কলকাতা: পেশায় তিনি চিকিৎসক৷ কিন্তু যা সব কাজকর্ম করে বেড়াচ্ছেন সেগুলোকে মোটেই চিকিৎসকসুলভ বলা যাবে না৷ অভিযোগ, কখনও নিজের পেশাকে কাজে লাগিয়ে নার্সিংহোমে রোগী ভর্তির নামে টাকা আদায় করেন৷ আবার কখনও নিজেকে প্রভাবশালী জাহির করে শ্লীলতাহানির পর নার্সকে হুমকি দেন৷ সম্প্রতি কলকাতার লেডি ডাফরিন হাসপাতালের রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসার রাজেশ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণা এবং শ্লীলতাহানির মতো পরপর গুরুতর অভিযোগ উঠেছে৷ দুটি ঘটনার ক্ষেত্রে মুচিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে৷ পুলিস জানিয়েছে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ হাসপাতালের কমপ্লেন্টস কমিটি শনিবার দুপুরে ওই নার্স এবং চিকিৎসককে ডেকে পাঠিয়েছে৷
রাজেশের কুকীর্তি ফাঁস হওয়ার পর তাঁর পরিচিত চিকিৎসকদের একাংশের লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে৷ বলছেন, ‘ওঁর নামে অল্পবিস্তর অভিযোগ কিছু শুনতে পেতাম বটে৷ সেগুলো সত্যি না মিথ্যে বোঝা যেত না৷ কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে সবই সত্যি৷’ তাঁদের কথায়, এই সব চিকিৎসকের জন্য পেশার বদনাম হয়৷ মানুষ চিকিৎসকদের উপর ভরসা হারিয়ে ফেলেন৷ আসলে অল্প সময়ে নাম-যশ-খ্যাতি-অর্থ চলে এলে সেগুলো এদের মাথায় চড়ে বসে৷ তার উপর ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে গেলে তখন ধরাকে সরা ভাবতে শুরু করে৷ সেখান থেকেই পতনের শুরু৷
সম্প্রতি রাজেশের লোভের শিকার হন রাজু মহেশ নামে এক যুবক৷ অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন হাসপাতালের প্রভাবশালী ডাক্তারবাবু রাজেশ বিশ্বাসের কাছে৷ পুতুলের খুঁটিনাটি পরীক্ষার পর জানিয়েছিলেন, অবস্থা ভালো নয়৷ কলকাতা মেডিক্যালে প্রসব করাতে হলে সমস্যা হতে পারে। প্রাণনাশের আশঙ্কার থাকতে পারে৷ উপায় হিসেবে লেডি ডাফরিন ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে সন্তান প্রসবের ‘পথ’ দেখিয়েছিলেন রাজেশ৷ স্বল্পশিক্ষিত রাজুকে তিনি বোঝাতে পেরেছিলেন, লেডি ডাফরিন বেসরকারি হাসপাতাল৷ সেখানে অপারেশনের অনেক খরচ৷ রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান নির্মল মাজির সঙ্গে কথা বলে কম খরচে তিনি রাজুকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন৷ তারপরই রাজুর কাছে ১২ হাজার টাকা নেন রাজেশ৷ পরে রাজু জানতে পারেন লেডি ডাফরিন সরকারি হাসপাতাল৷ সেখানে রোগী ভর্তির জন্য কোনও টাকা লাগে না৷ বুঝতে পারেন, চিকিৎসকের মোড়কে রাজেশ একজন প্রতারক৷ নার্সিংহোমের মিথ্যে তত্ত্ব খাড়া করে ১২ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে৷
এই ঘটনার দিন কয়েক পরই রাজেশের লালসার শিকার হতে হয় এক নার্সকে৷ তাঁর অভিযোগ, ২৩ তারিখ সন্ধ্যায় ওটিতে ঢোকার আগে ওই চিকিৎসক তাঁকে নোংরাভাবে স্পর্শ করেন৷ তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন৷ এমনকী অশ্লীল ইঙ্গিতও দেন৷ নার্সের আরও অভিযোগ, এর আগে মেডিক্যাল কলেজে নার্সিং পড়ার সময় তাঁকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন ওই চিকিৎসক৷ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি৷ উল্টে বিষয়টি চেপে যাওয়ার কথা তাঁকে বলা হয়৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা না পেয়ে বাধ্য হয়ে তিনি মুচিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন৷ নির্যাতিতা অবশ্য পাশে পেয়েছেন নার্সদের সংগঠনকে৷ শনিবারই হাসপাতালে এই ঘটনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে তারা৷