কেতুগ্রাম: এক বাড়িতে সাতটি আলাদা আলাদা দুর্গা পুজো৷ কেতুগ্রামের খাটুন্দী গ্রামের ভট্টাচার্য পরিবারের পুজোর এটাই মূল আকর্ষণ৷ একই বাড়ির উঠানের মধ্যে পাশাপাশি ছ’টি মন্দিরে ধুমধাম করে দুর্গা পুজো হয়৷ প্রত্যেকটি পুজো হয় একই সঙ্গে ও আলাদা আলাদা ভাবে৷ পাশের একটি আলাদা উঠানে মন্দিরে ঘট পুজোর মাধ্যমে সাত নম্বর দুর্গা পুজোটি হয়৷ ভট্টাচার্য পরিবারের এই পুজো সাত বাড়ির দুর্গা পুজো নামেই বেশি খ্যাত৷ আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছরের বেশি আগে শ্রীচৈতন্যদেবের দীক্ষা গুরু কেশব ভারতী এই দুর্গা পুজোর প্রতিষ্ঠা করেন৷
আরও পড়ুন: আগামী ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গ থেকে বিদায় বর্ষার
প্রথমদিকে এখানে একটি দুর্গা প্রতিমাতেই পুজো শুরু হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে পরিবারের মধ্যে দুর্গাপুজো নিয়ে নানা মতবিরোধ দেখা দেয়৷ তখন তিনটি আলাদা আলাদা ভাবে পুজোর প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তীকালে পারিবারিক ভাগাভাগির জেরে পুজোগুলিও ভাগাভাগি হয়ে শেষ পর্যন্ত দাঁড়ায় সাতটি আলাদা আলাদা দুর্গা পুজোতে। একটি ছাড়া বাকি ছ’টি পুজোর কাঠামো একই ধরনের৷ পুতুলের দুর্গা প্রতিমা গড়া হয় প্রতিবছর। পুজো ভাগ হলেও ভট্টাচার্য বাড়ির দুর্গাপুজোয় পারস্পরিক সম্প্রীতির কোনও অভাব নেই। প্রতি বছর সবাই মিলেমিশেই পারিবারিক পুজোর আয়োজন করেন৷ এই পুজোয় বৈষ্ণব ও শাক্ত মতের অদ্ভূত সহাবস্থান দেখা যায়। এখানে পাঁচটি দুর্গা পুজোতে ছাগ বলির প্রথা রয়েছে। আর একটি পূজা হয় সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে।
আরও পড়ুন: মাটির সরায় তৈরি দেবী দুর্গাই এখন আকর্ষণের মূল কেন্দ্রে
এখানকার পুজো মণ্ডপের পাশেই রয়েছে কৃষ্ণ রাইরের মন্দির ও একটি শিব মন্দির। দুর্গা পুজোর সময় পারিবারিক পুরানো প্রথা অনুযায়ী প্রথমে কৃষ্ণ রাইকে ভোগ নিবেদন করা হয়৷ তার পরই মা দুর্গাকে ভোগ নিবেদন করা যায়। দশমীতে ঠাকুর বিসর্জনের সময় কৃষ্ণ রাইরের মন্দিরের সামনে পাশাপাশি ছয়টি প্রতিমাকে রেখে আরতি করা হয়। এর পর বিসর্জনের জন্য প্রতিমা গুলিকে পুকুরে দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। বছরের পর বছর ধরে বংশ পরম্পরায় খুব নিষ্ঠা ও মহাধুমধামের সঙ্গে পারিবারিক সাত বাড়ির দুর্গা পুজোর ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন ‘খাটুন্দী’ গ্রামের ভট্টাচার্য বাড়ি।