কলকাতা: অনেক ঝড়ঝাপটা গিয়েছে তাঁর উপর দিয়ে। তবু তিনি দমেননি। বিভিন্ন সময় প্রতিকূলতা ঠেলে এগিয়ে গিয়েছেন সামনের দিকে। মানুষের ভালোবাসাই তাঁকে শক্তি দিয়েছে। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্যকে এমনটাই জানালেন বর্ষীয়ান আইনজীবী এবং তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিচারপতিকে নানান কথা বলতে গিয়ে আবেগে ভেসে গেলেন কল্যাণ। বিচারপতির এক প্রশ্নের জবাবে প্রবীণ এই আইনজীবী জানিয়ে দিলেন, তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন।
দলের মধ্যে হোক কিংবা কোর্ট রুমেই হোক, কল্যাণ মুখ খুললেই ওঠে নানা বিতর্ক। সম্প্রতি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্যকে ঘিরে ফের বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন কল্যাণ। করোনা পরিস্থিতিতে আগামী ২ মাসের জন্য সমস্ত রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখা উচিত বলে ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করেছিলেন অভিষেক। তার বিরোধিতা করে কল্যাণ বলেন, একটি দলের এরকম গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীর ব্যক্তিগত মতামত বলে কিছু থাকতে পারে না। অভিষেকের নির্বাচনী কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে কিছু কর্মসূচিরও সমালোচনা করেন কল্যাণ। তাঁর মন্তব্য ছিল, আমার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা ছাড়া কারও নির্দেশ আমি মানি না। তৃণমূলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি প্রবীণ সাংসদকে সতর্কও করেন। বৃহস্পতিবার গোয়ায় এক সাংবাদিক বৈঠকে কল্যাণকে সমর্থন করে চমক দেন অভিষেক। তিনি বলেন, আমিও তো বলি, আমার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কল্যাণও তাই বলেছেন। এর থেকেই বোঝা যায় তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র রয়েছে।
আরও পড়ুন:Kunal Ghosh: আবেগের রাজনীতি করছে, নেতাজিকে প্রকৃত সম্মান করে না বিজেপি: কুণাল
এদিন কলকাতা হাইকোর্টে রেশন ডিলারদের একটি মামলার শুনানি চলছিল। কল্যাণ রেশন ডিলারদের পক্ষে সওয়াল করেন। শুনানির শেষ পর্বে বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্য কল্যাণকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ আছেন?’ জবাবে প্রবীণ আইনজীবী জানান, তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ ও মানসিকভাবে অ্যালার্ট রয়েছেন।
কথা প্রসঙ্গে পুরনো স্মৃতিতে ফিরে যান কল্যাণ। তিনি জানান, জীবনে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন। ভিখারী পাসোয়ান মামলা চলাকালীন তাঁর ছেলেকে অপহরণ করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তিনি নিজে পরিস্থিতি সামাল দেন। তার পরেও বিভিন্ন সময়ে বহু সমস্যার মুখে পড়েছেন। কিন্তু তিনি দমেননি। দিনকয়েক আগে তাঁর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের একাংশ বিক্ষোভ দেখান। সেই প্রসঙ্গ সরাসরি না টেনে কল্যাণ জানান, তাঁর জুনিয়রদের মধ্যে অনেকেই আজ বিচারপতি। প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তের নাম না করে তিনি বলেন, আমার এক জুনিয়র অ্যাডভোকেট জেনারেলও হয়েছিলেন। সবার ভালোবাসা নিয়েই তিনি ভবিষ্যতে এগিয়ে যাবেন।
কল্যাণের এদিনের মন্তব্য নিয়েও নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। তিনি সহজে দমার পাত্র নন বলে কি কল্যাণ ঘুরিয়ে অভিষেককেই বার্তা দিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।