ময়নাগুড়ি: উত্তরবঙ্গের ময়নাগুড়ির কাছে বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস কী করে দুর্ঘটনার কবলে পড়ল, তার সদুত্তর চালকের কাছেও নেই। ১৯৯২ থেকে লোকোমোটিভ ইঞ্জিন চালাচ্ছেন। তিরিশ বছরের ওপর অভিজ্ঞতা। আগে কখনও এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হননি অসমগামী বিকানের এক্সপ্রেসের চালক প্রদীপ কুমার।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানালেন, স্টার্টার থেকে শুরু করে সব সিগন্যালই সবুজ ছিল। ময়নাগুড়ির কাছে স্টেশনমাস্টারের সিগন্যাল অতিক্রম করে, অ্যাডভান্স সিগন্যালে পৌঁছলে, হঠাত্ই জোরালো ঝাঁকুনি অনুভব করেন। কিছু একটা ঘটেছে আশঙ্কা করেই ইমার্জেন্সি ব্রেক টানেন। তার পরেই দুলে ওঠে ইঞ্জিন। ট্রেন থামিয়ে ইঞ্জিনের বাইরে বেরিয়ে দেখতে পান, একাধিক বগি লাইনচ্যুত। কয়েক’টি বগিও আবার পালটি খেয়েছে।
ঠিক কী করে এমন একটা ঘটনা ঘটল? ট্র্যাকে কি কোনও ত্রুটি ছিল? চালক প্রদীপ কুমার কিন্তু সেই সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে পারছেন না। তাঁর ধারণা ছিল, ট্র্যাকে গন্ডগোলের কারণেই জোরে ঝাঁকুনি হয়। যদিও রেলের আধিকারিকদের প্রাথমিক রিপোর্টে স্পষ্ট করা হয়েছে, রেল ট্র্যাকে কোনও সমস্যা ছিল না।
আরও পড়ুন: ময়নাগুড়ি ট্রেন দুর্ঘটনার যে ব্যাখ্যা দিলেন রেলের নিরাপত্তা আধিকারিকরা
রেল সেফটি বোর্ড কমিশনের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্টের পরই জানা যাবে, ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনা। কিছু দিনের মধ্যেই রেলমন্ত্রকে রিপোর্ট দেবে সেফটি কমিশন।তার আগে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে রেলের পদস্থ আধিকারিকরা দাবি করেন, লোকমোটিভ ইঞ্জিনের একটি ট্র্যাকশন মোটর খুলেই বিপত্তি।
চালক প্রদীপ কুমারকে এ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, ঠিক কী ঘটেছে বলতে পারব না। তদন্তকারীরাই তা বলতে পারবেন। তাঁর ধারণা, জোরে ঝাঁকুনি হওয়ার সময়েই একটি ট্র্যাকশন মোটর খুলে পড়ে।
জানা গিয়েছে, লোকমোটিভ ইঞ্জিনে চারটি ট্র্যাকশন মোটর রয়েছে। এর একটি কোনও কারণে খুলে যায়। সেই কারণেই ট্রেনটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। একমাত্র সেফটি নিরাপত্তা কমিশনারই সঠিক কারণ ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
দুর্ঘটনার সময় ট্রেনের গতি কত ছিল, তা নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় চালককে। প্রদীপ কুমারের কথা অনুযায়ী, সব সিগন্যাল সবুজ থাকার কারণে ময়নাগুড়ির কাছে ৯৫ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিবেগে ট্রেন যাচ্ছিল।
রেলের রুলবুক অনুযায়ী, পুরনো আইসিএফ কোচে গতিসীমা ঘণ্টায় ৬৬ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা উচিত। দুর্ঘটনার সময় বিকানের এক্সপ্রেসের গতি ৬৬ কিলোমিটারের বেশি ছিল কি না, ইঞ্জিনের ডেটা রেকর্ডার থেকেই তা জানা যাবে। তবে, চালকের দাবিমতো ট্রেন যদি ৯৫ কিলোমিটার বেগে থাকে তা হলে, চালকের দিক থেকেও কিন্তু গাফিলতি থাকবে।
এ দিকে, মৃতদের পরিবারের তরফে বিকানের এক্সপ্রেসের চালকের বিরুদ্ধে ময়নাগুড়ি জিআরপি থানায় একটি এফআইআর দায়ের হয়েছে। ময়নাগুড়ির এই দুর্ঘটনায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪২ জন।
আরও পড়ুন: পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে রেলওয়ে সেফটি কমিশনারই কারণ জানাবেন, বললেন সঞ্জয় চন্দর