Placeholder canvas
কলকাতা রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ |
K:T:V Clock
চতুর্থ স্তম্ভ: বিগ বস
সম্পাদক Published By:  • | Edited By:
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৯ জুলাই, ২০২১, ১১:২৩:৪০ পিএম
  • / ৮৬৭ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • • | Edited By:

ধরুন সাত সকালে, আপনার কাছে নাম না জানা কারোর একটা হোয়াটস অ্যাপ মেসেজ এল, সুন্দর একটা ছবি, একটা পাহাড়, নদী বা অরণ্য, কিম্বা একটা শিশুর হাসি নয় তো মা দুর্গা, কালী বা গণেশ। আপনি খুলে দেখলেন, অন্য এক বন্ধুকে ফরোয়ার্ড করলেন, বা ডিলিট করে দিলেন, জানলেনও না যে আপনার মোবাইলে নজরদারি শুরু হয়ে গেলো, ওই ছবির সঙ্গেই সেই ব্যবস্থা আপনার ফোনে ঢুকে পড়েছে, এবার সেই লোকটি যিনি আপনার মোবাইলে এই সফটওয়ারটি পাঠালেন, তিনি আপনার মেসেজ দেখতে পাবেন, সে আপনি টেলিগ্রামেই থাকুন আর হোয়াটস অ্যাপে থাকুন, আপনি আই ফোনেই থাকুন, অ্যান্ড্রয়েডেই থাকুন, হোয়াটস অ্যাপ কল করুন বা ফেস্টাইম অডিওতেই কল করুন, ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টুইটার, মেল, ফটো গ্যালারি, নোট, রিমাইন্ডার, সব, সব তার হাতে। তিনি যে কেবল দেখতে পাবেন তাও নয়, তিনি আপনার ফোন ব্যবহার করে মেল পাঠাতে পারবেন, আপনার ছবি হোয়াটস অ্যাপ করে অন্য কাউকে পাঠাতে পারবেন, মোদ্দা কথা হল আপনার স্মার্ট ফোনটির মালিকানা এখন থেকে শুধু আপনারই নয়, তারও।

এরকম বহু সফটওয়ার আছে, কিন্তু তার মধ্যে অন্যতম এবং সবচেয়ে কার্যকরি সফটওয়ারটার নাম হল, পেগাসাস। ইজরায়েলের নিভ কারমি, শ্যালেভ হুলিও, ওমরি ল্যাভি, এই তিনজনে মিলে একটা কোম্পানি খোলে, এনএসও গ্রুপ, ২০১০ এ। এর কিছুদিন পরে তারা এই পেগাসাস প্রজেক্ট শুরু করে, এমনিতে তো এটা ব্যক্তিগত কোম্পানি হিসেবেই পরিচিত, কিন্তু ইজরায়েলের গোয়েন্দা বাহিনী মোসাদের প্রত্যক্ষ সহায়তা আছে বলেই অনেকে মনে করে, তাদের তৈরি করা সফটওয়ার তারা বিক্রি শুরু করে, এবং শুরুতেই সৌদি আরব, আমেরিকায় বিরাট বাজার পেয়েও যায়, রাজনৈতিক নেতা, মানবাধিকার কর্মী, সমাজকর্মী আর সাংবাদিকদের ওপর তখন থেকেই নজরদারি শুরু হয়, এই পেগাসাওকে আটকানোর জন্যও বহু সফটওয়ার তৈরি করা হয়, কিন্তু পেগাসাস নিজেকে প্রতিদিন আরও আধুনিক করে তুলেছে, এখন, ঠিক এই মুহূর্তে পেগাসাস এক এমন নজরদারি সফটওয়ার, যাকে প্রতিরোধ করার কোনও ব্যবস্থাই নেই।

কারা কিনছে? ওই এনএসও গ্রুপ পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে, তাদের পছন্দ মত রাষ্ট্র বা সরকার ছাড়া তারা কাউকে ব্যক্তিগতভাবে, ওই সফটওয়ার বিক্রি করেনি, তার মানে ওদের ক্লায়েন্ট দেশের সরকার, রাষ্ট্রপ্রধান, আপনি চাইলেই কিনতে পারবেন না। ২০১৯ এ ভারতে পেগাসাস ব্যবহারের ওভিযোগ ওঠে, তখন আইটি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানিয়েছিলেন, তাঁরা যত্রতত্র ফোনে নজরদারির প্রথার বিরুদ্ধে, নজরদারি রাখা হচ্ছে এ অভিযোগ সত্যি নয়। কিন্তু তিনি একবারও পরিস্কার করে বলেননি যে, ভারত সরকার এনএসও’র কাছ থেকে পেগাসাস কেনেননি, অথচ কাকতলীয়ভাবে তাঁকে মন্ত্রীসভা থেকে সরানোর কয়েকদিনের মধ্যেই জানা যাচ্ছে, ভারতে পেগাসাস সফটওয়ারের মাধ্যমে অন্তত ৩০০ জনের মোবাইল ফোনের ওপর নজরদারি রাখা হয়েছে। তার মধ্যে সাংবাদিকরা আছেন, সমাজকর্মী, মানবাধিকার কর্মীরা আছেন, বিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতারা আছেন, এমনকি নিজেদের দলের নেতা মন্ত্রীদের ওপরেও নজরদারি রেখেছে মোদি সরকার। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের ওপরেও চলছে কড়া নজরদারি, কেন?

আসলে স্বৈরাচারের কতগুলো নির্দিষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আছে, সে দুনিয়ার যে কোনও কোণেই থাকুক, সে কমিউনিস্ট পার্টির ঝান্ডা নিয়ে চীনেই থাকুক, উত্তর কোরিয়াতেই থাকুক, উদার গণতন্ত্রের দেশ আমেরিকাতেই থাকুক, জায়নিস্ট ইজরায়েলেই থাকুক বা ইসলামিক রাষ্ট্রের ক্ষমতার শীর্ষে বসে থাকা রাষ্ট্রপ্রধান, প্রত্যেকের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য থাকে। তার মধ্যে প্রথমটাই হল মানবাধিকারকে অগ্রাহ্য করা। মানুষের কথা বলার অধিকার, চিন্তার অধিকার, নিজের মত প্রকাশের অধিকার এই সব স্বৈরাচারী নেতাদের কাছে, দলের কাছে, রাষ্ট্রব্যবস্থার কাছে এক বিড়ম্বনা। তারা বিশ্বাস করে, তারাই দেশের মানুষদের ভাল করার জন্য যা করার তাই করছে, অন্য কারোর সে নিয়ে একটা কথাও বলার অধিকার নেই। আরে বাবা আমিই তো খেতে দেব, আমিই তো খেতে দিচ্ছি, অত কথা বলার কী আছে? এরকম একটা ভাব। উনি জানেন কিসে আপনার ভাল হবে, সে আপনি যদি নিজে তার সঙ্গে একমত নাও হন, তিনি মনে করেন, তিনি যা চাইছেন সেটাই ভাল, সেটাই ঠিক।

স্বৈরাচারের লক্ষণ হল, বিরোধীদের, বিরুদ্ধ মতের মানুষজনকে নজরে রাখা। সেই কবে ১৯৪৬ সালে, নজরদারি চলছিল গান্ধীজির ওপর, নজরদারি চালাচ্ছিল কারা? নাথুরাম গডসে আর তার সঙ্গীরা, কেন? গান্ধীজিকি তাদের মারার কথা বলেছিলেন? গান্ধীজি কি তাদের ঘর থেকে উৎখাত করার কথা বলেছিলেন? গান্ধীজি তো তাদের চিনতেনও না, কিন্তু ওই যে বিরুদ্ধ মত, সাভারকারদের মত হিন্দুত্ববাদী নেতারা বুঝিয়েছিল, গান্ধী হিন্দু বিরোধী। তাঁকে না সরালে ভারতবর্ষ চলে যাবে মুসলমানদের হাতে। গডসে আর তার সঙ্গীরা দিনের পর দিন নজরদারি চালিয়েছে, সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নজরদারি, ক’টায় আসেন তিনি, কত কাছে যাওয়া যায়, সমস্ত তথ্য জড় হবার পরেই সেই ৩০ জানুয়ারী। এটাই মৌলবাদ, এটাই স্বৈরাচারের লক্ষণ।

আজ সেই গান্ধী হত্যাকারীদের দল ক্ষমতায়, তারা দেশের প্রত্যেক প্রতিবাদী মানুষের ওপরে নজরদারি চালাচ্ছে। কোথায় মানুষ তাদের বিরুদ্ধে জড় হচ্ছে, কোথায় উঠছে বিদ্রোহের ধোঁয়া, কারা সেই বিদ্রোহের কথা বলছে, কারা প্রতিবাদী, সব জানতে হবে সরকারকে, মোদি – শাহকে। আর তাই ইজরায়েলের এনএসও থেকে পেগাসাস, একটা সফটওয়ারের দাম ৮.৫ কোটি টাকা, এবং তা দিয়ে মাত্র ১০ জনের ওপর নজরদারি সম্ভব। ঠিক এই মুহূর্তে জানা যাচ্ছে অন্তত ৩০০ জনের ওপর নজরদারি চলছিল। মানে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা সরকার খরচ করেছে, এই নজরদারি চালানোর জন্য। কেন সরকার বলছি কেন? প্রমাণ কোথায়? প্রমাণ হল এনএসও গ্রুপের ওয়েবসাইট, তাদের দেওয়া তথ্য, তারা পরিস্কার জানিয়েছে, তাদের পছন্দের সরকারকেই শুধু তারা এই সফটওয়ার বিক্রি করেছে, কোনও ব্যক্তিকে এই সফটওয়ার বিক্রি করেনি, তাহলে ভারতে নজরদারিটা চালালো কে? সরকার, মোদি সরকার।

এমনিতে তো ধরুন লোকসভায় ৩০৩ জন এমপি কেবল বিজেপিরই, তার ওপর শরিক দল আছে, বড়বড় বিধানসভা তাদের দখলে, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, অসম তাদের দখলে, এক এক করে প্রায় সমস্ত মেইন স্ট্রিম মিডিয়া সরকারের সমালোচনা বন্ধ করেছে। বিরোধী দল এখনও পর্যন্ত ছত্রভঙ্গ, অথচ মোদি সরকার ভীত, সন্ত্রস্ত। তারা এক জেএনইউর ছাত্র নেতা উমর খালিদ, এক সাংবাদিক সিদ্ধার্থ বরদারাজন, ছিন্ন ভিন্ন কংগ্রেসের প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর ওপরে নজরদারি চালাচ্ছে, তারা টের পাবার চেষ্টা করছে, মানুষ কতটা ক্ষুব্ধ, কারা তাদের ক্ষোভ, তাদের প্রতিবাদকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে, তাই পেগাসাস।
সে রাজার চোখে ঘুম নেই, সিংহাসন দখলে এসেছে, দখলে এসেছে রাজ কোষাগার, ছলে বলে কৌশলে দেশের পাত্র মিত্র অমাত্য তো বটেই, এমন কি সদা নিন্দুকের দলও এখন জো হুজুরিতে ব্যস্ত, রাজা নিত্য নতুন পোষাক পরেন, নিত্য নতুন সাজ, রাজার রথ চলে, পেছনে ঢাল তরোয়াল, সান্ত্রী, সৈনিক। রাজার পাশে পাশে ঘোরে আমোদগেঁড়ে ভাড়ের দল, রাজা হ্যাঁ বলিলে তাহারাও হ্যাঁ বলে, রাজা ক্রুদ্ধ হইলে তাহারা গোলি মারিবার নিদান দেন, রাজার জেলখানায় রাজ্যের তাবত শিক্ষিত, শিরদাঁড়া শক্ত মানুষজন। তবুও রাজার ঘুম নাই, নিদ্রা আসিলেই, কাহারা যেন হাঁক পাড়ে, কাহারা যেন ষড়যন্ত্র করিতেছে, কাহারা যেন তাঁর সাধের গদি কাড়িয়া নিতে চায়। রাজার সব আছে কেবল স্বস্তি নাই, রাজার চারিপাশের প্রকাণ্ড পাহারা ভেদ করিয়া একটি পাখি ঢুকিয়া পড়ে, সে কেবল গান গায়, হাসে। রাজা সেই পাখিকে ওই ষড়যন্ত্রকারীদের একজন বলিয়াই গণ্য করে, তাহাকে হত্যা করিবার হুকুম জারি করে। পাখিটিকে হত্যা করা হয়। রাজা নিশ্চিন্ত হয়ে শুতে যান। ভোরবেলায় আবার পাখি ডাকে, অজস্র পাখি, আকাশ জুড়ে পাখি ডাকে, ফুল ফোটে, গানে গানে ভরে যায় আকাশ, সে পাখির ডাকে লক্ষ লক্ষ প্রজা নগরের রাজপথে, সে পাখির ডাকে সৈন্য সামন্ত, বর্শা, তরোয়াল ফেলে নৃত্য করে। রাজা বোঝে তার রাজত্বের দিন শেষ, রাজা রাজপোশাক খুলে মিলিয়ে যায় ওই ভিড়ে, রাজা গিয়ে বসে নদীর ধারে, রাজা চলে যায় জঙ্গলে।
এক আরবী রূপকথা, যেখানে রাজার অন্তত এটুকু বুদ্ধি ছিল যে মানুষ না চাইলে সিংহাসন ছাড়তে হয়, বলাই বাহুল্য আমাদের মোদি – শাহের সে বুদ্ধিও নেই, তাঁরা প্রতিবাদী স্বর থামাতে নতুন নজরদারি শুরু করেছেন, এটাও জানেন না আর ক’দিনের মধ্যে কোটি কোটি মানুষের ওপর নজরদারি চালাতে হবে, তত নজরদার তাঁদের নেই। সেই পাহারা ভেঙে বিদ্রোহের গান আজ চারিদিকে, এই বাঁধভাঙা বিদ্রোহ থামানো পেগাসসাসের কম্ম নয়।

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১ ১২ ১৩ ১৪ ১৫ ১৬
১৭ ১৮ ১৯ ২০ ২১ ২২ ২৩
২৪ ২৫ ২৬ ২৭ ২৮ ২৯ ৩০
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

উপনির্বাচনে ছয়ে ছক্কা তৃণমূলের, বিরোধীরা দিশাহারা
শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
বড়পর্দায় সুপার হিট! তবুও কেন ঘন ঘন পর্দায় দেখা মেলে না শ্রদ্ধার?
শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
বিহারে ভরাডুবি! ভোটের ময়দানে খাতা খুলতে ব্যর্থ পিকে’র প্রার্থীরা
শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
গ্রেফতারি পরোয়ানার বিরুদ্ধে মুখ খুললেন নেতানিয়াহু
শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
রাহুলকে ছাপিয়ে ওয়েনাডে জয়ী প্রিয়ঙ্কা
শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
দল-বদল করেও ভোটে হেরে গেলেন বাবা সিদ্দিকি’র পুত্র জিশান
শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
বলিউডে জুটিদের ঘন ঘন বিবাহ বিচ্ছেদের নেপথ্যে কারণ কী?
শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
‘এবার সংসদ ওয়েনাড়ের কণ্ঠস্বর শুনবে, উচ্ছ্বসিত প্রিয়াঙ্কা
শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
নৈহাটিতে সবুজ ঝড়, ৪৯১৯৩ ভোটে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী
শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
বাংলায় ৬ এ ৬ তৃণমূলের, মা-মাটি-মানুষকে ধন্যবাদ মমতার
শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
কে হবেন মুখ্যমন্ত্রী? কী বললেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ?
শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
যশস্বী-রাহুল জুটিতে তছনছ একের পর এক রেকর্ড
শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
ফলোয়ার্স ৫.৬ মিলিয়ন, ভোট মাত্র ১৫৫ টি! কে সেই অভাগা প্রার্থী?
শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
‘আমি পাহারাদার, জমিদার নই’, ভোটের রেজাল্টের পরেই বিজেপিকে কটাক্ষ অভিষেকের
শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
মাইয়া যোজনার ম্যাজিকেই ঝাড়খণ্ডের ক্ষমতায় হেমন্ত
শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.   Privacy Policy
Developed By KolkataTV Team