কলকাতা: বছর ঘুরলেই রাজ্যের বিধানসভা ভোট (WB ASSembly Election 2026)। বুধবারের ডায়মন্ড হারবারে দাঁড়িয়ে বিধানসভা ভোটের ফলাফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। অভিষেকের কথায়, “ছাব্বিশের ভোটে বিজেপি নাকি বাংলার ক্ষমতা দখল করবে বলছে! গতবারের নির্বাচনে ওরা ৭৭টা আসন পেয়েছিল, এবারে ওরা ৫০-এর নীচে আটকে যাবে। আজকের সভা থেক আমি এই ভবিষ্যদ্বাণী করে গেলাম।”
সাংসদ হবার পরে বিষ্ণুপুর মাঠে প্রথম সভা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিনের আয়োজিত সভার নাম ‘নিঃশব্দ বিপ্লব’। প্রতিবারই এই সভা করেন থাকেন তৃণমূল সাংসদ। সেখান থেকে আজ উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরেন তিনি। তৃণমূল সাংসদ বলেন, এত মানুষের উপস্থিতিতে আমি ধন্য। যারা ডায়মন্ড হারবার মডেল নিয়ে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ করেন তাঁদের যেন পাঠানো হয়। মিডিয়াকেও এই বই দেওয়া হয়। আমার সাংসদ তহবিল থেকে কোন কাজ হয়েছে সেই হিসাব আছে। প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠার বই। ডায়মন্ড হারবার বিস্তীর্ণ এলাকায় যে কাজ গুলি করতে সক্ষম হয়েছি তারই খতিয়ান প্রকাশ করেন এদিন। সাংসদ তহবিল থেকে ৫ কোটি টাকার খতিয়ান রয়েছে। এটা পঞ্চায়েত নয়, বিধানসভায় নয় শুধু মাত্র লোকসভা তহবিল থেকে ব্যবহৃত টাকার কাজের খতিয়ান। বিরোধী দল গুলিকে চ্যালেঞ্জ করেন অভিষেক। এভাবে কোনও সাংসদ কখনও কাজের খতিয়ান কি দিয়েছে। গত ১৪ বছর ধরে আমরা যা কথা দিয়েছি তার খতিয়ান রেখেছি। আমতলাতে বাস টার্মিনাস করে দিয়েছি। ডায়মন্ড হারবারে ৭৬ হাজার নাগরিক কে বার্ধক্য ভাতা দেওয়ার প্রত্যাশা পূরণ। ৭ জানুয়ারি ২০২৫ বার্ধক্য ভাতা বন্ধের প্ররোচনা করেছিল বিজেপি। ইনকাম টাস্ক দিয়ে চিঠির মাধ্যমে বার্ধক্যভাতা বন্ধের চেষ্টা করেছিল। ৭৫ হাজার নাগরিকের বাড়িতে এই চিঠির কপি পৌঁছে দেব। ভয় দেখিয়ে মেরুদন্ড বিক্রি হবে না। আমরা বশ্যতা শিকার নয়।
২০১৯ সে আমাদের দেশ বিরোধী আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। বাংলা তে কথা বললে বাংলাদেশি বলে কটাক্ষ করা হত। আমরা যখন অপরেশন সিদুরের সাফল্যে কথা বলছি , মোদি , শাহ বাংলায় এসে আমাদের নামে কুৎসা করে যাচ্ছেন। বিজেপি বাংলাতে পরাজিত তাই হিংসার বঞ্চনার রাজনীতি করছে। মহেশতলা ঘটনাকে কেন্দ্র করে নোংরা রাজনীতি করেছে বিজেপি। এরা সর্বদায় লাশের রাজনীতি করে। ৫ বছর ধরে গরীব মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা বন্ধ রেখে, কিসের উল্লাস করছেন আপনারা। আমি যা কর্মসূচি করি সব কিছু বন্ধের পরিকল্পনা করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। সিবিআই, ইডি দিয়ে আমায় আটকাবেন? আপনারা দিল্লির যে নেতাদের পাজামার দড়ি ধরে রাজনীতি করেন আমরা ভয় পাই না। গলা কাটলেও জয় বাংলা বেরবে।
আরও পড়ুন: ওবিসি মামলা, হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ রাজ্য সরকার
সুপ্রিম কোর্টে ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, SSC কেউ অন্যায় করে চাকরি পেয়ে থাকলে পুরো প্যানেল বাতিল করতে হবে, এটা কি ধরনের রায়। একজনের অপরাধের ভাগীদার কেন অন্যদের করা হবে। আমাদের সরকার কে ছোটো করতে গিয়ে হিন্দু ধর্মের রক্ষা করতে হিসেবে যারা দাবি করেন তারা জগন্নাথ মন্দির হবার পর কিভাবে অপপ্রচার করছে। বিজেপি দাবি করছে আমাদের সরকারের থেকে নাকি ইউনূস সরকার ভালো। আরজি করের ব্যর্থতার জন্য যদি পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের অপসারণ হয়। তাহলে পাহেলগাঁও জঙ্গি হামলার নৃশংস হতার দায় স্বরূপ প্রধান মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর অপসারণ দাবি করা হবে না? আমাদের একটাই ধর্ম সেটা মানব ধর্ম। 2 কোটি 20 লক্ষ মানুষ কে লক্ষ্মীর ভান্ডার দিয়েছে। আপনার বলছেন 3 হাজার দেবেন?আগে একটা রাজ্যে ১৫০০ করে দিয়ে দেখান।
আজ জগন্নাথ মন্দিরকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতে গিয়ে শুভেন্দু বলছে ওটা মন্দির নয়। সুকান্ত মজুমদার বলছেন ওইটা সার্কাস। যাঁরা হিন্দুদের রক্ষা কর্তা বলে তারাই এইসব বলে। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাই এই মন্দির না তৈরি করলে আপনারা আসল চেহারা দেখতে পেতেন না। ছাব্বিশের ভোটে বাংলায় অপারেশন সিঁদুর অভিযানের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বঙ্গ-বিজেপির নেতারা। এদিনের সভা থেকে ওই প্রসঙ্গেও অভিষেক বলেন, “অন্যান্য রাজ্যের মতো এখানেও বিধানসভা ভোটের আগে ওরা অপারেশন সিঁদুরের নামে এমএলএ কেনাবেচা করতে চায়। তবে এটা বাংলা। এখানে বিজেপির ওই অপচেষ্টা সফল হবে না।”অভিষেক বলেন, “আমি সচরাচর কোনও বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করি না। আর করলে ইশ্বরের কৃপায় তা অল্প হলেও মিলে যায়। দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে কটাক্ষ করে অভিষেক বলেন, “আমি এই ধরনের কথা বলতে চাই না, কিন্তু আপনি যেভাবে ক্রমাগত আমার নেত্রীকে নিয়ে কুকথা বলেন, তাতে বলতে বাধ্য হচ্ছি, “তুমি দাদা থেকে কাকা, কাকা থেকে জেঠু, জেঠু থেকে দাদু হয়ে যাবে, তবু তৃণমূলকে মানুষের হৃদয় থেকে আগামী ৫০ বছর সরাতে পারবে না। দম থাকলে আমার চ্যালেঞ্জ ভেঙে দেখাও।”
দেখুন ভিডিও