কলকাতা: লাল গোলাপগুলো তখনও তরতাজা৷ আতরের গন্ধটাও মুছে যায়নি৷ হাজারো রজনীগন্ধার মাঝে মুখটা যেন জ্বলজ্বল করছিল৷ রবীন্দ্র সদনে তৈরি মঞ্চ থেকে দেহটা রওনা দিল কেওড়াতলার পথে৷ হাজারো মানুষকে সঙ্গে করে হাজারো স্মৃতিকে কাঁদিয়ে লক্ষ শ্রোতার মাঝে৷
গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের শেষকৃত্যকে বোধহয় এভাবেই বর্ণনা করা চলে৷
তিনি গীতশ্রী৷ তিনি বঙ্গবিভূষণ৷ তিনি বাংলা গানের আধুনিক ‘স্রষ্টা’৷ তাঁর গলাতেই বাঙালি চিনেছিল বাঙালির নায়ককে৷ যেভাবে ২৪ জুলাই বাঙালি তাঁদের প্রেমিক পুরুষটাকে হারিয়েছিল ঠিক তেমন করেই যেন ১৪ ফেব্রুয়ারির দিন দুয়েকের মধ্যে মহাশূন্যে বিলীন হয়ে গেলেন বাঙালির সুরের প্রেমিকা৷
সন্ধ্যা নামছে৷ সন্ধ্যা এগিয়ে চলেছেন৷ কেওড়াতলা সেজে উঠেছে ফুল মালায়৷ গান স্যালুটের জন্য তৈরি পুলিস কর্মীরা৷ ফুলে ঢাকা দেহটা ঢুকল৷ নামানো হল৷ শ্রদ্ধা জানালো পুলিসের বন্দুক গুলো৷ শব্দ যেন বুঝিয়ে দিল আধুনিক বাংলা এখনও তাঁকেই চায়৷ ফেব্রুয়ারি মাসের এই অল্প শীতের আমেজকে যেন আরেকটু কঠিন করল সন্ধ্যার এই সন্ধ্যাযাত্রা৷ দেহটা আস্তে আস্তে এগিয়ে চলল আগুনের দিকে৷ পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে গেলেন গীতশ্রী৷
আরও পড়ুন: Sandhya Mukhopadhyay Passes Away: অনেক আগেই সন্ধ্যাদির ভারতরত্ন পাওয়া উচিত ছিল, বললেন মমতা
রাজ্য সরকারের তরফে সর্বোচ্চ সম্মানে শেষকৃত্য হল৷ পুরো বিষয়টি তদারক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ উত্তরবঙ্গ সফর কাঁটছাঁট করে ফিরে এসেছেন৷ যাঁর সঙ্গে গীতশ্রীর পারিবারিক সম্পর্ক৷ ছোট থেকেই তো সন্ধ্যার গান শুনে বড় হওয়া৷ বারবার একান্তে তাই বলেছেন তৃণমূল নেত্রী৷ গতকাল যখন খবরটা শুনেছিলেন প্রতিক্রিয়া জানাতে গলাটা ভারী হয়ে গিয়েছিল৷ মৃত্যুর সপ্তাহ খানেক আগে কেন্দ্রীয় সরকারের এক সিদ্ধান্ত বেদনা দিয়েছিল শিল্পীকে৷ যেভাবে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মতো মানুষকে পদ্ম পুরষ্কারের তৃতীয় ধাপ পদ্মশ্রী দিয়ে অপমান করেছিল তা মানতে পারেনি বাঙালি৷ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল৷ পদ্মশ্রী প্রত্যাখ্যান করতে দেরি করেননি সন্ধ্যা৷ কেওড়াতলা শ্মশানে যখন দেহটা পুড়ছে তখন প্রশ্নটা বারবার ফিরে আসছে৷ ২৫ জানুয়ারির সেই ঘোষণা কি দরকার ছিল? যে মানুষটার ভারতরত্ন পাওয়ার দরকার ছিল, তাঁকে পদ্মশ্রী দিয়ে অপমান কেন? উত্তর নেই৷ ৯০ বছরে মানুষটা কতটা বেদনা নিয়ে গেলেন এরও উত্তর নেই৷
আরও পড়ুন: বাপ্পিদাকে শ্রদ্ধাঞ্জলী বলিতারকাদের
উত্তর আছে একটাই৷ সন্ধ্যা নেই৷ সন্ধ্যা নামল শ্মশানে৷ চুল্লিটা আস্তে আস্তে থেমে এল৷ দেহটা ছাই হয়ে গেল৷ পাখিটা গাওয়া বন্ধ করল৷ তিরটা যে তাঁর বুকেই বিঁধেছে৷ হাজারো তারার মাঝে গানের ইন্দ্রধনুর মধ্যে বিলীন হয়ে গেলেন সন্ধ্যা৷