কলকাতা: মানুষের জীবনটাই যেন ঘড়ির (Clock) সঙ্গে ঘুরছে তা বলাই বাহুল্য। আর প্রত্যেক মানুষের কাছেই সময় খুবই দামী। সকালের ব্রেকফাস্ট থেকে শুরু করে রাতের ডিনারের সময়, ক্ষিধের থেকেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঠিক করে দেয় ঘড়ি। কিন্তু শোরুমে ঘড়ি কিনতে গিয়ে দেওয়াল ঘড়ি হোক অথবা রিস্ট ওয়াজ যে কোন কিছুতেই দেখা যায় ১০ টা ১০ মিনিট। জানেন কেন এমনটা করা থাকে। কেন এমনই একটা বিশেষ সময়ে থামিয়ে রাখা থাকে দোকানের ঘড়ির কাঁটা? এর পিছনে রহস্য টাই বা কি? এর কারণ ঘিরে বহু মতভেদ রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
একটি বিশেষ ঘটনা এই সময়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। দিনটা ছিল ১৪ এপ্রিল শুক্রবার, ১৯৬৫। ক্যালেন্ডারের ভাষায় ‘গুড ফ্রাইডে’। ঘড়িতে তখন রাত দশটা বেজে দশ মিনিট। ওয়াশিংটন ডিসির ফোর্ড থিয়েটার বক্সে বসে নাটক দেখছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষোড়শ প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংঙ্কন ও তার স্ত্রী। নাটকের নাম ‘আওয়ার আমেরিকান কাজিনস’। নাটক চলাকালীন আচমকা বক্সে ঢুকে পড়েন জন উইলকিস বুথ নামে এক অভিনেতা। বুথের হাতে একটা পিস্তল। সেই পিস্তলের নলটা প্রেসিডেন্টের ঘাড়ে ঠেকিয়ে তিনি ট্রিগারে চাপ দিলেন। চেঁচিয়ে উঠলেন আমেরিকার ফার্স্ট লেডি মেরি টোড লিংঙ্কন। মেজর হেনরি রথবোন ছুটে এসে আততায়ীকে জাপটে ধরলেন। বুথ তাঁকেও ছুরি মেরে মঞ্চের পেছনের ভাঙা দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়। সেই সময় থকেই নিহত মার্কিন প্রেসিডেন্টের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানাতে পৃথিবীর সব বিজ্ঞাপনের ঘড়িতে ১০টা বেজে ১০ মিনিটে থেমে থাকে বলে মনে করা হয়। কারণ, এই সময়েই নিহত হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানানোর জন্যেই এই ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন:King Charles Coronation | চার্লসের অভিষেকে আগ্রহই নেই ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতার
আবার অনেকের মতে দশটা বেজে দশ সময়টি বেছে নেওয়ার একটি ঐতিহাসিক কারণ আছে, অনেকেই মনে করেন যে হিরোশিমায় পারমানবিক বোমা ফেলা হয়েছিল, ঠিক এই সময়। যে কারণে ঘড়ি নির্মাতারা নাকি এই সময়টিকে বেছে নেন। হিরোশিমায় মৃত্যুবরণ করা প্রত্যেকটি মানুষের উদ্দেশ্যে সহানুভূতি প্রকাশ করতেই এমনটা করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
ঘড়ি সংস্থার কর্ণধারদের মতে, ঘড়ির কাঁটা দুটি এই পজিশনে থাকলে এতে কোম্পানির লোগো দেখতে সমস্যা হয় না। এছাড়া সিমেট্রি থাকে দুটি কাঁটার মাঝে। তবে ৩টা ১৫ বা ৪টা ২০ থাকলেও একই সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু ১০টা ১০-এ ঘড়ির কাঁটা দুটো দেখতে অনেকটা উপরে ওঠানো হাতের মত লাগে, যা দেখতে বেশি সুন্দর লাগে। এছাড়াও আরও কিছু বৈজ্ঞানিক বিষয় আছে। যেমন, ঘড়ির কাঁটা ১০টা ১০ মিনিটে রয়েছে দেখে মনে হয় যেন, দুটো কাঁটা দুদিকে সমানভাবে হাত মেলে আছে। মনে হবে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে। একটা প্রতিসাম্য অবস্থা, পরিপাটি ছিমছাম লাগে দেখতে, দৃষ্টিনন্দন। তাই ঘড়ির সব বিজ্ঞাপনদাতা এই কায়দাটা অনুসরণ করেন।
এদিকে, আবার ১০টা ১০-এর মধ্যে অনেকে একটা হাসির ছবি খুঁজে পান। মনে হয় ঘড়িটা হাসছে। তা দেখে অনেকে ক্রেতাই আকর্ষিত হন বলে মনে করা হয়। অন্যদিকে, বেশীরভাগ ঘড়িতেই কোম্পানির লোগো মাঝ বরাবর রাখা হয়, যেমন, ১২টার ঠিক নীচে বা ঘড়ির ঠিক মধ্যেখানে বা নীচের ছটার ঠিক ওপরে। তাই কাঁটা দুটো ১০টা ১০-এ থাকলে স্পষ্টভাবে কোম্পানির লোগোটা দেখা যায়। অনেক কোম্পানি ঘড়ির কাঁটা অন্যভাবে রেখে পরীক্ষা করে দেখেন, বেশীরভাগ ক্রেতাই ১০টা ১০ বেজে থাকা ঘড়িটি নিতে চান। তারপর আর কেউ কাঁটা বদলানোর রিস্ক নেয়নি।