কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: ১০৮টি পুরসভার ভোটে (WB Civic Polls Result) এবার শাসকদল তৃণমূলের একটা বড় মাথাব্যথা ছিল নির্দল-কাঁটা। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর গত ১১ বছরে পুরসভা বা পঞ্চায়েত ভোটে নির্দল প্রার্থীদের নিয়ে শাসক গোষ্ঠীকে কখনও মাথা ঘামাতে হয়নি, যা হয়েছে এবারের পুরভোটে (Municipal Election)। বুধবার বেলা ৩টে পর্যন্ত রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নির্দল প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ১১৩ জন। আসন সংখ্যার বিচারে বলা যেতেই পারে, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন এই নির্দল প্রার্থীরা।
এই পুরভোটে (WB Civic Polls) প্রার্থী তালিকা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে প্রথম থেকেই নানা জটিলতা ছিল। তালিকা প্রকাশের দিনই শাসকদলের অফিসিয়াল পেজে একটি তালিকা বেরিয়ে যায়। তারপরে প্রকাশ হয় আরও একটি তালিকা। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে দাবি করা হয়, প্রথম তালিকাটি স্বীকৃত নয়। সমস্যা শুরু হয় তখন থেকেই। অনেক জেলায় প্রথম তালিকা অনুযায়ী, অনেকে মনোনয়নপত্র পেশ করেন। বহু ক্ষেত্রে আবার ক্ষোভ ছিল দ্বিতীয় তালিকা নিয়েও। দুটি ক্ষেত্রেই তালিকার অনেক নাম নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। এই অবস্থায় টিকিট প্রত্যাশী বহু নেতা বা বিদায়ী কাউন্সিলর নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে টিকিট প্রত্যাশীরা আবার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় পরিজনদের নির্দল হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন।
তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার দলের এই বিক্ষুব্ধ নির্দলদের হুমকি দিয়েছেন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার জন্য। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা প্রত্যাহার না করলে কিংবা লিফলেট বিলি করে প্রার্থীপদ না তুললে বহিষ্কার করা হবে। নেতৃত্বের নির্দেশমতোই জেলায় জেলায় অনেক নির্দল প্রার্থীকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করতে হয়েছে জেলার নেতাদের সাংবাদিক বৈঠক ডেকে। একশোরও বেশি বিক্ষুব্ধ নির্দলকে বহিষ্কার করা হয়। রবিবার ভোটের দিন এই নির্দলদের সঙ্গে শাসকদলের বিস্তর ঝামেলাও হতে দেখা গিয়েছে। কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র পর্যন্ত পুলিসের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করার অভিযোগে সরব হন। তিনি বলেন, আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পুলিসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করব। ভোটের আগে প্রার্থী তালিকা নিয়ে অসন্তোষ ছিল প্রবীণ বিধায়ক মদনেরও। ভোটের দিন মদনের মুখ খোলার পিছনেও ছিল নির্দলদের নিয়ে অসন্তোষের বিষয়টি।
আরও পড়ুন: Hamro Party Darjeeling: ঘাসফুল নয়, পদ্মর নয়, দার্জিলিং ‘হামরো পার্টি’র
ভোটের আগেই তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব পরিষ্কার জানিয়ে দেন, বিক্ষুব্ধ নির্দল কেউ জিতলে তাদের দলে ফেরানো হবে না। বুধবার বিকেল পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে, এগরা, চাঁপদানি এবং বেলডাঙা পুরসভায় ফলাফল হয়েছে ত্রিশঙ্কু। আবার ঝালদাতেও ফল ত্রিশঙ্কুই হয়েছিল। বেলার দিকে দুই নির্দল প্রার্থী তৃণমূলকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত ঝালদা তৃণমূলের দখলে যায়। শাসকদলের একটি সূত্রে দাবি করা হয়, চাঁপদানি, ঝালদা ও বেলডাঙায় নির্দল প্রার্থীরা তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থন করবেন। তবে এ ব্যাপারে সন্ধা পর্যন্ত শাসকদল সরকারিভাবে তাদের অবস্থান জানায়নি।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিকেল পর্যন্ত তৃণমূল পেয়েছে ১৫৫৪ ওয়ার্ড। নির্দল ১১৩টি, বিজেপি ৬২, কংগ্রেস ৫৬, সিপিএম ৪১, সিপিআই ৩, আরএসপি ১, ফরওয়ার্ড ব্লক ৩টি পেয়েছে। এটি অবশ্য চূড়ান্ত হিসেব নয়।