কলকাতা: দিলীপ ঘোষ এবং শুভেন্দু অধিকারী৷ বঙ্গ বিজেপির দুই হেভিওয়েট নেতা৷ দু’জনেই বসে দুটি ওজনদার পদে৷ কিন্তু কখনও কখনও দ্বিতীয়জনের ক্রিয়াকলাপ প্রথমজনের পদ ও সম্মানের পক্ষে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ তাতে জটিলতা বাড়ছে বঙ্গ বিজেপিতেও৷ শুভেন্দুর কাজকর্মে অখুশি দলের বিধায়কদের একটা বড় অংশ৷ যার মধ্যে রয়েছেন দলবদলুরাও৷ বিরক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে কেউ কেউ তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছেন৷ একুশের ভোটে বিপর্যয়ের পর বিজেপির তৃণমূল স্তরে এমনিতেই ধস নেমেছে৷ সেই ধস যদি উপরতলেও শুরু হয় তাহলে ৭৭ থেকে উল্টোদিকে কাউন্টডাউন শুরু হতে বেশি সময় লাগবে না৷
আরও পড়ুন: বিজেপি যুব মোর্চায় সৌমিত্রর একনায়কতন্ত্র, সম্মান নেই মহিলাদের, দিলীপ ঘোষকে লিখিত অভিযোগ
বিজেপির দলতন্ত্র অনুযায়ী, সভাপতি পদই হল সবচেয়ে বড়৷ দেশের ক্ষেত্রে যেমন সর্বভারতীয় সভাপতি, তেমন রাজ্যের ক্ষেত্রে রাজ্য সভাপতি৷ পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি পদে এখনও বহাল দিলীপ ঘোষ৷ সূত্রের খবর, একুশের ভোটে বিপর্যয়ের পর ওই পদ থেকে তাঁকে সরানো নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দলের এক অংশ৷ এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে দলে গুরুত্ব বেড়ে গিয়েছে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা শুভেন্দু অধিকারীর৷ তাঁকে বিরোধী নেতার পদে বসিয়েছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব৷ শুভেন্দুও নিষ্ঠার সঙ্গে সেই ভূমিকা পালন করছেন৷ নিয়ম করে রোজ রাজ্য সরকারের সমালোচনা করছেন৷ রাজভবনে গিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে আসছেন৷ যদিও কারও কারও মতে, বিরোধী নেতা হিসেবে শুভেন্দু যেন অতিরিক্ত সক্রিয়তা দেখাচ্ছেন৷ যা বিড়াম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিজেপির কাছে৷ শুভেন্দুর অতিসক্রিয়তা মেনে নিতে পারছে না দলের বিধায়কদের একাংশ৷ তাই বিরোধী নেতা ডাকলেও সেই ডাক উপেক্ষা করছেন তাঁরা৷
এই যেমন আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং পিএসি-র চেয়ারম্যান থেকে মুকুল রায়ের অপসারণের দাবিতে একাধিকবার রাজভবন গিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী৷ সঙ্গে যান দলের ৫০ জন বিধায়কও৷ কিন্তু শুভেন্দুর রাজভবন ‘সফরে’ বাকি বিধায়কদের অনুপস্থিতি নজর এড়ায়নি রাজনৈতিক মহলের৷ যা নিয়ে চাপা গুঞ্জন তৈরি হয় দলের অন্দরে৷ তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জল্পনার আগুনে ঘি ঢেলে দেন৷ জানতে চান, কোথায় বিজেপির অনুপস্থিত নেতারা? শুভেন্দুর উচিত বিধায়কদের ঠিক মতো খেয়াল রাখা৷
আরও পড়ুন: বোলপুরে এক টেবিলে অনুব্রত-পরমব্রত, আলোচনায় অভিনয় না রাজনীতি?
এরই মধ্যে বেসুরো হয়ে পড়েন সুনীল মণ্ডল৷ শুভেন্দুর সঙ্গে যিনিও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে এসেছিলেন৷ দিন কয়েক আগে তাঁকে দেখা যায় দিল্লিতে মুকুল রায়ের বাড়িতে মুখ লুকিয়ে ঢুকতে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লি সফরের আগে হুট করে মুকুলের বাড়ি গিয়ে সুনীলের ঢুঁ মেরে আসা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ শোনা যাচ্ছে, শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ এই নেতা এখন তৃণমূলে ফেরার চেষ্টা করছেন৷ সুনীল একা নয়, তৃণমূলে পা বাড়িয়ে রয়েছেন একাধিক বিধায়ক৷ সূত্রের খবর, অধিকাংশ নেতাই শুভেন্দুর মাথার উপর ছড়ি ঘোরানো মেতে নিতে পারছে না৷ শুভেন্দুর এই মনোভাব বজায় থাকলে বিজেপির উঁচুস্তরে ভাঙন এই লাগল বলে৷