হুগলি: হুগলির (Hooghly) প্রাচীন ও সমৃদ্ধ গ্রাম হরিপালের (Haripal) অন্তর্গত শ্রীপতিপুর পশ্চিমগ্রাম (Paschimgram)। এই নীরব গ্রামের অধিকারী পরিবারে টানা ৭৫ বছর ধরে পূজিতা হচ্ছেন মা ‘সবুজ কালী’—যার গায়ের রং কালো নয়, নীলও নয়, বরং একেবারে সবুজ। দর্শনার্থীদের কাছে তাই বিস্ময় ও ভক্তির এক অদ্ভুত সমাহার (District news)।
এই পরিবারের ভিটেতে জন্ম নেন এক দরিদ্র গোঁড়া বৈষ্ণব পরিবারের বটকৃষ্ণ অধিকারী। ছোটবেলা থেকেই বৈষ্ণব আচরণে বড় হওয়া এই তরুণ ম্যাট্রিক পাশ করে কিছুদিন ভিনরাজ্যে চাকরি করেন। পরে ফিরে এসে আবার কৃষিকাজে মন দেন।
আরও পড়ুন: শিমুরালির কালীগঞ্জ বাজারে নদীর তীরের নতুন আকর্ষণ ‘লাভ বার্ডস’ পিকনিক স্পট
পরিবারের চাপে বিয়ে হলেও সংসারে বিশেষ মন ছিল না তাঁর। মাঠ–ঘাট, শ্মশানই যেন ছিল তাঁর ধ্যানের জায়গা। একদিন গরুর খুঁটা বাঁধার সময় তাঁর পিছনে এসে দাঁড়ান সাদা বস্ত্রধারী এক সন্ন্যাসী। তিনি জানান, “অমুক স্থানে অমুক সময়ে তোমার দীক্ষা হবে।” এরপরের ঘটনাগুলির সবটাই রহস্যে ঢাকা।
সাধনায় সিদ্ধিলাভের পর বটকৃষ্ণ অধিকারী কৃষ্ণ ও কালীর সাক্ষাৎ পান। কিন্তু তাঁর কুলীন বৈষ্ণব পরিবার যেখানে জল স্পর্শের আগেও রাধা–গোবিন্দের নাম উচ্চারণ করেন, সেই বাড়িতে কালী পুজো হবে—তৎকালীন সমাজ নেতারা প্রথমে প্রবল আপত্তি জানান। তবুও সব বাধা অতিক্রম করে তিনি বাড়িতে স্থাপন করেন ‘মা কালীর ঘট’।
পরবর্তীতে স্বপ্নাদেশ আসে মাতৃমূর্তি প্রতিষ্ঠার। কিন্তু বিস্ময়, মূর্তিটি কালো বা নীল নয়, বরং দুর্বার সবুজ রঙের, যেখানে কৃষ্ণ ও কালী একাকার। কৃষ্ণ ও শ্যামার আদেশে বটকৃষ্ণ অধিকারী রটন্তী কালীপুজোর দিন প্রতিষ্ঠা করেন সবুজ কালিমাতা।
রটন্তী কালী পুজোর পিছনে রয়েছে এক মনোমুগ্ধকর পুরাণকথা। শ্রীকৃষ্ণ ও রাধিকার লীলা জানতে পেরে রাধিকার স্বামী আয়ন ঘোষ সেখানে এসে পড়েন। রাধিকাকে রক্ষা করতে কৃষ্ণ নিজেই কালী রূপ ধারণ করেন—যা পরিচিত কৃষ্ণকালী নামে। রাধিকার কালীপুজো ‘রটে’ গিয়েছিল বলে এই তিথির পূজাকে বলা হয় রটন্তী কালীপুজো।
বর্তমানে বটকৃষ্ণ ঠাকুরের পুত্র কালিপদ অধিকারী (পণ্ডিত শিবানন্দপুরী) এই পঞ্চমুন্ডীর মন্দিরে সাধনা করে চলেছেন। সারা বছরই এই বৈষ্ণব বাড়িতে চলে সবুজ কালীর নিত্যপুজো। রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে ভক্তরা ছুটে আসেন এই বিস্ময়কর দেবীর দর্শনে। এবছর মা সবুজ কালীর পুজোর ৭৫ তম বর্ষ। সেই উপলক্ষে অধিকারী পরিবার তৈরি করেছে নতুন মন্দির। যা দেখতে হুবহু এক টুকরো কালীঘাট মন্দির। আসন্ন রটন্তী কালীপুজোর দিনই হবে উদ্বোধন।
বর্তমানে গ্রামে উৎসবের প্রস্তুতি, সাজসজ্জা, আয়োজন—সব মিলিয়ে ব্যস্ততার চরমে অধিকারী পরিবার ও গ্রামবাসী। শুধু সবুজ কালী নয়, এবার কালীঘাট–সুলভ নতুন মন্দির দেখার জন্যও ভিড় জমাবেন ভক্তরা।
দেখুন আরও খবর: