচীর (Kaustabh Bagchi) বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় মান্যতা দিল নগর দায়রা আদালত। সরকারি আইনজীবীর আনা অভিযোগের প্রত্যুত্তরে বাগচীর তরফে অভিযোগ খারিজের জন্য পেশ হয় তিনটি যুক্তি।
১. যে মন্তব্য করা হয়েছে, তা কোনওভাবেই ভিকটিম তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নয়, এবং তাঁর সরকারি দায়িত্ব সম্পর্কেও নয়।
২. যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রস্তাবিত অভিযুক্তকে দেওয়া হয়নি।
৩. বলা যাবতীয় মন্তব্য একটি বই থেকে নেওয়া, যে বই নিষিদ্ধ হয়নি।
সরকারি আইনজীবীর পাল্টা দাবি, মামলার এটি প্রাথমিক পর্যায়। এই অবস্থায় আদালতে মিনি-ট্রায়াল (Mini Trial) বা সংক্ষিপ্ত শুনানির সুযোগ নেই। বরং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শুনানি করা উচিত কি না, সেটি নির্ধারণ হওয়া দরকার।
কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর বা সিআরপিসি এবং ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা বা বিএনএসএস-এ ‘কগনিজেন্স’ শব্দটির কোনও নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। ফৌজদারি মামলার শুনানিতে এটি (কগনিজেন্স নেওয়া) প্রথম ধাপ। যদিও সুপ্রিম কোর্টের বেশ কিছু রায়ে এই শব্দটির ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। সেইমতো কোনও অভিযোগ সম্পর্কে আদালতকে বিচার ব্যবস্থা অনুযায়ী অবগত করাকে কগনিজেন্স বলা যেতে পারে। সেইমতো ম্যাজিস্ট্রেটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। অর্থাৎ অভিযোগ অনুযায়ী মামলা হবে কি হবে না, তা চূড়ান্ত হয়। তবে বিএনএসএস অনুযায়ী অভিযুক্তের বক্তব্য না শুনে ম্যাজিস্ট্রেট কগনিজেন্স নিতে পারেন না বলে অভিমত মুখ্য বিচারকের।
আরও পড়ুন: বজবজে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে সুকান্ত, ছোড়া হল জুতো, উঠল ‘চোর-চোর’ স্লোগান
অভিযুক্তের আনা তৃতীয় যুক্তিটি শুনানির সময় খতিয়ে দেখা যেতে পারে। দ্বিতীয় যুক্তি সম্পর্কে এটাই বলার যে, অভিযোগ সম্পর্কিত তথ্য না দেওয়ার বিষয়টি যাই হোক, ওইসব মন্তব্য অভিযুক্ত তাঁর নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে করেছেন। যা অডিও ভিস্যুয়াল মোডে সর্বত্র সহজলভ্য। ফলে এই যুক্তিতেও অভিযোগ খারিজ করা যাচ্ছে না। তৃতীয়ত, রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল, কেন্দ্র বা রাজ্যের মন্ত্রী সম্পর্কে কোনও মন্তব্যের ক্ষেত্রে আদালত অভিযোগ গ্রহণ করতে পারে। যদি সরকারি আইনজীবী অভিযোগ দায়ের করেন। যাঁর সম্পর্কে এসব মন্তব্য করা হয়েছে, তিনি যেহেতু পদে রয়েছেন, তাই অভিযোগ গ্রহণ করা যায়। তাই শুনানির এই পর্যায়ে এই যুক্তিটিও গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে অভিযুক্তের চেয়ে অভিযোগকারীর বক্তব্যকে জোরদার বলে বিবেচনা করা হলো। আদালত মনে করে, শ্রী বাগচীর বিরুদ্ধে শুনানি চালানোর মতো যথেষ্ট তথ্য রয়েছে। তাই ভারতীয় ন্যায় সংহিতা ৩৫৬ ও ৩৫৬ (২) ধারা অনুযায়ী কৌস্তভ বাগচীর বিরুদ্ধে সমন জারির নির্দেশ। এই অভিমত সহ ১৯ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন ঘোষণা বিচারকের।
উল্লেখ্য, বিএনএস ৩৫৬ অনুযায়ী মানহানির অভিযোগ বিচার করা হয়। কারও সম্মান, সম্ভ্রম মিথ্যা অভিযোগ দ্বারা নষ্ট করার অভিযোগে এই ধারা যুক্ত হয়। ৩৫৬ (২) অনুযায়ী মানহানির জন্য সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাবাস বা জরিমানা ধার্য হয়।
দেখুন অন্য খবর: