Are we alone? আমরা কি একা? মহাশূন্যের অগণন অনন্ত ছড়িয়ে পড়া গ্যালাক্সিগুলির মধ্যে কোথাও কি মানুষের মত কোনও রক্তমাংসের প্রাণ নেই? ছায়াপথের এক কোণায় ঘুরে চলা সৌরলোকের তিন নম্বর নীলরঙের গ্রহটিতেই কি একমাত্র প্রাণের অস্তিত্ব? পৃথিবীর মানুষের কাছে এই প্রশ্ন নতুন নয়। আর তাই বুদ্ধিমান মানুষ বারবার নিজেদের অস্তিত্বের কথা মহাবিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। এখনও কোনও সাড়া মেলেনি। তাতে কি এবার আবার নতুন করে বার্তা পাঠাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা? নতুন সংকেত তৈরি। কী রয়েছে সেই বার্তায়?
সত্যজিৎ রায়ের গল্পে বঙ্কুবাবুর বন্ধুর নাম ছিল অ্যাং। তিনি ছিলেন ক্রেনিয়াস গ্রহের বাসিন্দা। মানুষের চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমান। অ্যাংয়ের যাওয়ার কথা ছিল প্লুটো গ্রহে। ইউএফও চেপে ভুল করে একদিন নেমে পড়েন পৃথিবীতে। কাঁকুড়গাছির বাঁশবাগানে বঙ্কুবাবুর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। অ্যাং চোদ্দ হাজার ভাষায় কথা বলতে পারেন। বয়স আটশ তেত্রিশ। অ্যাং শক্তিশালী এক যন্ত্রের ভিতর দিয়ে বঙ্কুবাবুকে এক মুহূর্তে উত্তর মেরু, আবার পরের মুহূর্তে ব্রাজিলের জঙ্গলে ঘুরিয়ে নিয়ে আসেন। ভীতু, নিরীহ টাইপ বঙ্কুবাবুর চারিত্রিক গঠন বদলে দিয়ে ফিরে যান।
বঙ্কুবাবুর বন্ধু অ্যাংয়ের যে ছবি সত্যজিৎ এঁকেছিলেন তার সঙ্গে প্রায় হবহু মিল স্টিফেন স্পিলবার্গের এক্সট্রাটেরেসট্রিয়াল বা ইটি-র। অদ্ভুত দর্শন এই প্রাণীটিও মানুষের চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমান। অনেক বেশি শক্তিশালী। মহাবিশ্বের কোথাও, কোনও গ্রহে, কল্পনার এই প্রাণীর মত রক্তমাংসের অস্তিত্ব কি নেই? সংকেত তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। ছায়াপথের নির্দিষ্ট এলাকায় সেই সংকেত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এটাই প্রথম বার নয়। এর আগেও পৃথিবীর সংকেত মহাশূন্যে পাঠানো হয়েছে। ১৯৭৪ সালে মহাকাশচারীরা রেডিয়ো টেলিস্কোপের মাধ্যমে মহাশূন্যে বার্তা পাঠায়। গ্লোবিউলার ক্লাস্টার এম থার্টিনে (Globular cluster M13) পাঠানো হয়েছিল সেই বার্তা। প্রশ্ন হল, এই গ্লোবিউলার ক্লাস্টার বিষয়টি কী? আমাদের ছায়াপথের এক একটা অংশের নক্ষত্রঝাঁককে গ্লোবিউলার ক্লাস্টার বলা হয়ে থাকে। এম থার্টিন ক্লাস্টার পৃথিবী থেকে ২৫ হাজার আলোকবর্ষে দূরে। কী বার্তা পাঠানো হয়েছিল তখন? বাইনারি থিয়োরিতে লেখা ০ থেকে ১০ সংখ্যা, এবং সূর্যকে কেন্দ্রে রেখে আমাদের সৌরজগতের চেহারাটি ঠিক কেমন তা পাঠানো হয়েছিল সেদিনের রেডিয়ো বার্তায়।
সময়টা এখন আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার। বহুদূরের নক্ষত্রলোকে প্রাণের সন্ধান করতে তাই কোন বার্তা পাঠাবে মানুষ? কীভাবে পাঠাবে? কোনও বুদ্ধিমান প্রাণী যদি সেই সংকেতের উত্তর দিতে চায় তো কোন ভাষায়, কোন উপায়ে জানাবে? ছায়াপথের কোন অংশে পাঠানো হবে মানুষের বার্তা? মহাকাশ বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন আমাদের ছায়াপথের নির্দিষ্ট একটি অংশে প্রাণ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে জায়গাটি ৬ হাজার ৫০০ আলোকবর্ষ থেকে ১৯ হাজার ৫০০ আলোকবর্ষ দূরত্বের মাঝামাঝি। বহুদূরের সেই সময়ে মানুষ তার রেডিয়ো বার্তা পৌঁছে দেবে অতিকায় দুই টেলিস্কোপের মাধ্যমে। সংকেত লেখার কাজ শেষ। এবার পাঠানোর অপেক্ষা। সাড়া দেবে কেউ?
(চলবে)